উৎপাদকের উদ্বৃত্ত
উৎপাদনকারী যে মূল্যে দ্রব্যের যোগান দিতে প্রস্তুত থাকে এবং বাস্তবে যে মূল্য পায় তার পার্থক্যকে উৎপাদকের উদ্বৃত্ত বলে। অর্থাৎ, কোন উৎপাদক একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বিক্রয় থেকে যে পরিমাণ মোট আয় পায় এবং ঐ পণ্য উৎপাদন করতে তার যে মোট খরচ পড়ে, এ দু’য়ের পার্থক্যকে উৎপাদকের উদ্বৃত্ত বলা হয়। এক্ষেত্রে খরচ বলতে মোট পরিবর্তনশীল খরচ বা প্রান্তিক খরচের সমষ্টিকে বুঝায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোন উৎপাদক X দ্রব্যের প্রতি একক 14 টাকা বিক্রি করতে প্রস্তুত। কিন্তু বাজারে যদি প্রতি একক X দ্রব্যের বিক্রয় মূল্য 15 টাকা হয়, তাহলে প্রতি একক X দ্রব্য থেকে উৎপাদকের উদ্বৃত্ত হবে (15-14) = 1 টাকা। উৎপাদকের উদ্বৃত্ত কে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা যায়-
উৎপাদকের উদ্বৃত্ত = মোট আয় – মোট পরিবর্তনশীল খরচ। অর্থাৎ,
P.S=TR – TVC
বা, P.S = TR – sum(MC)
উৎপাদকের উদ্বৃত্ত ধারণা পণ্যের যোগান রেখা তথা প্রান্তিক ব্যয় রেখা থেকে পাওয়া যায়। বিভিন্ন দামে উৎপাদক বিভিন্ন পরিমাণে পণ্য বিক্রয় করতে ইচ্ছুক থাকে যা যোগান রেখা দ্বারা প্রকাশ পায়। মনে করি, Po মূল্যে উৎপাদকরা Xo পরিমাণ পণ্য যোগান দিতে প্রস্তুত ছিল, যা থেকে তারা লাভবান হবে। এ লাভের পরিমাণই হচ্ছে উৎপাদকের উদ্বৃত্ত। নিম্নোক্ত সূত্রের মাধ্যমে উৎপাদকের উদ্বৃত্ত নির্ণয় করা যায়-
যেখানে, PS = উৎপাদকের উদ্বৃত্ত
Xo = ভারসাম্য পরিমাণ
Po= ভারসাম্য দাম
S(X) = যোগান অপেক্ষক
উৎপাদকের উদ্বৃত্ত ধারণাটি নিম্নোক্ত চিত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়।
চিত্রে, ভূমি অক্ষে চাহিদা ও যোগানের পরিমাণ এবং লম্ব অক্ষে দাম নির্দেশ করা হয়েছে। চিত্রে, চাহিদা ও যোগান রেখা হচ্ছে যথাক্রমে DD ও SS, এ চাহিদা ও যোগান রেখা পরস্পর e বিন্দুতে ছেদ করায় e বিন্দুতে ভারসাম্য অর্জিত হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারসাম্য দাম নির্ধারিত হয় Po অথচ উৎপাদক P1 টাকায় বিক্রি করতে প্রস্তুত ছিল কিন্তু বাজারে প্রতি এককের বিক্রয়মূল্য P1 হওয়ায় একক প্রতি উৎপাদকের উদ্বৃত্ত হয় P1 Po পরিমাণ । চিত্রে লক্ষ্য করা যায়, Qo পরিমাণ বিক্রির ক্ষেত্রে উৎপাদকের উদ্বৃত হবে P1Poe পরিমাণ, যা ছায়াবৃত্ত অঞ্চল দ্বারা নির্দেশ হয়েছে। সুতরাং, উৎপাদকের উদ্বৃত্ত ধারণা পণ্যের যোগান রেখা তথা প্রান্তিক ব্যয় রেখা দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। যা উপরের চিত্রে দেখানো হয়েছে।