বৃষ্টির পানি কচু পাতাকে ভিজায় না কেন ? / বৃষ্টির পানি পড়লে কচু পাতাকে ভেজে না কেন? / কচুর পাতার উপর পানি পড়লে গড়িয়ে যায় অথচ পানিতে ভিজে যায় না কেন?

শৈশবে আমরা অনেকবার বৃষ্টি আসার পর বড় বড় কচুপাতা মাথায় নিয়ে ছাতা বানিয়ে দৌড়েছি। কচুপাতা থেকে পানি গড়িয়ে পরতে দেখেছি, কিন্তু ভিজতে দেখিনি। অথবা অনেক সময় নিজেরাই নাছোড়বান্দার মতো পানির পাত্র এনে কচুগাছের মাথায় ঢেলে তাকে গোসল করানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু নাহ! ব্যাটা তো গোসল করেনা। আজীবন শুষ্ক থাকার এই রহস্যটা কী? যেখানে অন্য যেকোনও গাছের পাতায় অনায়াসে পানি বা বৃষ্টির ফোঁটা আটকে থাকে, সেখানে কচুপাতার এমন একগুঁয়ে স্বভাবের কারণ কী?
আশৈশব ভেবেছি। ধরে নিয়েছিলাম, হয়তো পলিথিন ব্যাগের মতো কচুপাতার গায়েও কোনও ন্যাচারাল পলিথিনের পাতলা আবরণ রয়েছে। কিন্তু কোনও এককালে বিজ্ঞান পড়ে জানতে পারলাম সেই প্রশ্নের সুদুত্তর। তবে সরাসরি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাতে যাওয়ার আগে আমি আমার মতো করে একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে দেই আগে, এতে আমার মনে হয় বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা আমাদের জন্য আরও সহজ হয়ে যাবে।

কচুর পাতার সারফেস এ অনেক ছোট ছোট মাইক্রোস্কোপিক আঁশ আছে,
পানির অনুর সারফেসটেনশন যা তার থেকে আঁশগুলো দূরত্ব অনেক কম

এ কারণে গ্যাপ এর মধ্যে পানি ঢুকতে পারে না এবং পাতার উপর খুব অল্প জায়গাতে পানি টাচ করে থাকে ; অল্প পরিমাণে টাচ করার কারণে সারফেস ফিকশন ও অনেক কম . তবে পানির জায়গায় কম ভিসকাস লিকুইড হলে পাতার সাথে লিকুইড লেগে থাকবে সহজ-এ গড়বে না

সাধারণত ভিস্কোসিটি বেশি হলে সারফেসটেনশন-ও বেশি হয়

প্রথমে দুটি শব্দের সংজ্ঞা আমরা জেনে নেই। সংসক্তি বল ও আসঞ্জন বল। একই পদার্থের অণুগুলোর নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান আকর্ষণ বল হচ্ছে সংসক্তি বল। আর দুটি ভিন্ন পদার্থের অণুর মধ্যকার আকর্ষণ বলকে বলা হয় আসঞ্জন বল।

পানি যখন কোনও গাছের পাতায় কিংবা অন্য পদার্থের উপরে এসে পড়ে, তখন সেটি সেই পাতায় বা সেই পদার্থে আটকে থাকতে হলে তাকে একটি শর্ত মেনে চলতে হয়। সেই শর্তটি হচ্ছে- গাছের পাতার উপরে পানি ঢাললে যদি পানি ও কচুপাতার অণুগুলোর আকর্ষণ বল পানির নিজের অণুগুলোর আকর্ষণ বল অপেক্ষা বেশী হয়, অর্থাৎ আসঞ্জন বল যদি সংসক্তি বল অপেক্ষা বেশী হয়, তাহলেই কেবল পানি সেখানে আটকে থাকবে। মানে, পানির অণুগুলোর মধ্যকার ফাঁকের চেয়ে যদি পাতার অণুর মধ্যকার ফাঁক বেশী হয়, তাহলে পানি সেই ফাঁকে হাত রেখে আটকে থাকতে পারবে। কিন্তু ঘটনা যদি হয় উলটো, মানে পানি ও কচুপাতার আসঞ্জন বল অপেক্ষা পানির অণুসমূহের মধ্যকার সংসক্তি বল অধিক শক্তিশালী হয়, তাহলে পানি আর সেখানে আটকাবে না, পিছলে পড়ে যাবে, যেভাবে আপনি মসৃণ দেয়াল থেকে পিছলে পড়ে যাবেন অনায়াসেই। এই হল মূল ব্যাপার। ধন্যবাদ সবাইকে।