দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কী । ব্যাখ্যাসহ আলোচনা
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র বলতে কী বুঝ?
কোনো একটি দেশের বা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উপাদান সমূহের (উৎপাদন, আয়, বিনিয়োগ এবং মূলধন) স্বল্পতার কারনবশত যে আবর্তিত ও অনিয়ন্ত্রিত চক্র তৈরি হয়, সেই চক্রকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র বলে। একটি দেশের অর্থনীতি এই চক্রের মধ্য পড়লে, বেরিয়ে আসাটা কঠিন হয়ে পরে এবং ধীরে ধীরে সেই দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলে। তাই,দারিদ্রের এই চক্রকে দুষ্টচক্র বলা হয়ে থাকে।
দারিদ্র নিয়ে সমাজ কর্মী ও দার্শনিকদের (Jary and Jary) মতে, “The study of poverty is central to any examination of social inequality, including an analysis of who is poor and the reasons for their poverty”।
পৃথিবীর সর্বত্র দারিদ্র্য অন্যতম সামাজিক সমস্যা। যাবতীয় সামাজিক সমস্যা দারিদ্র্য থেকেই উদ্ভূত। দারিদ্র্য সামাজিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা হিসেবে কাজ করে। দারিদ্র্য কারো কাম্য না হলেও পৃথিবীতে বিভিন্ন মাত্রায় এবং বিভিন্ন আঙ্গিকে দারিদ্র্য দেখা দিচ্ছে।
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কী
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হলো দারিদ্র্য। আর অনুন্নত দেশসমূহের অর্থনীতি মূলত দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের আবর্তনে ঘুরছে। অধ্যাপক র্যাগনার নার্কস্ বলেছেন, “A country is poor because it is poor.” এ দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের প্রবর্তক হলেন অধ্যাপক র্যাগনার নার্কস। তাঁর মতে, “দারিদ্র্য এমন একটি প্রক্রিয়া যা একটা চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে এবং একটার কারণে অন্যটা হচ্ছে এবং এ উপাদানগুলো আন্তঃসম্পর্কিত।” দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র এর চারটি উপাদান রয়েছে। যথা,
- ১. স্বল্প উৎপাদন,
- ২. স্বল্প আয়,
- ৩. স্বল্প বিনিয়োগ এবং
- ৪. স্বল্প মূলধন
নিম্নে এ চক্র চিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন করা হলো।
চিত্র : দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র (Poverty Cycle) |
আলোচ্য চিত্রে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, অনুন্নত দেশসমূহে উৎপাদন কম বলে লোকের আয় কম। অর্থাৎ, উৎপাদনের স্বল্পতার কারণে জনগণের আয়ের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে স্বল্প হয়, আবার আয়ের স্বল্পতার কারণে বাজারে পণ্যের চাহিদা কম। কারণ টাকা না থাকলে চাহিদা কমে যায়, আবার চাহিদা কম বলে বিনিয়োগও স্বল্প, কারণ ভোক্তার চাহিদার উপর নির্ভর করবে সে কতটুকু খরচ করতে ইচ্ছুক । বিনিয়োগের স্বল্পতার কারণে মূলধনও কম। কারণ মূলধন সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করে বা বিনিয়োগের উপর নির্ভরশীল । মূলধন কম হওয়ার কারণে উৎপাদনও তুলনামূলকভাবে কম হয়। আর এটি চক্রাকারে চলতে থাকে। এগুলো একে অপরের সাথে আন্তঃসম্পর্কিত (Interrelated)। এর ফলে দেশে দারিদ্র্য বিরাজ করছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, দারিদ্র্যের যাঁতাকলে পড়ে আমরা ক্রমশ আবর্তিত হচ্ছি। এর থেকে মুক্তি পেতে বেশ সময় লাগবে।
তাই বলা যায়, দারিদ্র্য কোন নির্দিষ্ট কারণের ফলশ্রুতি নয়। এটি একটি চরম সামাজিক সমস্যা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিগণিত হয়। মানুষ এ সমস্যায় চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে। মানুষে দারিদ্র্য সংগ্রামে নিয়োজিত থাকলেও তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয় না।