হুদায়বিয়ার সন্ধিকে ফাতহুম মুবিন বলা হয় কেন

হুদায়বিয়ার সন্ধিকে “ফাতহুম মুবিন” বলার কারণ

হুদায়বিয়ার সন্ধি ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করে। এ সন্ধি ইসলামকে আরবের বাইরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তার ও উত্তরণের এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। নিম্নে হুদায়বিয়ার সন্ধিকে “ফাতহুম মুবিন” বলার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১. সুস্পষ্ট বিজয়

মহান প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তায়ালা হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তিকে সুস্পষ্ট বিজয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এটি একটি অবমাননাকর সন্ধিচুক্তি মনে হলেও এ সন্ধিই বিশ্বব্যাপী দিন ইসলামের প্রচার প্রসার এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে দিনকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল।

২. রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় মর্যাদা বৃদ্ধি

এ সন্ধির ফলে মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং প্রথমবারের মতো কুরাইশরা মদিনা রাষ্ট্রকে একটি স্বতন্ত্র ধর্মীয় রাজনৈতিক রাষ্ট্র হিসেবে লিখিতভাবে স্বীকার করে নেয়। এ সন্ধির ফলে আরব উপদ্বীপের এতদিনকার ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়।

৩. শান্তি প্রতিষ্ঠা

হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে যুদ্ধবিগ্রহ সাময়িকভাবে বন্ধ হওয়ায় মুসলমানগণ নিশ্চিতভাবে বসবাস করার সুযোগ পায়। ইসলামি বিশ্বকোষের ভাষায়, “এ সন্ধির ফলে মুসলমানগণ ক্রমাগত যুদ্ধবিগ্রহ হতে অব্যাহতি পেল এবং তা ছিল বিজয়ের প্রথম পর্যায়।

৪. ইসলাম ধর্মের বিস্তৃতি

ইসলামের বিস্তৃতি ও প্রসারতার ক্ষেত্রে এ সন্ধির গুরুত্ব অপরিসীম। এ সন্ধির শর্তানুযায়ী মহানবী (সা.) এর সাথে বিভিন্ন গোত্রের লোকের ইসলাম গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। জোহরি বলেন, “There was no man of sense or judgement amongst the idolators who was not led there by to join Islam.” তাই দেখা যায়, ১৯ বছরের কঠোর পরিশ্রমের ফলে যেখানে মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ১,৪০০ ছিল, সেখানে এ সন্ধির দু’বছর পর সে সংখ্যা ১০,০০০ পর্যন্ত গিয়ে আমি পৌঁছে। খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং আমর ইবনুল আস এর মতো সেরা ব্যক্তিরা এসময়েই ইসলাম গ্রহণ করেন।

৫. শক্তিবৃদ্ধি

এ সন্ধির ফলে যুদ্ধাবস্থার অবসান হয়। সন্ধিচুক্তিতে দশ বছরের জন্য যুদ্ধবিরতির উল্লেখ ছিল। ফলে মহানবী (সা.) এর নেতৃত্বে মুসলিমগণ নিজেদেরকে সুসংহত ও প্রশিক্ষিত শক্তিরূপে গড়ে তুলতে সক্ষম হন এবং শান্ত পরিবেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে নিবিষ্টভাবে তাদের আত্মনিয়োগের সুযোগ ঘটে। এতে উত্তরোত্তর ইসলামের শক্তিবৃদ্ধি পেতে থাকে।

৬. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসলাম

আপাতত যুদ্ধাবস্থার অবসান ঘটায় মুসলিম রাষ্ট্রদূতগণ ইসলামের দাওয়াত নিয়ে আরবের বাইরে সিরিয়া, মিশর, পারস্য, আবিসিনিয়া প্রভৃতি দেশের রাজদরবারে গমন করেন। ফলে ইসলাম আরবের গপ্তি পেরিয়ে পরিমণ্ডলে বিস্তার লাভ করে। মহানবী (সা.) এসময় নির্বিঘ্নে প্রতিনিধি প্রেরণের মাধ্যমে ইসলামের সুমহান বাণী সমগ্র আরববিশ্বসহ বহির্বিশ্বে পৌঁছে দেন।

৭. কুরাইশদের শক্তিক্ষয়

এ সন্ধির ফলে কুরাইশরা নিজেদের জালে নিজেরাই বন্দি হয় এবং তাদের শক্তি দিনদিন ক্ষীয়মাণ হতে থাকে। এ প্রসঙ্গে হযরতের জীবনী লেখক জোহরি বলেন, There was no man of sense and judgment amongst the idolators who was not led there by to join Islam. খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং আমর ইবনুল আসের মতো শ্রেষ্ঠ বীরদ্বয় এসময়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।

৮. মক্কা বিজয়ের সূচনা

এ সন্ধি মক্কা বিজয়ের পথকে সহজ করে। ফলে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং কুরাইশরা ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে সন্ধি বাতিল বাহিনী নিয়ে মক্কা অভিযান করে তা শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিজয় করে নেন এবং এ থেকে ইসলামের দ্রুত প্রসারের ঘোষণা করলে মহানবী (সা.) দশ হাজার সাহাবির এক বিরাট সূচনা হয় বিশ্ব বিজয়ের অধ্যায়।