ভূগোল

প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা

1 min read

প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে আলোচনা কর

ভূগোল একটি গতিশীল বিজ্ঞান। অতি প্রাচীনকাল হতে মানুষ ভূগোল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে সম্যক জ্ঞান লাভ করে আসছে। পার্থিব পরিবেশ তথা পৃথিবীর বর্ণনা ভূগোল শাস্ত্রে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ফলে এর ক্ষেত্র ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভূগোলের অনেক শাখার মধ্যে প্রাকৃতিক ভূগোল অন্যতম।

প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা

নিম্নে প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

১. পৃথিবী সৃষ্টি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ : প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠ করলে আমরা পৃথিবী সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারি। পৃথিবীর জন্ম সম্বন্ধে কান্ট, লাগ্লাস, জীনস, কুইপার প্রমুখের মতবাদসহ বহু আধুনিক মতবাদ জানা সম্ভব। পৃথিবীর বর্তমান বয়স প্রায় ৫০০ কোটি বছর বলে যে অনুমান করা হয়েছে; তাও প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠে জানা সম্ভব।

২. ভূত্বক সম্পর্কে জ্ঞানলাভ : পৃথিবীর উপরের কঠিন ও পাতলা আবরণকে ভূত্বক বলে। ভূত্বকের গঠন কাঠামো, শিলা ও খনিজের উৎপত্তি, গঠন বিন্যাস, ভূআন্দোলন ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে জানা সম্ভব।

৩. পাহাড়-পর্বত সম্পর্কে জ্ঞানলাভ : ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র সমান নয়। ভূপৃষ্ঠ বন্ধুর প্রকৃতির। এর কোথাও রয়েছে সুউচ্চ শিলাস্তূপ অর্থাৎ মালভূমি, পাহাড় ও পর্বত। ভূপৃষ্ঠের সমতল স্থান হতে এসব পাহাড়, পবর্তের উচ্চতা, আয়তন ও অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞানলাভ করতে হলে প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক।

৪. সৌরজগৎ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ : পৃথিবী সৌরজগতের গ্রহ উপগ্রহের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র গ্রহ মাত্র। সৌরজগতের মধ্যে বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ, নীহারিকা, ছায়াপথ, নক্ষত্র, উল্কাপিণ্ড, ধুমকেতু প্রভৃতির কীরূপে সৃষ্টি এবং এদের গতিবিধি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে হলে প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

৫. অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ : বর্তুলাকার পৃথিবীর মাঝখান দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে বিষুবরেখা অতিক্রম করেছে। বিষুবরেখা হতে সুমেরু ও কুমেরু পর্যন্ত পৃথিবী কয়েকটি অক্ষাংশে বিভক্ত। অক্ষাংশ ভেদে পৃথিবীর দিন-রাত্রিও সমান নয়। আবার মূল মধ্যরেখা হতে পূর্বে ও পশ্চিমে পৃথিবীর সর্বত্র একই সময়ে দিন বা রাত সংঘটিত হয় না। যার ফলে দিবা-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি, ঋতুর পরিবর্তনসহ পৃথিবীর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠ করা একান্ত প্রয়োজন।

৬. বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে জ্ঞানলাভ : পৃথিবীকে বেষ্টন করে যে বায়বীয় পদার্থের আবরণ রয়েছে, তাকে বায়ুমণ্ডল বলে। বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এসব উপাদান পৃথিবীর সর্বত্র সমান নয়। আবার বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত এবং প্রত্যেকটি স্তর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। কাজেই বায়ু ও বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে জানতে হলে প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠ করা দরকার।

৭. আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কে জ্ঞানলাভ : পৃথিবীর সর্বত্র আবাহওয়া ও জলবায়ু এক রকম নয়। প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ুর তারতম্যের কারণ, বণ্টন প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়।

৮. শক্তি সম্পদ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ : পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি বিদ্যমান। যেমন- পেট্রোলিয়াম, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, প্রভৃতি । সৌরশক্তির এসব উৎসসমূহ, অবস্থা পরিমাণ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে হলে প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠ করা প্রয়োজন।

পরিশেষে বলা যায় যে, ভূগোলের বিভিন্ন শাখার মধ্যে প্রাকৃতিক ভূগোল অন্যতম। এটি ভূগোলের মূলভিত্তি, জ্ঞানবিজ্ঞানের বিবর্তনে এটি একটি বৃহৎ শাখা হিসেবে পরিচিত। প্রকৃতিগতভাবে পাওয়া বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হলে প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনেক।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x