যেকোনো দক্ষ, সুষ্ঠু ও উন্নত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনুপাত বিশ্লেষণের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। কারণ অনুপাতের সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয় হিসাব লাভ-লোকসান হিসাব ও উদ্বৃত্তপত্র তথা আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি বা অবনতি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য লাভ করা যায়।
অনুপাত বিশ্লেষণের গুরুত্ব / প্রয়োজনীয়তা বা সুবিধা
আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনায় একনিষ্ঠ হাতিয়ার হিসেবে যেসব ক্ষেত্রে অনুপাত বিশ্লেষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক তা হচ্ছে।
১. ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে : অনুপাত্ত বিশ্লেষণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কার্যকরী মূলধন নির্ধারণ, স্থায়ী সম্পত্তি, চলতি দায়, পরিকল্পনা প্রণয়ন বাজেট প্রণয়ন ইত্যাদি। বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অনুপাত বিশ্লেষণের প্রয়োজন।
২. বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে : আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীগণ কোনো ব্যবসায়ে অর্থ বিনিয়োগ করবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাই এই অনুপাত বিশ্লেষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩. ঋণদাতাদের ক্ষেত্রে : অনুপাত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঋণদাতাগণ কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
৪. ব্যয় নিরূপণের ক্ষেত্রে : যেকোনো ব্যয় নির্ণয়ের জন্যও অনুপাত বিশ্লেষণ বিশেষ প্রয়োজন। কাঁচামাল ক্রয় মজুরি উপরিখরচ ইত্যাদির অনুপাত সঠিকভাবে যাচাই করিতে অনুপাত বিশ্লেষণের প্রয়োগ। তাছাড়াও মান ব্যয় ও প্রকৃত বা সঠিকভাবে প্রয়োগ ও উপস্থাপন করতে এটি সাহায্য করে।
৫. নিরীক্ষার ক্ষেত্রে : অনুপাত বিশ্লেষণ হিসাব নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর্থিক বিবরণীর সঠিকতা যাচাই, ভুলত্রুটি উদ্ঘাটন, জাল, জুয়াচুটি নিবারণ, হিসাবের গড়মিল প্রকাশ, হিসাবের মান ইত্যাদির সঠিকভাবে যাচাই করার জন্য অনুপাত বিশ্লেষণ বিশেষ প্রয়োগ।
৬. ব্যবস্থাপনার দক্ষতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে : উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, স্ব-স্ব কার্য বিভাগ কিরূপ দক্ষতার সাথে কার্য পরিচালনা ও সম্পাদন করছে তা সংশ্লিষ্ট অনুপাত বিশ্লেষণের মাধ্যমে যাচাই করা যায়।
৭. কারবার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছলতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে : কারবারের চলতি মূলধন অবস্থা, চলতি সম্পদ ও চলতি দায়ের পরিমাণ, চলতি দায় ও তাৎক্ষণিক দায়সমূহ পরিশেষ করার ক্ষমতা, মোট মূলধনের মধ্যে নিজস্ব মূলধনের পরিমাণ ইত্যাদি অনুপাত বিশ্লেষণ মাধ্যমেই যাচাই করা সম্ভব হয়।
৮. মুনাফা অর্জন ক্ষমতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে : বিক্রয়ের উপর মুনাফার হার, মূলধনের উপর মুনাফার হার, সম্পত্তিসমূহের উপর মুনাফা হার অনুপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা সম্ভব হয়।
৯. পূর্বাভাস প্রদানের ক্ষেত্রে : অনুপাতকে পূর্বাভাসের উপায় হিসাবে গণ্য করা হয়। অতীত ও বর্তমান আর্থিক বিবরণী সম্পর্কিত অনুপাত ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
১০. আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ও আন্তঃশাখার তুলনার ক্ষেত্রে : অন্তঃপ্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও ব্যর্থতার তুলনামূলক বিশ্লেষণে অনুপাত বিশেষভাবে সহায়ক।
১১. মূলধন কাঠামো গঠন : অনুপাত বিশ্লেষণের সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের মূলধন কাঠামোতে অভ্যন্তরীণ অর্থসংস্থান ও বহিঃঅর্থসংস্থানের অনুপাত নির্ণয় করে প্রতিষ্ঠানের তহবিলের ব্যয় ও ঝুঁকি পরিমাপ করা যায়।
১২. তারল্য অবস্থা : অনুপাত বিশ্লেষণের সাহায্যে একটি প্রতিষ্ঠানের তারল্য অবস্থা জানা যায়। যদি প্রতিষ্ঠান তার চলতি দায় পরিশোধের তারিখে পরিশোধ করতে বা মিটাতে পারে তাহলে প্রতিষ্ঠানের তারল্য অবস্থা সন্তোষজনক বলে বিবেচনা হয়।
১৩. আর্থিক অবস্থা যাচাই : কারবারের বর্তমান আর্থিক অবস্থা যাচাই এর জন্য অনুপাত্ত বিশ্লেষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানে মূলধনের অবস্থা, চলতি মূলধনের অবস্থা, চলতি সম্পত্তি, চলতি দায়, দায় পরিশোধ ক্ষমতা, নিজস্ব মূলধনের পরিমাণ ইত্যাদি অনুপাত বিশ্লেষণের মাধ্যমে সহজেই যাচাই করা যায়।
১৪. সম্ভাব্য কার্যকরণ সম্পর্ক নির্ণয় : অনুপাত নির্ণয়ের মাধ্যমে অতীত ঘটনা বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে কার্যকরণ সম্পর্ক নির্ণয় করা যায়।
১৫. ঋণ পরিশোধ ক্ষমতা পরিমাণ : অনুপাত বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘকালীন ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা পরিমাপ করা যায় যা প্রতিষ্ঠানের উপার্জন ক্ষমতা ও নির্বাহী দক্ষতার পরিচয় বহন করে।
১৬. কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ : বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে অনুপাত বিশ্লেষণে সাহায্য করে।
১৭. সিদ্ধান্ত গ্রহণ : অনুপাত বিশ্লেষণ ব্যবস্থাপনাকে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে বিনিয়োগকারীগণকে বিনিয়োগের সম্পর্কে এবং ঋণদাতা ও পাওনাদারকে স্ব স্ব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপায় বা হাতিয়ার হিসাবে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আধুনিক ব্যস্থাপনার অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে অনুপাত বিশ্লেষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অত্যাধিক।