নীতিবিদ্যা কত প্রকার ও কী কী

মানুষ বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন জীব। বুদ্ধিবৃত্তির সাহায্যেই মানুষ ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত প্রভৃতির পার্থক্য নিরূপণ করে। ব্যক্তি যখন নিজের ইচ্ছায় কোনো কাজ করে, সেটা ঐচ্ছিক ক্রিয়া। সমাজে বসবাসকারী মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের ন্যায়ত্ব অন্যায়ত্ব, ভালো-মন্দ, ঔচিত্য-অনৌচিত্য নৈতিক আদর্শের আলোকে মূল্যায়ন করে যে বিদ্যা তা নীতিবিদ্যা।

নীতিবিদ্যার শ্রেণিবিভাগ

নীতিবিদ্যাকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা,

ক. আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা

আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যা একটি আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের নৈতিক আচরণের মূল্যায়ন করে। আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদ্যার আলোচনাতে ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ ইত্যাদির পার্থক্য নিরূপণের ক্ষেত্রে মানদণ্ড কী হবে এবং এ মানদণ্ডের সিদ্ধান্তে কীভাবে পৌঁছানো যাবে, সে সম্পর্কে আদর্শনিষ্ঠ নীতিবিদরা বিভিন্ন মত পোষণ করেন।

খ. পরানীতিবিদ্যা

পরানীতিবিদ্যা নৈতিক শব্দের বা নৈতিক প্রত্যয়গুলোর অর্থের আলোচনার সাথে সংযুক্ত। বাক্যের অর্থপূর্ণতা অর্থাৎ বাক্যের সত্যতা ও মিথ্যাত্ব বিশ্লেষণ করে দেওয়া পরনীতিবিদ্যার কাজ। কোনো উক্তি অর্থপূর্ণ বা যথার্থ হয়েছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করে পরানীতিবিদ্যা। পরানীতিবিদ্যা হচ্ছে নৈতিক পদ বা কারণগুলোর একটি যৌক্তিক আলোচনা।

গ. বর্ণনাত্মক নীতিবিদ্যা

বর্ণনাত্মক নীতিবিদ্যার কাজ হলো মানুষের আচরণ বর্ণনা করা। আমরা বিভিন্ন ধরনের আচরণ করে থাকি। নৈতিক আচরণ হলো এক ধরনের আচরণ। এ নৈতিক আচরণ ও নৈতিক ঘটনার মূল্যায়ন করে বর্ণনাত্মক নীতিবিদ্যা ।

এছাড়াও নীতিবিদ্যার আরেকটি ভাগ আছে যার নাম প্রয়োগিক নীতিবিদ্যা। প্রয়োগিক নীতিবিদ্যা তিন প্রকার। যথা,

প্রয়োগিক নীতিবিদ্যার শ্রেণিবিভাগ

১. জীব নীতিবিদ্যা

প্রয়োগিক নীতিবিদ্যার যে শাখা নৈতিক নীতিমালার আলোকে ব্যক্তি মানুষের জীবন সম্পর্কিত ব্যক্তিগত নৈতিক সমস্যা, পরস্পরের মধ্যকার সম্পর্ক ও আচরণ সম্পর্কিত আলোচনা করে যা ব্যক্তির জীবন সমাজজীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে তাকে জীব নীতিবিদ্যা বলে।

২. পরিবেশ নীতিবিদ্যা

প্রয়োগিক নীতিবিদ্যার নতুন সংযোজন হচ্ছে পরিবেশ নীতিবিদ্যা। পরিবেশ নীতিবিদ্যা সংক্রান্ত দায় দায়িত্বের নৈতিক ভিত্তির পরীক্ষানিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে।

৩. ব্যবসায় নীতিবিদ্যা

ব্যবসায়ের সাথে জড়িত জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব ও কর্তব্যের মূল্যায়নধর্মী ব্যাখ্যাকে ব্যবসায় নীতিবিদ্যা বলে। ব্যবসায় নীতিবিদ্যার কাজ হলো ক্রয়বিক্রয়, মালিক-কর্মচারী সম্পর্ক, পণ্যের আদানপ্রদান প্রভৃতি নৈতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাখ্যা প্রদান করা।

পরিশেষে বলা যায় যে, নীতিবিদ্যা হলো মানুষের আচরণের বা ঐচ্ছিক ক্রিয়ার মূল্যায়নমূলক বিদ্যা। একটি আদর্শ মানদণ্ডের আলোকে মানুষের নৈতিক আচরণকে মূল্যায়ন করে নীতিবিদ্যা। নীতিবিদ্যার শ্রেণিবিভাগ আলোচনা নীতিবিদ্যার এক উল্লেখযোগ্য দিক। নীতিবিদ্যার শ্রেণিবিভাগ আলোচনার মাধ্যমে নীতিবিদ্যা সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে অবগত হওয়া যায় ।

Similar Posts