ব্যষ্টিক অর্থনীতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতি কি, কাকে বলে, এদের মধ্যে পার্থক্য এবং পারস্পরিক গুরুত্ব
ব্যষ্টিক অর্থনীতি কি এবং কাকে বলে
অধ্যাপক রাগনার ফ্রিশ ১৯৩৩ সালে সর্বপ্রথম অর্থনীতিতে Micro ও Macro শব্দ দু’টিকে ব্যবহার করেন। সূচনালগ্নে অর্থনীতির কোন শাখা-প্রশাখার অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু ১৯৩৬ সালে ফেইনস তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The- General Theory of Employment, Interest and Money’ প্রকাশের পর থেকে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক এ দুই খাতে প্রবাহিত করা হয়।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি
ব্যষ্টিকের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Micro। প্রাচীন গ্রিক শব্দ Mikros হতে ইংরেজি Micro শব্দটির উৎপত্তি। আভিধানিক অর্থে (Micro) শব্দটির অর্থ হল ক্ষুদ্র। তাই উৎপত্তিগতভাবে ব্যষ্টিক অর্থনীতি হল অর্থনীতি শাস্ত্রের ঐ অংশ যেখানে কোন ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, ফার্ম ইত্যাদি রয়েছে। সুতরাং, অর্থনীতির যে শাখায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র অংশের বা এককের অর্থনৈতিক আচরণ বিশ্লেষণ করা হয় তাকেই ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলা হয়। ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনীতির ক্ষুদ্রত্বের দিক আলোচনা করা হয়। অর্থনীতির এ শাখায় ভোক্তা উৎপাদক ও শিল্পের ভারসাম্য পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া ব্যষ্টিক অর্থনীতি বিভিন্ন উপকরণের মূল্য নির্ধারণ এবং সম্পদ ও উৎপাদিত পণ্যের বণ্টনের সমন্বয়ে সামাজিক কল্যাণের বিষয়টিও তুলে ধরে। অর্থনীতিবিদগণ ব্যষ্টিক অর্থনীতিকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
অর্থনীতিবিদ হেন্ডারসন এবং কুয়ান্ডট এর মতে, “ব্যষ্টিক অর্থনীতি হল ব্যক্তির এবং সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের আলোচনা।
অর্থনীতিবিদ বোল্ডিং এর মতে, “ব্যষ্টিক অর্থনীতি এক একটি ফার্ম, এক একটি পরিবার, প্রত্যেকটি দ্রব্যের দাম, মজুরি, আয়, প্রত্যেকটি শিল্প এবং প্রত্যেকটি দ্রব্য সম্পর্কে পৃথকভাবে আলোচনা করে। “
অধ্যাপক Gardner Ackley ব্যষ্টিক অর্থনীতির সংজ্ঞা এভাবে দিয়েছেন : “Micro economics deals with the division of total output among industries, products and firm’s and the allocation of resources among competing groups. It considers problems of income distribution. Its interest is in relative prices of particular goods and services.”
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করা হয় না বরং ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিশেষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি এককভাবে বা পৃথকভাবে আলোচনা করাই হল ব্যষ্টিক অর্থনীতির মূল লক্ষ্য। সুতরাং, যে অর্থনীতিতে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সম্বন্ধে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হয় তাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে।
সামষ্টিক অর্থনীতি কি এবং কাকে বলে
অধ্যাপক রাগনার ফ্রিশ ১৯৩৩ সালে সর্বপ্রথম অর্থনীতিতে Micro ও Macro শব্দ দু’টিকে ব্যবহার করেন। সূচনালগ্নে অর্থনীতির কোন শাখা-প্রশাখার অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু ১৯৩৬ সালে ফেইনস তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The General Theory of Employment, Interest and Money’ প্রকাশের পর থেকে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক এ দুই খাতে প্রবাহিত করা হয়।
সামষ্টিক অর্থনীতি
সামষ্টিকের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল. Macro। ইংরেজি Macro শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ Makros হতে উৎপত্তি হয়েছে। Macro শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল বৃহৎ। সামষ্টিক অর্থনীতিতে কোন বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে স্বতন্ত্র আলোচনা না করে দেশের অর্থব্যবস্থা সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে আলোচনা করা হয়। অর্থাৎ, বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিষয়কে যখন সামগ্রিকভাবে আলোচনা করা হয় তখন অর্থনীতির সে শাখাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বলা হয়। সামষ্টিক অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সামগ্রিক বিশ্লেষণ। সামষ্টিক অর্থনীতিকে অর্থব্যবস্থার কোন একক যেমন একজন ভোক্তা বা ক্রেতার আচরণ, একটি ফার্ম বা একটি শিল্পের ভারসাম্য, একটি উপাদানের দাম নির্ধারণ ইত্যাদি আলোচনার পরিবর্তে সময় অর্থব্যবস্থা কিভাবে কাজ করে, তাই বিশ্লেষণ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি অর্থব্যবস্থায় সামগ্রিক চাহিদা ও সামগ্রিক যোগানের দ্বারা কিভাবে সাধারণ দামস্তর নির্ধারিত হয় তাই সামষ্টিক অর্থনীতিতে আলোচনা করা হয়। অধ্যাপক বোল্ডিং সামষ্টিক অর্থনীতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “পৃথক পৃথক পরিমাণের পরিবর্তে এদের সমষ্টি, ব্যক্তিগত আয়ের পরিবর্তে জাতীয় আয়, বিভিন্ন দ্রব্যের দামের পরিবর্তে সাধারণ দামস্তর, ব্যক্তিগত উৎপাদনের পরিবর্তে জাতীয় উৎপাদনই হল সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিপাদ্য বিষয়।”
সুতরাং, সামষ্টিক অর্থনীতি বলতে অর্থনীতি শাস্ত্রের এমন এক দিক বুঝায় যেখানে জাতীয় আয়, বিনিয়োগ, নিয়োগ ইত্যাদি পর্যলোচনা করা হয়। এ অর্থে সামষ্টিক অর্থনীতি দেশের মোট উৎপাদন, মোট জাতীয় আয়, মোট বিনিয়োগ, মোট কর্মসংস্থান, মোট চাহিদা, মোট যোগান, সাধারণ সামান্তর ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। দেশের ভোগ বিনিয়োগ, নিয়োগ ও আয় পর্যালোচনা করে বলে এর আওতায় মল্লা, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, স্থবিরতা ইত্যাদি সংক্রান্ত আলোচনা ও সামষ্টিক অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত।
ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্যসমূহ উল্লেখ কর
আধুনিক অর্থশাস্ত্রের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও সমষ্টিক অর্থনীতি। সংজ্ঞা ও বিষয়বস্তু এবং বিশ্লেষণ পদ্ধতির দিক হতে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, ব্যষ্টিক ও সমষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে ব্যধিক ও সমষ্টিক অর্থনীতির পার্থক্যসমূহ আলোচনা করা হল।
১. সংজ্ঞাগত পার্থক্য : ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও সমষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে সংজ্ঞাগত পার্থক্য রয়েছে। ব্যঠিক বা Micro শব্দের অর্থ হল ক্ষুদ্র। ব্যষ্টিক অর্থনীতি বিস্তৃত ক্ষেত্রের খণ্ডখণ্ড অংশ নিয়ে আলোচনা করে। অপরদিকে, সমষ্টিক বা Macro শব্দের অর্থ হল বৃহৎ বা বিশাল, যা অর্থনীতির বিস্তৃত বা বিশাল ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করে।
২. বিষয়বস্তু ভিত্তিক পার্থক্য : ব্যষ্টিক অর্থনীতি অর্থব্যবস্থার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে আলোচনা করে। এ কারণে ব্যষ্টিক অর্থনীতির পরিধি বা বিষয়বস্তু ক্ষুদ্র ও আংশিক। কিন্তু সমষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থব্যবস্থার সামগ্রিক দিক নিয়ে আলোচনা করা হয় । ফলে সমষ্টিক অর্থনীতির পরিধি বা বিষয়বস্তু অপেক্ষাকৃত ব্যাপক ও বিস্তৃত।
৩. বিভিন্ন অংশের সম্পর্ক : ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক ঘটনাসমূহ পৃথক পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করা হয় বলে তাদের মধ্যে কোন যোগসূত্র থাকে না। কিন্তু সমষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক ঘটনাসমূহ সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এ কারণে সমষ্টিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন বিষয় পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
৪. আংশিক বনাম সামগ্রিক ভারসাম্য পদ্ধতি : ব্যষ্টিক অর্থনীতি ব্যক্তি ফার্ম বা শিল্পের কাজ ব্যাখ্যার জন্য আংশিক ভারসাম্য পদ্ধতি অনুসরণ করে। অপরদিকে, চলকের গতিধারা এবং আচরণ বিশ্লেষণের জন্য সমষ্টিক অর্থনীতি সামগ্রিক ভারসাম্য পদ্ধতি অনুসরণ করে।
৫. অর্থনীতির চিত্র : ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থব্যবস্থার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ আলোচনা করা হয়। ফলে ব্যষ্টিক অর্থনীতির আলোচনায় দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আংশিক বা খণ্ড চিত্র পাওয়া যায়। অন্যদিকে, সমষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থব্যবস্থার সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা হয়। সুতরাং, সমষ্টিক অর্থনীতির আলোচনায় দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়।
৬. যুক্ত চলক : সমষ্টিক অর্থনীতিতে যেসব চলক রয়েছে সেগুলোকে আমরা যুক্তভাবে বিবেচনা করি। যেমন- জাতীয় আয়, ভোগব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যয়ের সমষ্টি (Y = C + 1)। অপরদিকে, ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে একটি চলকের পরিবর্তন অন্য চলকের পরিবর্তনের আলোকে বিবেচনা করা হয়।
৭. অনুমিতিভিত্তিক পার্থক্য : আপেক্ষিক মূল্য কিভাবে নির্ধারণ করা যায় তা সমাধানের সময় ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে সামগ্রিক মূল্য স্থির ধরে নেওয়া হয়। অপরদিকে, সমষ্টিক অর্থনীতিতে যখন সামগ্রিক মূল্য নির্ধারণের বিষয় বিবেচনা করা হয়, তখন আপেক্ষিক মূল্য দেওয়া আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
৮. পদ্ধতিগত পার্থক্য : সাধারণত ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে ধরে নেওয়া হয় মোট উপাদান এবং সাধারণ মূল্য স্তর প্রদত্ত। এর ভিত্তিতে কোন পণ্যের উৎপাদন ও মূল্য কিভাবে নির্ধারিত হয়, তা ব্যষ্টিক অর্থনীতি ব্যাখ্যা করে। অন্যদিকে, সমষ্টিক অর্থনীতিতে দ্রব্যের বণ্টন ও আপেক্ষিক মূল্য স্থির ধরা হয়। এক্ষেত্রে মোট উৎপাদন ও সাধারণ মূল্যকে চলক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এদের নির্ধারণ ব্যাখ্যা করা হয়।
৯. ভারসাম্য বিশ্লেষণ ভিত্তিক পার্থক্ : ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে আংশিক ভারসাম্য বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন- একজন ভোক্তার ভারসাম্য একটি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বা ফার্মের ভারসাম্য ইত্যাদি। পক্ষান্তরে, সমষ্টিক অর্থনীতিতে সামগ্রিক ভারসাম্য বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন- মোট নিয়োগ, মোট জাতীয় আয়, মোট ভোগ বায় ইত্যাদি।
ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি বিশ্লেষণের পারস্পরিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর
ব্যষ্টিক অর্থনীতি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষুদ্রতম অংশ নিয়ে আলোচনা করে। ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাকে ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ হতে আলোচনা করা হয়। অপরদিকে, সামষ্টিক অর্থনীতিতে একটি দেশের অর্থব্যবস্থাকে সামগ্রিকভাবে আলোচনা করা হয়। সামষ্টিক অর্থনীতি দেশের সমগ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে একটি বিষয়বস্তু হিসেবে গণ্য করে এবং এর বিবিধ কার্যাবলি এবং এদের কারণ ও ফলাফলের সমষ্টিগত দিক আলোচনা করে। ব্যষ্টিক অর্থনীতি অনেক সময় অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যথছ বিশ্লেষণ প্রদান করতে পারে না। যেহেতু অর্থনৈতিক সমস্যার ক্ষুদ্রতম অংশগুলো থেকে অর্থনীতির সামষ্টিক চিত্র পাওয়া মোটেই সম্ভব নয়। ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য হবে, সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নাও হতে পারে। যেমন- আর্থিক সংকটের সময় আরও জটিল করে তুলে। অতএব অর্থনীতির ক্ষুদ্র ও অংশবিশেষের আলোচনা দ্বারা দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সমস্যার পরিচয় পাওয়া যায় না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে হলে সামষ্টিক অর্থনীতির একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া ব্যষ্টিক আলোচনা ব্যতীত সামষ্টিক আলোচনাও করা যায় না। যেমন- মোট উৎপাদন সম্পর্কে তথ্য পেতে হলে প্রত্যেকটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রীর পর্যালোচনা করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক উভয় পদ্ধতিই অসমাপ্ত অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজন। যেহেতু ব্যষ্টিক অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির আলোচনা যেমন অসম্পূর্ণ তেমনি সমষ্টিগত অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে ব্যষ্টিক অর্থনীতির আলোচনাও ফলপ্রসূ নয়। ব্যষ্টিয় যোগফলই হল সমষ্টি এবং সমষ্টির অংশ হল ব্যষ্টিক। তাছাড়া উভয়ের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। উভয়েই একে অপরের পরিপূরক। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ স্যামুয়েলসন বলেন, “ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে কোন মৌলিক বিরোধ নেই। উদ্ভয়ই সম্পূর্ণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যদিকে চিন্তা করা নিরর্থক।”
ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতির সমন্বয় আবশ্যক- ব্যাখ্যা কর
অর্থনীতিকে একটি যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করলে সামষ্টিক অর্থনীতির স্বরূপ বুঝা যায়। একটি মোটর গাড়ির যন্ত্রকে যেমন হুইল, গিয়ার, একসিলারেটর, সিলিন্ডার প্রভৃতি ক্ষুদ্রাংশে বিভক্ত করা যায়, তেমনি অর্থনীতির যন্ত্রস্বরূপ সত্ত্বাকেও ক্রেতা, বিক্রেতা, উৎপাদনকারী, উপাদান ইত্যাদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলো অংশে ভাগ করে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করা যায়। অর্থনীতি যন্ত্রের প্রত্যেকটি বিশেষ অংশের এরূপ পৃথক যন্ত্রের সর্বোচ্চ গতি, সামগ্রিক ক্রিয়া সামষ্টিক অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত। পেট্রোল ব্যয়ের পরিমাণ, টিকে থাকার আলোচনা ব্যষ্টিক অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু অর্থনীতি মোটরগাড়ির যাত্রী ও বোঝা বহন করার ক্ষমতা, প্রতি ঘণ্টায় তার সময়কাল, মেরামত ও উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি যেমন যন্ত্রের সামগ্রিক গুণাগুণ ও উৎকর্ষের উপর নির্ভর করে তেমনি মোট ভোগের পরিমাণ, মোট উৎপাদনের পরিমাণ, মোট সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করার ক্ষমতা, সামাজিক ব্যঙ্কের পরিমাণ, সরকারের রাজস্ব নীতি ইত্যাদি অর্থনীতি যন্ত্রের সামগ্রিক কাঠামো ও ব্যবস্থার উপর সামষ্টিক অর্থনীতি নির্ভরশীল।
উপরিউক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, সামষ্টিক আলোচনায় যেমন ব্যষ্টিককে বাদ দেওয়া যায় না। তেমনি ব্যষ্টিক আলোচনায়ও সমষ্টিকে বাদ দিয়ে আলোচনা করা যায় না। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষুদ্রাংশগুলো যেমন আলোচনার বিষয়বস্তু, তেমনি বৃহদাংশ ও ক্ষুদ্রাংশের সমষ্টি। এজন্যে “অর্থনৈতিক ব্যবস্থয় আলোচনায় ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক যে কোন একটির উপর নির্ভর করা চলে না, এর সঠিক বিশ্লেষণের জন্য ব্যক্তিক ও সামষ্টিক উত্তয় পদ্ধতির সমন্বয় আবশ্যক।”