আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি দিয়ে জাল টাকা ও পাসপোর্ট শনাক্তকরণ

জাল টাকা বা জাল পাসপোর্ট কি?

আমরা প্রায়ই নিউজে দেখতে পায় যে, জাল টাকা বানানোর জন্য কোন এক দুষ্টু চক্র পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। এই জাল টাকা বলতে আমরা কি বুঝি? জাল টাকা হচ্ছে যা একটি দেশের সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয় এবং যা অন্য আরেকটি টাকার ছাপ বা হুবহু কপি করা। ঠিক তেমনি, জাল পাসপোর্ট একটি দেশের সরকার কর্তৃক গৃহীত নির্দিষ্ট নিয়মের উপর নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য তৈরি করা হয়। তাহলে বলা যায় যে, টাকা বা পাসপোর্ট একটি দেশের সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। জাল টাকা যেমন সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয় তেমনি আমাদের জন্য অভিশাপ সমতুল্য। এই জাল টাকা বা জাল পাসপোর্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকার টাকা বা পাসপোর্ট তৈরির সময় কিছু কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আলট্রা-ভায়োলেট (UV ray) রশ্মি ব্যবহার করে জাল টাকা ও পাসপোর্ট সনাক্ত করা।

আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি (Ultra-Violet ray) কী?

আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি  বা UV-ray (সংক্ষিপ্ত রূপ) হচ্ছে দৃশ্যমান আলো (যা আমরা দেখতে পায়) ও রঞ্জন রশ্মির মধ্যে বিরাজমান ১০ ন্যানোমিটার থেকে ৩৮০ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এক ধরনের তড়িৎ চুম্বকীয় রশ্মি। রসায়নে বা পদার্থবিজ্ঞানে অন্য কোনো পদার্থ বা অনুর ইলেকট্রনকে উত্তেজিত করতে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়। যেমন, ফসফোর নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থকে সনাক্তকরনে UV-ray ব্যবহার করা হয়।

জাল টাকা ও জাল পাসপোর্ট শনাক্তকরণে আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির ব্যবহার

নকল টাকা বা নকল পাসপোর্ট শনাক্তের পূর্বে আমাদের বুঝতে হবে যে আসল  টাকা ও পাসপোর্টে তৈরির সময় বিশেষ ধরনের কিছু মিশানো হয় কি না? আসল টাকা বা পাসপোর্টে ফসফোর নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছাপানোর সময় মিশানো হয়। আসল টাকায় ফসফোর পদার্থটি এক ধরনের বিশেষ ফিতায় মিশানো থাকে এবং সেই ফিতাটি টাকা প্রিন্টের সময় সুন্দরভাবে যুক্ত করে দেওয়া হয়। আসল পাসপোর্টে ফসফোর পদার্থটি পাসপোর্টের কাগজের সাথে মিশানো হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য যে, ফসফোর পদার্থটি ২৩০ ন্যানোমিটার থেকে ৩৭৫ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য পর্যন্ত আলো শোষন করে এবং ৩৮০ ন্যানোমিটার থেকে ৭৮০ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য পর্যন্ত আলো বিকিরন করে থাকে। যখন কোনো পদার্থ আলো শোষন করে তখন ঐ পদার্থটিকে দেখা যায়। ফসফোরের আলো শোষনের রেঞ্জ আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে আছে, অর্থাৎ আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি ফসফোর পদার্থের উপর পড়লে ফসফোরকে দেখা যাবে। এই তত্ত্বটি জাল টাকা ও জাল পাসপোর্ট শনাক্রকরণে ব্যাবহার করা হয়। জাল টাকা ও জাল পাসপোর্ট শনাক্রকরণের মেশিনে আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি ব্যাবহার করে টাকার ফিতা ও পাসপোর্টের কাগজে ফসফোর পদার্থ আছে কি না তা দেখা হয়। জাল টাকা ও জাল পাসপোর্টে ফসফোর পদার্থটি থাকে না, যার ফলে তা সহজেই UV-ray ব্যবহার করে শনাক্ত করা যায়।

 

রাসায়নিক ব্যাখ্যাঃ আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি ফসফোর পদার্থের সর্বশেষ শক্তি স্তরের ইলেকট্রনকে উত্তেজিত করে উচ্চতর শক্তি স্তরে নিয়ে যায়। এই উত্তেজিত অবস্থা, পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসার সময় আলোর নির্দিষ্ট বর্ণ (লাল, নীল, সবুজ) বিকিরিত হয়।

ফসফোর পদার্থের বিভিন্নরূপ

আমরা প্রায় সময় টাকা ও পাসপোর্টের উপর আলো পড়লে সবুজ, লাল অথবা নীল রঙের আলোর অভিক্ষেপ দেখতে পায়। এই রং গুলি হচ্ছে ফসফোর পদার্থের এক এক রূপ। ফসফোর পদার্থের বিভিন্নরূপের মধ্যে রয়েছ জটিল ধাতব অক্সাইড ও ল্যান্থানাইড আয়ন। তিনটি রূপ নিচে লেখা হলঃ

 ১। ইটরিয়াম অক্সাইড সাথে ইউরোপিয়ান (Eu3+) আয়ন ৩ প্লাস

রাসায়নিক সংকেতঃ Y2O3 : Eu3+

বিকিরিত আলোর বর্ণঃ লাল

 ২। বেরিয়াম ম্যাগনেসিয়াম অ্যালুমিনেট সাথে ইউরোপিয়ান (Eu2+) আয়ন ২ প্লাস

রাসায়নিক সংকেতঃ BaMgAl10O7 : Eu2+

বিকিরিত আলোর বর্ণঃ নীল

৩। ম্যাগনেটোপ্লাম্বাইট সাথে টারবিয়াম (Tb3+) আয়ন ৩ প্লাস

রাসায়নিক সংকেতঃ CeMgAl­11O19 : Tb3+

বিকিরিত আলোর বর্ণঃ সবুজ

UV-ray ও ফসফোর নিয়ে বিশেষ কিছু তথ্য

ক। ফসফোর পদার্থকে সুরক্ষা কবচ বা Security Device বলা হয়ে থাকে।

খ। নকল টাকা বা কারেন্সি থেকে বাঁচার জন্য ফসফোরযুক্ত নিরাপত্তা সুতা ব্যবহার করা হয়।

গ। নকল পাসপোর্ট থেকে বাঁচার জন্য ফসফোর কালি পাসপোর্ট কাগজে ব্যবহৃত হয়।

ঘ। জাল টাকা পাসপোর্ট শনাক্তকরণে বাজারে UV-ray কলম পাওয়া যায়। কলমটি টিপলে আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি নির্গত হয়।