দর্শন

দর্শন পাঠের প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা এবং গুরুত্ব

1 min read

দর্শন পাঠের ১০টি প্রয়োজনীয়তা,  উপকারিতা এবং গুরুত্ব

মানুষ বুদ্ধি বৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী। বুদ্ধি দিয়ে সে যেমন অপরকে বিচার করে, তেমনি নিজেকেও মেপে নিতে পারে। দর্শনের উপকারিতা বা প্রয়োজনীয়তা মানুষের জীবনের সাথে জড়িত। নিম্নে দর্শন পাঠের উপকারিতা আলোচনা করা হলো।

১. ব্যক্তি জীবনে

ব্যক্তি জীবনে দর্শন আমাদের সম্পদ এনে দিতে পারে না। দর্শন বস্তু লাভের আনন্দ থেকে আমাদেরকে সবসময় দূরে রাখে। কিন্তু এটাও সত্য যে, মানুষের মন বলে একটা কিছু আছে। একথা সত্য যে, মনের আনন্দের জন্য যে কাজ তাই কাজের কাজ, তাই ভালো কাজ । প্রত্যেকটি মানুষ চায় নিজেকে ও নিজের পরিবেশকে জানতে। সুতরাং প্রত্যেকটি মানুষই দার্শনিক। দর্শন মানুষের মানসিক প্রকৃতি, অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনের তাগিদেই সৃষ্টি হয়েছে। তাই ড. স্টিফেন বলেন, “মানুষ দার্শনিক হবে কি হবে না-এটি কোনো প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হলো ভালো ও মন্দ-এর মধ্যে কোনটিকে তিনি বেছে নেবেন।”

২. মানব সত্তায় দর্শন

ভালো দর্শন প্রত্যেক মানবসমাজে কল্যাণের বাণী নিয়ে আসে। গোটা মানবসমাজের সৃষ্টি, সভ্যতা, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতিতে দর্শনের প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। দর্শন মানুষকে মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। কোনো বিশেষ সমাজ ভালো কি মন্দ, আদর্শিক কি অনাদর্শিক, তা উক্ত সমাজ কর্তৃক অনুসৃত সমাজদর্শনের উপর নির্ভরশীল।

৩. ব্যক্তির মুক্তিতে দর্শন

প্রগতিশীল সমাজ বলতে আমরা এমন একটা সমাজব্যবস্থাকে বুঝি যেখানে চিন্তার স্বাধীনতা আছে, যেখানে দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধ সবচেয়ে বড়; যে সমাজ নিজের পথ নিজে বেছে নিয়ে উন্নতির পথে অগ্রসর হয়। দর্শন এ ধরনের সমাজের ব্যক্তির মুক্তির কথা ঘোষণা করে।

৪. সমাজের প্রগতিতে দর্শনের ভূমিকা

চিন্তার স্বাধীনতায় কত দূর আছে- দর্শন আবার এ প্রশ্ন উঠায়। কর্তব্যবোধ, দায়িত্ববোধ,
সৌন্দর্যবোধ ইত্যাদির সুশৃঙ্খল আলোচনা দর্শনই করে। দর্শন ব্যক্তির মুক্তির সাথে সাথে সমাজের মুক্তিও ঘোষণা করে। এ মুক্তিতে সমাজের অগ্রগতি বা প্রগতি নির্ভর করে। সুতরাং দর্শন প্রগতিশীল সমাজকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে।

৫. সভ্যতার ইতিহাসে দর্শনের ভূমিকা

সভ্যতার ইতিহাস আলোচনা করলে এটা সহজেই আমাদের চোখে পড়ে যে, সভ্য সমাজে
দর্শন এক বিরাট ভূমিকা পালন করছে। যুগে যুগে যেসব সমাজব্যবস্থা আমাদের আদর্শ স্থানীয়, সেখানে আমরা দর্শনের খেলাই দেখতে পাই। এক্ষেত্রে অমরা গ্রিক সভ্যতা, রোম সভ্যতা, রেনেসাঁর ইতালির কথা বলতে পারি।

৬. রাষ্ট্রজীবনে দর্শনের আদর্শ ভূমিকা

রাষ্ট্রজীবনে দর্শনের যে আদর্শ ভূমিকা রয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। রাষ্ট্র চালনায়, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দর্শন ও দার্শনিকদের অবদান কম নয়। এজন্যই হয়ত প্লেটো বলেছেন, “রাজা হতে হলে তাকে একজন মারি দার্শনিক হতে হবে।” আধুনিক আমেরিকার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ডজন লকের গুরুত্ব কম নয়। মানব মুক্তি নিয়ে, মানব অধিকার প্রতিষ্ঠাকরে যে ফরাসি বিপ্লব হয়েছিল, তাতে দার্শনিক রুশোর অবদান অপরিসীম।

৭. বিজ্ঞানের জয়যাত্রাতে দর্শনের ভূমিকা

বিজ্ঞানের জয়যাত্রার যুগে অনেকে মনে করেন যে, দর্শনের কোনো প্রয়োজন নেই। তারা বলেছেন, রকেট, স্পুটনিক ইত্যাদি অতি অল্প সময়ে আমাদের চাঁদের দেশে নিয়ে যেতে পারে। আধুনিক বিজ্ঞান আজ নানা বিস্ময়কর আবিষ্কার প্রতিনিয়ত আমাদের দ্বারে নিয়ে আসছে। কিন্তু এসব বিস্ময়কর আবিষ্কার যে দার্শনিক চিন্তা চেতনার প্রতিফলন একথা ভুলে গেলে চলবে না।

৮. ধর্ম জীবনে দর্শনের প্রভাব

ধর্ম জীবনেও দর্শনের প্রয়োজনীয়তা কম নয়। ধর্ম ও কর্মের মধ্যেই মানুষের আদর্শ জীবন। বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় সমস্যাবলির সমাধানে দর্শন বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। বস্তুত দু’য়ের উদ্দেশ্য এক সত্যের স্বরূপ উপলব্ধি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে দর্শন ধর্মের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। আধুনিক খ্রিষ্টধর্ম মধ্যযুগের দার্শনিক প্রভাবে প্রভাবান্বিত।

৯. চিত্তবিনোদন ও জ্ঞানের পরিধি বাড়ানো দর্শনের কাজ

মানবজীবনের সর্বক্ষেত্র দর্শনের দ্বারা প্রভাবান্বিত এবং সর্বক্ষেত্রে দর্শন প্রয়োজনীয়। মানুষের চিত্তবিনোদন ও জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোই দর্শনের কাজ। সৃষ্টি ও স্রষ্টার জ্ঞান লাভের প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি। এদের উপযুক্ত জ্ঞান লাভেই মানুষ নিজেকে চিনতে পারে, পরকে বুঝতে পারে, দেশকে চিনতে পারে।

১০. মানবসমাজে দর্শনের প্রভাব

মানবসমাজে দর্শনের প্রভাব পড়ে দার্শনিকদের আলাপ আলোচনা, বক্তৃতা, লেখা ও কাজের মাধ্যমে। উনিশ শতকের দার্শনিকদের উগ্র জাতীয়তাবাদ দুটি মহাযুদ্ধের কারণে হয়েছে। মানবসভ্যতা ধ্বংসসহ মানবকল্যাণ-এর এরা যে কত ক্ষতি করেছে, তা অবর্ণনীয়।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, দর্শনের স্বরূপ, বিষয়বস্তু, প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা এবং প্রভাব আমাদের ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। তাই বলা যায়, দর্শন শুধু ‘অলস চিন্তা নয়। বাস্তবজীবনের সাথে দর্শনের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ এবং বাস্তব জীবনে দর্শনের উপকারিতার কথা বর্ণনাতীত। দর্শন একটি অলস চিন্তা নয়, আমরা বাস্তব জীবনে দর্শন ছাড়া কিছুই চিন্তা করতে পারি না। তাই বলা যায়, দর্শনের স্বরূপ, বিষয়বস্তু এবং প্রয়োজনীয়তা বাস্তব জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x