নিরক্ষরতা কাকে বলে এবং কেন নিরক্ষরতা একটি অভিশাপ
নিরক্ষরতা কি
নিরক্ষরতা বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা। কেননা নিরক্ষরতার কুফল আর্থসামাজিক জীবনে মারাত্মক ক্ষতিকর। নিরক্ষরতা নিজে যেমন একটি সমস্যা তেমনি অন্যান্য সামাজিক সমস্যা সৃষ্টিতে সহায়তা করে থাকে। ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। তাছাড়া নিরক্ষর ব্যক্তিরা উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে না। ফলে তারা সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য নিরক্ষরতা দূরীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত জরুরি।
নিরক্ষরতা কাকে বলে
তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে নিরক্ষরতা হল অক্ষরজ্ঞানহীনতা। অর্থাৎ সমাজের মানুষের মধ্যে অক্ষরজ্ঞান তথা শিক্ষাদীক্ষা না থাকাকেই সাধারণ অর্থে নিরক্ষরতা বলা হয়।
আবার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিরক্ষরতার সংজ্ঞা দিয়েছেন, সেগুলো নিম্নরূপ,
ইউনেস্কোর (UNESCO) মতে, “দৈনন্দিন জীবনের ক্ষুদ্র ও সাধারণ ব্যক্তব্যকে উপলব্ধি সহকারে লিখতে ও পড়তে অক্ষম ব্যক্তিই নিরক্ষর।”
Statistical Pocket Book of Bangladesh1984-85 তে বলা হয়, “The concept illiteracy used in various censuses conducted in Bangladesh has not been uniformed. In 1981 censuses, a person was treated a literature it he could write a letter any language, age more than five years.”
এছাড়া আমাদের দেশে,
১. ১৯৬১ সালের আদমশুমারিতে উপলব্ধি সহকারে কোন ভাষা পড়তে না পারা।
২. ১৯৭৪ সালে কোন ভাষা লিখতে ও পড়তে না পারা এবং
৩. ১৯৮১ সালে পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের চিঠি লিখতে না পারাকে নিরক্ষরতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪. ১৯৯১ সালে যে কোন ভাষায় চিঠি লিখতে না পারার অক্ষমতাকে নিরক্ষরতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং আলোচ্য বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলা যায়, নিরক্ষরতা হল এমন একটি নেতিবাচক অবস্থা যে অবস্থায় সমাজের সদস্য হিসেবে ব্যক্তি তার ভাষাগত ক্ষেত্রে পঠনপাঠন ও লিখনে সমর্থ হয় না।
নিরক্ষরতা একটি অভিশাপ
নিরক্ষরতা বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ অভিশাপ। সমাজের সর্বক্ষেত্রে নিরক্ষরতার কুপ্রভাব বিদ্যমান। নিম্নে নিরক্ষরতার কুপ্রভাব আলোচনার মাধ্যমে দেখবো তা বাংলাদেশের জন্য সামাজিক সমস্যা কিনা
১. জীবনযাত্রার নিম্নমান : নিরক্ষরতার প্রভাব হল জীবনযাত্রার নিম্নমান। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার নিম্নমানের জন্য নিরক্ষরতা দায়ী। নিরক্ষর ব্যক্তিরা জীবনযাত্রার গতানুগতিকতায় বিশ্বাসী। আধুনিক ও উন্নত জীবন মান তারা গ্রহণ করে না।
২. নিম্ন আয় : বাংলাদেশের মানুষের নিম্ন আয়ের জন্য ও নিরক্ষরতা দায়ী। নিরক্ষর ব্যক্তিরা অদক্ষ। তারা কোন কাজের উপযোগী নয় বলে তাদের মজুরি কম। ফলে তাদের আয় কম। আয় কম বলে উন্নত জীবনযাপন তারা করতে পারে না।
৩. শিক্ষাহীনতা : শিক্ষাহীনতা নিরক্ষরতার অন্যতম কুপ্রভাব। নিরক্ষর ব্যক্তিরা তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চায় না। ফলে তারা শিক্ষাহীন থাকে। বাংলাদেশে এভাবে শিক্ষাহীনতা বেড়ে চলেছে।
৪. অজ্ঞতা : নিরক্ষরতা বাংলাদেশে অজ্ঞতা সৃষ্টির জন্য দায়ী। নিরক্ষর ব্যক্তিরা অজ্ঞ ও সমাজ সম্পর্কে উদাসীন। ফলে তারা অজ্ঞতার বৃদ্ধি করে থাকে।
৫. অসচেতনতা : বাংলাদেশে অসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিরক্ষরতা দায়ী। নিরক্ষর ব্যক্তিরা জীবন, জীবনমান, সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে অসচেতন। ফলে তাদের দ্বারা কোন উন্নয়ন আশা করা যায় না।
৬. জনসংখ্যা বৃদ্ধি : জনসংখ্যা বৃদ্ধি বাংলাদেশের প্রধান সামাজিক সমস্যা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নিরক্ষরতা দায়ী। নিরক্ষর ব্যক্তিরা কোন কিছু না ভেবেই অধিক হারে সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে। ফলে দেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৭. সামাজিক সমস্যা বৃদ্ধি : বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত সামাজিক সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক সমস্যা বৃদ্ধির জন্য নিরক্ষরত অনেকাংশে দায়ী। কারণ নিরক্ষরতা নিজে যেমন সমস্যা তেমনি অন্যান্য সমস্যার জন্ম দিয়ে থাকে।
৮. দারিদ্রতা বৃদ্ধি : বাংলাদেশে দারিদ্রতা বৃদ্ধির জন্য নিরক্ষরতা দায়ী। কারণ নিরক্ষর ব্যক্তির আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা ও কৃষির আধুনিকীকরণ সম্পর্কে সচেতন নয়। তাছাড়া তারা কোন উৎপাদনমুখী কাজেরও যোগ্য নয়।
৯. বেকারত্ব : বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা হল বেকারত্ব। বেকারত্বের জন্য নিরক্ষরতা দায়ী। কারণ যেখানে শিক্ষিত লোকেরাই কাজ পাচ্ছে না, সেখানে নিরক্ষর লোকেরা কিভাবে কাজ পাবে। তাই বাধ্য হয়ে তারা বেকার থাকছে।
১০. পরিবেশ দূষণ : বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের জন্যও নিরক্ষরতাকে দায়ী করা হয়। নিরক্ষর ব্যক্তিরা পরিবেশের দূষণ সম্পর্কে অবগত নন। ফলে তারা ব্যাপক হারে গাছপালা কেটে, যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে পরিবেশ দূষণ ঘটায়।