দেশ ও কাল বলতে কি বুঝায়
বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে উপর-নিচ, ভিতর-বাহির, দূর ও নিকট সম্পর্ক রয়েছে। আমরা কোন বস্তুকে অন্য আরেকটি বস্তুর উপর বা নিচ, ভিতর বা বাইরে দেখতে পাই। এমন সম্পর্ককে আমরা দৈশিক সম্পর্ক বলি। আবার এক বস্তু আরেক বস্তুর আগে বা পরে বা একই সময়ে স্থানান্তরিত হয়। বস্তুর মধ্যে এই আগে-পরের সম্পর্ক কালিক সম্পর্ক। তাই জ্ঞানের বিষয়ের জগতে দেশ ও কালের সম্পর্ক অপরিহার্য।
দেশ
সাধারণত দেশ বলতে পার্থিব বস্তুর আধারকে বুঝায়। এ দেশ আমাদের কাছে সর্বত্র বিস্তৃত এবং সীমাহীন বলে মনে হয়। আমরা যে দিকেই তাকাই না কেন অনন্ত বিস্তৃত দেশকে চোখের সামনে দেখতে পাই। এ দেশের কোনো সীমা নেই। কেননা দেশের যেখানেই সীমারেখা কল্পনা করা যাক না কেন তারপরেও আবার দেশই দেখতে পাই। ড. স্টাউট বলেছেন, “দেশের সীমা হলো দেশের কোন এক অংশের এবং তার পাশের আরেক অংশের মধ্যে দিয়ে টানা সীমারেখা। এ সীমা দেশে। সুতরাং দেশের সীমা হতে পারে না।“
কাল
কালের ধারণা সাধারণত ঘটনার পূর্বাপর সম্পর্ক থেকে জন্মে। এ জগতে নিয়ত ঘটনা ঘটে চলেছে। কোনটি আগে, কোনটি পরে, আবার কখনও দু’টি ঘটনা একত্রে ঘটে যাচ্ছে। মনে হয় যেন কালও চলছে। বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে পরিবর্তন ও গতি দেখা যায়। কালের সাহায্যেই আমরা বস্তুর এ গতি এবং পরিবর্তন উপলব্ধি করি। কাল অনাদি ও অনন্ত। কালে অসংখ্য মুহূর্ত আছে। যদিও কালের অনন্তভাগ কল্পনা করা যায় তবুও কাল এ ভাগগুলো বা মুহূর্তগুলোর সমষ্টি মাত্র নয়। কালের বিভিন্ন অংশ অখণ্ড কালের খণ্ডিতরূপ মাত্র।
দেশ ও কাল কাকে বলে
দেশ কাকে বলে
সাধারণত পার্থিব বস্তুর আধারকেই দেশ বলা হয়। এটা এমন একটা আধার যাতে বস্তুসমূহ অবস্থান করে। প্রফেসর কানিংহাম বলেন, “জড় বস্তুর মধ্যে অবস্থান, আকার এবং গঠনের যে সম্বন্ধ প্রতীয়মান তাই দেশ।”
অধ্যাপক এ মতিনের মতে, “যেখানে বস্তু অবস্থান করে এবং চলাচল করে সেখানে বস্তু বিস্তৃত হয়ে আকার গ্রহণ করে থাকে তাই হচ্ছে দেশ।”
কাল কাকে বলে
একাধিক বস্তু বা ঘটনার পারস্পর্যের সম্বন্ধকে কাল বলে অভিহিত করা যেতে পারে। বহির্জগতের প্রতি লক্ষ্য যায় যে, একটি বস্তু বা ঘটনা অপর আর একটি বস্তু বা ঘটনার পরে আসে। বস্তু বা ঘটনাসমূহের এই পারম্পর্য বা পূর্বাপর সম্পর্কের ভিত্তিই হলো কাল।
অধ্যাপক এ. মতিন তাঁর ‘An outline of Philosophy‘ গ্রন্থে বলেন, “সময় হচ্ছে স্রোতের মতো যেখানে বস্তু বা ঘটনার আবির্ভাব হয়। বৃহত্তর অর্থে দেশ বলতে বুঝায়, যেখানে বস্তুসমূহ সহাবস্থান করে। কাল হচ্ছে তাদের আবির্ভাব।”
আধুনিক কালের দার্শনিক আইনস্টাইন দেশ ও কাল আলাদা না করে দেশ-কাল বলেছেন। কেননা দেশ ছাড়া কাল বুঝা যায় না। আবার কাল ছাড়াও দেশ বুঝা যায় না। দেশ কালের উৎপত্তির কথা বলতে গিয়ে। তিনি বলেছেন, জ্ঞাতার গতির উপর দেশ-কাল নির্ভর করে।