যোগাযোগ কি

যোগাযোগ কি

যোগাযোগ কি

যোগাযোগ এমন একটি বিষয় যা মানুষের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রবহমান থাকে। মানবজীবনে যোগাযোগের বিষয়টিকে কোনভাবেই পরিহার করা যায় না। ব্যক্তিগত, সামাজিক জীবনের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। আর ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যোগাযোগ একটি সহায়ক ও কার্যকর উপাদান হিসেবে পরিগণিত হয়। আধুনিক সভ্য সমাজের কোনকিছুই যোগাযোগ ছাড়া সংঘটিত হতে পারে না। যোগাযোগ একটি বিধিবদ্ধ পন্থা যার দ্বারা মানুষের ব্যক্তিক, সামাজিক, আবেগ, অনুভূতি ও ভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। মানুষ তাদের প্রয়োজনীয়তার তাগিদেই একে অন্যের সাথে ভাবের আদানপ্রদান করে থাকে। তথ্য বা ভাবের আদানপ্রদানের এ পারস্পরিক প্রক্রিয়াই হচ্ছে যোগাযোগ।

শাব্দিক অর্থ যোগাযোগ কি

ইংরেজি Communication শব্দের পারিভাষিক প্রতিশব্দ হচ্ছে যোগাযোগ। Communication শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Communis থেকে উদ্ভব হয়েছে যার অর্থ Common বা সাধারণ। যোগাযোগের শাব্দিক অর্থের দ্বারা তথ্যের আদানপ্রদানের মাধ্যমে একটি সাধারণ বোধগম্যতা প্রতিষ্ঠাকে বুঝানো হয়। আবার অনেকের মতে, ফরাসি শব্দ Communing থেকে Communication শব্দের উদ্ভব হয়েছে। Communing শব্দের দ্বারা The Act of Communicating অর্থাৎ, এক পক্ষ অন্য কোন পক্ষকে কোন বিষয় জ্ঞাপন করলে তাকে যোগাযোগ বলা হয়। সুতরাং পারস্পরিক তথ্যের আদানপ্রদান বা ভাব বিনিময়কে যোগাযোগ বলা হয়।

সাধারণ অর্থে যোগাযোগ কি

সাধারণ অর্থে যোগাযোগ বলতে দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে তথ্য বা ভাবের আদানপ্রদানকে বুঝানো হয়।

সংকীর্ণ অর্থে যোগাযোগ কি

অন্য পক্ষের কাছ থেকে তথ্য লাভ করে তা যথাযথভাবে অবহিত হওয়ার মাধ্যমে সঠিক ও প্রয়োজনীয় ভাব প্রকাশের প্রক্রিয়াকে যোগাযোগ বলা হয়।

ব্যাপক অর্থে যোগাযোগ কি

ব্যাপক অর্থে যোগাযোগ বলতে মানবজীবনের দলীয় মনোভাব ব্যক্ত করার সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে বুঝানো হয়। যোগাযোগ প্রতিটি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত রয়েছে। যোগাযোগ একটি সর্বজনীন বিষয়। প্রতিটি প্রাণীই তার জীবন প্রবাহে যোগাযোগের সাথে সম্পৃক্ত হয়।

যোগাযোগ কাকে বলে এবং সংজ্ঞা

বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও বিশেষজ্ঞ বিভিন্নভাবে যোগাযোগের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে যোগাযোগের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা প্রদান করা হল।

অধ্যাপক লুইস এ. অ্যালেন এর মতে, “একজন অন্য জনের মধ্যে বোধগম্যতা জাগ্রত করার লক্ষ্যে যা কিছু করে তার সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে যোগাযোগ বলা হয়।”

মুরপি এবং পিক (Murphy and Peck) লেখকদ্বয়ের মতে, “মানুষের মধ্যে ধারণা ও তথ্যের দ্বিমুখী বিনিময় প্রক্রিয়াকে যোগাযোগ বলে।” (Communication is a two-way process of exchanging ideas or information between human beings.)

নিউম্যান এবং সামার (Newman and Summer) এর মতে, “দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে তথ্য, ভাব, মতামত, আবেগ ইত্যাদির আদানপ্রদানের প্রক্রিয়াই হল যোগাযোগ।

ইলিয়ট জ্যাকস এর মতে, “প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সচেতন এবং অবচেতন মনে অনুভূতি, মনোভাব ও ইচ্ছার বিনিময়কে যোগাযোগ বলে।” (Communication is the sum total of directly and indirectly, consciously and unconsciously transmitted feeling, attitudes and wishes.)

আমেরিকান ব্যবস্থাপনা সমিতির (AMA) মতে, “যোগাযোগ হল এমন এক ধরনের আচরণ যা ভাব বিনিময়ের ফলশ্রুতি।” (Any behaviour that results in an exchange of meaning.)

গেরী এবং ডেসার (Garry and Dessler) এর মতে, “যোগাযোগ হল তথ্য বিনিময় এবং একস্থান হতে অন্যস্থনে, ভাব বিনিময়ের উপায়।” (Communication is the exchange of information and the transmission of meaning.)

National Society for the Study of Communication এর মতে, “কোন নির্দিষ্ট ঘটনা, অনুভূতি, মতামত, ধারণা, ভাবাবেগ ইত্যাদি বিনিময়ের প্রক্রিয়াই হল যোগাযোগ।”

অধ্যাপক ম্যাকফারল্যান্ড (Prof. McFarland) এর মতে, “যোগাযোগ বলতে জনগণের মধ্যে অর্থবোধক অনুভূতি সঞ্চার এবং ভাব বা চিন্তাধারা পৌছানোর প্রক্রিয়াকে বুঝায়।”

(Communication is apprises of creating feeling about meaning and transferring of though among people.)

  1. Bellow and Others যোগাযোগের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “যোগাযোগ হচ্ছে শব্দ, অক্ষরমালা, প্রতীকচিহ্ন বা বার্তাসমূহের দ্বারা সংযোগ স্থাপন এবং এভাবে সংগঠনের এক সদস্য অন্য সদস্যের সাথে ভাব ও চিন্তাধারায়অংশগ্রহণ করে।

Dean C Barlund বলেছেন, “যোগাযোগের ক্ষেত্রে যোগাযোগকারীকে যোগাযোগের বিষয়বস্তু সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে, এটাকে যথাযথভাবে সাজাতে হবে এবং দক্ষতার সাথে বার্তাকে যোগাযোগ গ্রহীতার নিকট প্রেরণ করতে হবে।”

মাইকেল এইচ. বোটমলি (Michael H. Bottomley) এর মতে, “যোগাযোগ একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া যা ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করে, কিন্তু ব্যক্তিবর্গের প্রতি নয়।”

কুঞ্জ এবং এইচ. আইরিচ (Koontz and H. Weihrich) এর মতে, “বার্তা গ্রাহকের বোধগম্য তার নামে বার্তা প্রেরক ও বার্তা গ্রাহকের মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদানকে যোগাযোগ বলে।” (Communication is the transfer of information from the sender to receiver with the information being understood by the receiver.)

উপসংহার

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যোগাযোগ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে ভাব, অনুভূতি, তথ্য ও মতামত বিনিময় হয়ে থাকে। এটি দু’টি পক্ষের মধ্যে তথ্য বিনিময় বা যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার একটি কার্যকর পদ্ধতি। যোগাযোগের ক্ষেত্রে সর্বদা বার্তাপ্রেরক ও বার্তা পাস্ক এ দু’টি পক্ষ সম্পৃক্ত থাকে। সুতরাং বলা যায় যে, কারবার প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক ব্যক্তির মধ্যে উক্ত কার্যক্রমকে উন্নয়নের পথে পরিচালিত করার জন্য, তথ্য, মতামত, ভাব, সিদ্ধান্ত ও নির্দেশের দ্বিমুখী প্রক্রিয়াকে যোগাযোগ বলা হয়।

Similar Posts