কোয়ান্টাম সংখ্যা (Quantum number)
কোয়ান্টাম সংখ্যা (Quantum number)
পরমাণুতে অবস্থিত ইলেকট্রনের কক্ষপথ বা শক্তিস্তরের আকার, আকৃতি,ত্রিমাত্রিক বিন্যাস এবং নিজ অক্ষের চতুর্দিকে আবর্তনের দিক প্রকাশক সংখ্যাসমূহকে কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে। কোয়ান্টাম সংখ্যা দ্বারা কোনো পরমাণুর ইলেকট্রন এর সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
পরমাণুর কোনো একটি ইলেকট্রন কোন শক্তিস্তরে অবস্থান করছে , শক্তি স্তরটি বৃত্তাকার না উপবৃত্তাকার এবং ইলেকট্রনটি তার নিজ অক্ষের চতুর্দিকে ঘড়ির কাটার দিকে না বিপরীত দিকে আবর্তন করছে, এসব বিষয় পরমাণুর কোয়ান্টাম সংখ্যা দ্বারা জানা যায়।
কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রকারভেদ
কোন পরমাণুর সঠিক অবস্থান নির্ণয় করার জন্য সাধারণত চার ধরনের কোয়ান্টাম সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। যথা-
১। প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা
২। সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা
৩। চৌম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা
৪। স্পিন বা ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা
প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা ( Principle Quantum Number)
যে কোয়ান্টাম সংখ্যার সাহায্যে কোন পরমাণুতে অবস্থিত ইলেকট্রনের শক্তিস্তরের আকার নির্ণয় করা যায় তাকে প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে। একে n দ্বারা প্রকাশ করা হয়, যেখানে n হলো একটি ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা(n=1,2,3,4…)।
বোর পরমাণু মতবাদ অনুসারে,
n=1 হলে তা ১ম শক্তিস্তর বা K শেল নির্দেশ করে,
n=2 হলে তা ২য় শক্তিস্তর বা L শেল নির্দেশ করে,
n=3 হলে তা ৩য় শক্তিস্তর বা M শেল নির্দেশ করে,
n=4 হলে তা ৪র্থ শক্তিস্তর বা N শেল নির্দেশ করে,
n=5 হলে তা ৫ম শক্তিস্তর বা O শেল নির্দেশ করে।
প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার n মান বৃদ্ধির সাথে সাথে নিউক্লিয়াস হতে প্রধান শক্তিস্তরের দূরত্ব এবং শক্তিস্তরের আকার বৃদ্ধি পায়। প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n এর মান দ্বারা কোন শক্তিস্তরের মোট ধারণকৃত ইলেকট্রন সংখ্যা নির্ণয় করা যায়। পরমাণুর যে কোনো প্রধান শক্তিস্তর সর্বোচ্চ 2n² ইলেকট্রন ধারণ করতে পারে।
সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা (Azimuthal Quantum Number)
যে কোয়ান্টাম সংখ্যার সাহায্যে পরমাণুর শক্তিস্তরের আকৃতি নির্ণয় করা যায় তাকে সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে।একে ℓ (ছোট হাতের এল) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা ℓ এর মান প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n এর উপর নির্ভরশীল। ℓ এর মান 0 শূন্য থেকে শুরু হয়ে n-1 পর্যন্ত হতে পারে অর্থাৎ ℓ= 0,1,2,3,…n-1।
ℓ = 0 হলে s অরবিটাল, ℓ = 1 হলে p অরবিটাল, ℓ = 2 হলে d অরবিটাল এবং ℓ = 3 হলে f অরবিটাল বা উপশক্তিস্তর বোঝায়।
বিজ্ঞানী সমারফিল্ড সর্বপ্রথম সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা দেন।পরমাণুতে ইলেকট্রন আবর্তনের জন্য পরমাণুর প্রতিটি প্রধান শক্তি স্তর নির্দিষ্ট সংখ্যক উপশক্তিস্তরে বিভক্ত থাকে। একটি ইলেকট্রন কোন একটি প্রধান শক্তিস্তরের যে উপশক্তিস্তরে রয়েছে তা প্রকাশ করার জন্য সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা ব্যবহৃত হয়। কোন উপশক্তিস্তরে ধারণকৃত ইলেকট্রন সংখ্যা সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা দ্বারা নির্ণয় করা যায়।
কোন উপশক্তিস্তরে ধারণকৃত মোট ইলেকট্রন সংখ্যা = 2( 2 ℓ+1 ) টি
ℓ= 0 হলে , s উপশক্তিস্তরে ধারণকৃত ইলেকট্রন সংখ্যা = 2 টি
ℓ= 1 হলে , p উপশক্তিস্তরে ধারণকৃত ইলেকট্রন সংখ্যা = 6 টি অনুরুপভাবে, d ও f উপশক্তিস্তরে ধারণকৃত ইলেকট্রন সংখ্যা যথাক্রমে 10 টি ও 14 টি ।
প্রধান শক্তিস্তর, n = 1 হলে, ℓ = 0 অর্থাৎ ১ম শক্তিস্তরে উপশক্তিস্তর ১টি, 1s
প্রধান শক্তিস্তর, n = 2 হলে, ℓ = 0, 1. অর্থাৎ ২য় শক্তিস্তরে উপশক্তিস্তর ২টি, 2s 2p
প্রধান শক্তিস্তর, n = 3 হলে, ℓ = 0, 1, 2 অর্থাৎ ৩য় শক্তিস্তরে উপশক্তিস্তর ৩টি, 3s 3p 3d
প্রধান শক্তিস্তর, n = 4 হলে, ℓ = 0, 1, 2, 3 অর্থাৎ ৪র্থ শক্তিস্তরে উপশক্তিস্তর ৪টি, 4s 4p 4d 4f
অতএব n এর মান যত উপশক্তিস্তরের সংখ্যাও তত।
সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যাকে ইংরেজিতে সাধারণত Angular Momentum Quantum Number বলা হয়ে থাকে। যা মূলত পরমাণুর অরবিটালের আকৃতি সম্পর্কে ধারনা প্রদান করে। এছাড়াও সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা – অ্যাজিমুথ্যাল কোয়ান্টাম সংখ্যা (Azimuthal Quantum Number),সেকেন্ডারি কোয়ান্টাম সংখ্যা (Secondary Quantum Number), সাবসিডিয়ারী কোয়ান্টাম সংখ্যা (Subsidiary Quantum Number) হিসেবেও পরিচিত।
উপশক্তিস্তরের নামকরণের উৎস : পর্যায় সারণির গ্রুপ-I এর ক্ষার ধাতুসমূহের পারমাণবিক বর্ণালিতে ৪ শ্রেণির রেখা বর্ণালি দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা প্রাথমিক অবস্থায় তাদেরকে তীক্ষ্ণ বা sharp (s), প্রধান বা principal (p), পরিব্যাপ্ত বা diffused (d) ও মৌলিক বা fundamental (f) নামকরণ করে যথাক্রমে s, p, d, f প্রতীক দ্বারা এদের জন্য ℓ এর মান 0, 1, 2, 3 নির্দিষ্ট করেন। বিজ্ঞানী সমারফিল্ড পরমাণুতে ইলেকট্রনসমূহের জন্য বাের প্রস্তাবিত প্রধান শক্তিস্তরের মধ্যে বৃত্তাকার ও উপবৃত্তাকার প্রভৃতির উপশক্তিস্তরের ধারণা প্রস্তাব করেন।
চৌম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা (Magnetic Quantum Number)
যে কোয়ান্টাম সংখ্যার সাহায্যে পরমাণুতে আবর্তনকারী ইলেকট্রনের কক্ষপথের ত্রিমাত্রিক দিক বিন্যাস প্রকরণ সমূহ প্রকাশ করা হয়, তাকে ম্যাগনেটিক কোয়ান্টাম সংখ্যা বা চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে।
পরমাণুর কেন্দ্রে ধনাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াস ও কক্ষপথে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন থাকার কারণে পরমাণুর অভ্যন্তরে একটি বিদ্যুৎ ক্ষেত্র এবং এর প্রভাবে চুম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এ চুম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে ইলেকট্রনের বিভিন্ন অরবিটালের ত্রিমাত্রিক দিক প্রকরণ বা অরিয়েন্টেশন (Orientation) ঘটে। বিজ্ঞানী জিম্যান চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যার ধারণা দেন।
একে m দ্বারা প্রকাশ করা হয়। m এর মান ℓ এর মানের ওপর নির্ভরশীল এবং তা -ℓ থেকে 0 সহ +ℓ পর্যন্ত হয়ে থাকে। সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা ℓ এর যে কোনাে মানের জন্য m এর মান (2ℓ +1) সংখ্যক হয়। চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা m এর মােট মান দ্বারা পরমাণুর উপশক্তিস্তরে মােট অরবিটাল সংখ্যা বােঝায়।
যেমন- ℓ = 1 হলে m= -1,0,1 হয় এবং এর অরবিটাল হবে ৩ টি। মূলত এই -1,0,1 ত্রিমাতৃক স্থানে p উপশক্তিস্তরের সম্ভাব্য স্থান নির্দেশ করে। এই ক্ষেত্রে -1,0,1 মান দ্বারা x,y,z অক্ষে পরমাণুর অরবিটালের সম্ভাব্য স্থান Px, Py এবং Pz-কে নির্দেশ করছে।
তেমনি, s উপস্তরের অরবিটাল সংখ্যা, m= 2ℓ +1 = (2×0)+1 = 1 টি
p উপস্তরের অরবিটাল সংখ্যা, m= 2ℓ +1 = (2×1)+1 = 3 টি
d উপস্তরের অরবিটাল সংখ্যা, m= 2ℓ +1 = (2×2)+1 = 5 টি
f উপস্তরের অরবিটাল সংখ্যা, m= 2ℓ +1 = (2×3)+1 = 7 টি
কোনো পরমাণুর প্রধান শক্তিস্তর(n) এর জন্য n2 সংখ্যক অরবিটাল থাকে। আবার প্রতিটি অরবিটালে সর্বোচ্চ 2 টি করে ইলেকট্রন থাকে, ফলে ঐ প্রধান শক্তিস্তরে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা হবে 2n2 টি ।