হিসাব চক্রের ধাপ গুলো কি কি

হিসাব চক্রের ধাপ গুলো কি কি

বারবার প্রতিষ্ঠানের লেনদেনসমূহ শব্দান্তকরণ থেকে শুরু করে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে হিসাবচক্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাচীনপন্থি হিসাববিদগণ হিসাববিজ্ঞানের ৫টি চক্র উল্লেখ করেছেন। বর্তমান সম্প্রসারণপূর্ব হিসাবচক্রকে ১১টি ধাপে বিভক্ত করেন। অর্থাৎ হিসাবচক্রে ১১টি ধাপ রয়েছে। হিসাবচক্র অনুযায়ী হিসাবরক্ষণ করলে তা থেকে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণের ক্ষেত্রে সহজ ও নির্ভুল হয়। নিচে এর বিভিন্ন ধাপ আলোচনা করা হলো।

১. লেনদেন শনাক্তকরণ

প্রতিটি ঘটনা ঘটার পর তা আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে কিনা তা বিবেচনা করে বিভিন্ন ঘটনা হতে লেনদেন শনাক্ত করতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে সকল ঘটনাই কিন্তু লেনদেন হিসাবে গণ্য হবে না।

২. লেনদেন জাবেদাভুক্তকরণ

লেনদেন চিহ্নিত বা শনাক্তকরণের পর তা জাােভুক্ত করতে হবে। লেনদেনের শ্রেণিবিন্যাস করে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করতে হয়। যেমন জন্মবহি, বিক্রয়বহি, নগদান বহি, প্রাপ্যবিল, প্রদেয় বিল বহি ইত্যাদি।

৩. খতিয়ানভুক্তকরণ

জাবেদা হতে লেনদেনগুলেল শ্রেণিবিন্যাস করে তা সংক্ষিপ্ত আকারে খতিয়ানে স্থানান্তর করা হয়। অর্থাৎ জাবেদার পর লেনদেনগুলোকে তাই খতিয়ানভুক্ত করতে হয়।

৪. রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ

হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করার জন্য রেওয়ামিল প্রস্তুত করতে হয়। খতিয়ানের উদ্বৃত্ত রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে এবং ক্রেডিট উদ্বৃত্ত রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে।

৫. সমন্বয়করণ

হিসাব নগদ বা বকেয়াভিত্তিক হতে পারে। আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের সময় দুটোই লিপিবদ্ধ করতে হয়। তাই যদি কোনো লেনদেন বাদ পড়ে তবে তা সমন্বয় আবেদা করে হিসাবভুক্ত করতে হয়। এতে করে প্রতিষ্ঠানের হিসাবে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা প্রমাণ পায়।

৬. সমন্বিত রেওয়ামিল

রেওয়ামিল ও সমন্বয় মিলকরণের মাধ্যমে সমন্বিত রেওয়ামিল তৈরি করা হয়। এতে অসমন্বিত লেনদেনগুলো সমন্বয় করা হয়।

৭. কার্যপত্র তৈরি

সমন্বিত রেওয়ামিল হতে আয় বিবরণী ও স্থিতিপত্র তৈরি করে প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতি ও সম্পত্তি দায় সম্পর্কে যথার্থ ধারণা পাওয়া যায়। এটি একটি বহু ঘরবিশিষ্ট হিসাব পদ্ধতি। যা হতে রেওয়ামিল, সমন্বয়, সমন্বিত রেওয়ামিল, আয় বিবরণী, উদ্বৃত্তপত্র ইত্যাদি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। যা প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৮. আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত

আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতি জানা যায় এবং উদ্বৃত্তপত্র তৈরি করে প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ও দায় সম্পর্কে জানা যায়। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা সম্পর্কে জানা যায়। তাই কারবারের সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়।

৯. সমাপনী দাখিলা

সমাপনী দাখিলার মাধ্যমে নামিক বা মুনাফা জাতীয় হিসাবসমূহ বন্ধ করা হয়। ফলে বছর শেষে এগুলোর আর কোনো উদ্বৃত্ত অবশিষ্ট থাকে না।

১০. সমাপনী উত্তর রেওয়ামিল

চূড়ান্ত হিসাব প্রস্তুতের পর তা হতে সমাপনী উত্তর রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে এবং দায়গুলো ক্রেডিট দিকে বসাতে হবে। তবে এটি তৈরি করা হিসাবের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়।

১১. বিপরীত দাখিলা

সমন্বয় দাখিলার উল্টা দাখিলাকে বিপরীত দাখিলা বলে। তবে বকেয়া আয়, বকেয়া খরচ, অগ্রিম আয়, অগ্রিম খরচ ছাড়া অন্যান্য সমন্বয় জাবেদার বিপরীত দাখিলা হয় না।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, হিসাবচক্র একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ কার্যাবলির পর্যায়ক্রমিক প্রকাশ।

Similar Posts