মহাসাগর কাকে বলে | মহাসাগর কয়টি ও কি কি | ৫টি মহাসাগর সম্পর্কে তথ্য
মহাসাগর কাকে বলে
অবস্থান, আয়তন ও গভীরতা অনুযায়ী বারিমণ্ডলের বৃহত্তম ও গভীরতম অর্থাৎ উন্মুক্ত বিস্তীর্ণ পানি রাশিকে মহাসাগর (Ocean) বলে। মহাসাগরের ইংরেজি হচ্ছে Ocean ।
মহাসাগর কয়টি ও কি কি
পৃথিবীপৃষ্ঠে মোট ৫টি মহাসাগর আছে। যথা:
- ১. প্রশান্ত মহাসাগর
- ২. আটলান্টিক মহাসাগর
- ৩. ভারত মহাসাগর
- ৪. সুমেরু বা উত্তর মহাসাগর
- ৫. কুমেরু বা দক্ষিণ মহাসাগর
নিম্নে মহাসাগরগুলোর অবস্থান, আয়তন ও গভীরতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
৫টি মহাসাগর সম্পর্কে তথ্য
১. প্রশান্ত মহাসাগর
আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগর হলো প্রশান্ত মহাসাগর। এর আকৃতি একটি বৃহদাকার বিষম ত্রিভুজের ন্যায়। এটি দক্ষিণ দিকে প্রশস্ত যা নিরক্ষরেখা বরাবর সবচেয়ে বেশি কিন্তু উত্তর দিকে ক্রমেই সংকীর্ণ। মহাসাগরগুলোর মধ্যে এটি সর্বাপেক্ষা বৃহৎ। এছাড়াও এ মহাসাগরে বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে কয়েকটি মালভূমি। এসব মালভূমির উপরিভাগ সমুদ্রের উপর উত্থিত হওয়ার ফলে এখানে বহুসংখ্যক দ্বীপের সৃষ্টি করেছে। যার মধ্যে রয়েছে মহাসাগরের পশ্চিমে কিউরাইল দ্বীপপুঞ্জ, ফিলিপাইন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ বড় বড় দ্বীপপুঞ্জ। এছাড়াও নিউহেবরাইডস, ফিজি, মার্শাল, সোলোমন, নাউরু, কিরিবাতি, হাওয়াই, অলিউশিয়ান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এ মহাসাগরের পশ্চিমে ওখটস্ক সাগর, পীত সাগর, পূর্বচীন সাগর এবং উত্তর দিকে বেরিং প্রণালি দ্বারা মহাসাগরের মহীঢাল ক্রমশ অধিক ঢালু হয়ে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
অবস্থান : প্রশান্ত মহাসাগরটির পূর্বে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ, পশ্চিমে এশিয়া ও ওসেনিয়া মহাদেশ অবস্থিত।
আয়তন : এ মহাসাগর আয়তনের দিক দিয়ে সর্বাপেক্ষা বৃহত্তর । এর মোট আয়তন প্রায় ১৬৫.৪ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার; যা সমস্ত ভূপৃষ্ঠের প্রায় – অংশ জুড়ে বিস্তৃত।
গভীরতা : প্রশান্ত মহাসাগরে সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৫,৯৫৮ ফুট এবং গড় গভীরতা ১৪,০০০ ফুট। এটি পৃথিবীর গভীরতম মহাসাগর।
২. আটলান্টিক মহাসাগর
আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। এর আকৃতি অনেকটা ইংরেজি ‘S’ অক্ষরের ন্যায়। এটি নিরক্ষরেখার কাছে সর্বাধিক সংকীর্ণ এবং নিরক্ষরেখা থেকে উত্তরে ও দক্ষিণে ক্রমশ চওড়া হয়ে অবস্থিত। এ মহাসাগরটির প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে নিরক্ষরেখা অতিক্রম করায় নিরক্ষরেখার উত্তর অংশকে উত্তর আটলান্টিক এবং দক্ষিণ অংশকে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর বলে পরিচিত। আটলান্টিক শৈলশিরা নামে এ মহাসাগরের মধ্যভাগে এক বিশাল শৈলশিরা অবস্থিত। এছাড়া ওয়ালভিস শৈলশিরা, রিও গ্যান্ড শৈলশিরা, চ্যালেঞ্জার শৈলশিরা, ডলফিন শৈলশিরা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এ মহাসাগরের দ্বীপগুলো বেশিরভাগই উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যবর্তীতে অবস্থিত। উল্লেখযোগ্য দ্বীপগুলোর মধ্যে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, নিউফাইন্ডল্যান্ড, ক্যানারি, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, বারমুডা, ত্রিনিদাদ, ক্যাপভার্দে প্রভৃতি প্রধান। এ মহাসাগরে সাগর ও উপসাগরের মধ্যে উত্তর সাগর, বাফিন সাগর, বাল্টিক সাগর, অ্যাড্রিয়াটিক সাগর, বিস্কে উপসাগর, মেক্সিকো উপসাগর, ভূমধ্যসাগর, ক্যারিবিয়ান সাগর প্রভৃতি প্রধান।
অবস্থান : আটলান্টিক মহাসাগরটি ইউরোপ ও আফ্রিকার পশ্চিমে এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার পূর্বে অবস্থিত।
আয়তন : এ মহাসাগরের মোট আয়তন ৮২.২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার; যা মহাসাগরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়।
গভীরতা : এ মহাসাগরের সর্বাধিক গভীরতা প্রায় ৩০,১৪৩ ফুট এবং গড় গভীরতা প্রায় ১২,০০০ ফুট।
৩. ভারত মহাসাগর
ভারত মহাসাগরের আকৃতি উত্তর দিক হতে ক্রমশ দক্ষিণ দিকে প্রশস্ত। এ মহাসাগরে ‘সুন্ডাখাত’ নামে একটি গভীর খাত রয়েছে। এ মহাসাগরের উল্লেখযোগ্য দ্বীপগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, মাদাগাস্কার, আন্দামান, নিকোবর, লাক্ষা দ্বীপ, মালদ্বীপ, সিসিলি প্রভৃতি প্রধান। এ সহাসাগরে সাগর ও মহাসাগরের সংখ্যা কম। আরব সাগর, লোহিতসাগর, পারস্য উপসাগর, বঙ্গোপসাগর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
অবস্থান : এ মহাসাগরটি এশিয়ার দক্ষিণে, আফ্রিকার পূর্বে, ওসেনিয়ার পশ্চিমে, এন্টার্কটিকার উত্তরে অবস্থিত।
গভীরতা : মহাসাগরের সর্বাধিক গভীরতা ২৪,০০০ ফুট এবং গড় গভীরতা ১২,৮০০ ফুট।
৪. সুমেরু বা উত্তর মহাসাগর
সুমেরু মহাসাগরটির আকৃতি অনেকটা বৃত্তাকার। এ মহাসাগরের অধিকাংশ স্থানই বরফাবৃত্ত। এ মহাসাগরে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ কিছু দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে যা অধিকাংশ কানাডা, সাইবেরিয়া প্রভৃতি ভূখণ্ডের নিমজ্জিত অংশ নিয়ে গঠিত। সাগর উপসাগরের মধ্যে পূর্ব সাইবেরিয়ার সাগর, কারা সাগর, ব্যারেন্ট সাগর, ল্যাপটিভ সাগর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
অবস্থান : প্রায় স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত সুমেরু বা উত্তর মহাসাগরটি সুমেরু বৃত্তের মধ্যে অবস্থিত; যার দক্ষিণ ভাগ উত্তর আমেরিকার কানাডা, গ্রিণল্যান্ড এবং ইউরোপ দ্বারা বেষ্টিত।
আয়তন : সুমেরু মহাসাগরটির মোট আয়তন প্রায় ১৫ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার; যা মহাসাগরগুলোর মধ্যে চতুর্থ।
গভীরতা : এ মহাসাগরের সর্বাধিক গভীরতা প্রায় ১৮,০০০ ফুট এবং গভীরতা প্রায় ২,৭০০ ফুট।
৫. কুমেরু বা দক্ষিণ মহাসাগর
কুমেরু মহাসাগরটির আকৃতিও অনেকটা বৃত্তাকার। এ মহাসাগরটি প্রায়ই বরফে আবৃত। সাগর মহাসাগরের মধ্যে ওয়েডেল সাগর, রস সাগর, এ্যামুন্ডসন সাগর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
অবস্থান : কুমেরু ৰা দক্ষিণ মহাসাগরটি এন্টার্কটিকা মহাদেশে উত্তরাংশের চারদিকে বেষ্টন করে অবস্থিত।
আয়তন : এ মহাসাগরটির আয়তন প্রায় ১৪.৮ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার; যা মহাসাগরগুলো মধ্যে ক্ষুদ্রতম।
গভীরতা : কুমেরু মহাসাগরটির সর্বাধিক গভীরতা প্রায় ১৮,৭৯৪ ফুট এবং গড় গভীরতা প্রায় ৪,৯২০ ফুট।
মহাসাগরগুলো বারিমণ্ডলের মধ্যে অন্যতম। ভূপৃষ্ঠের মোট আয়তনের ৫ এর ৭ ভাগ জলভাগ। উপরিউক্ত মহাসাগরগুলোর অবস্থান, আয়তন, গভীরতা প্রভৃতি বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। ফলে প্রতিটি মহাসাগরের মধ্যে উক্ত বিষয়গুলোর যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। কাজেই ভূপৃষ্ঠের মধ্যে মহাসাগরগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।