চাহিদা বিধির ৯টি ব্যতিক্রম
সাধারণভাবে চাহিদা বিধি কার্যকর হলেও বিশেষ কতকগুলো ক্ষেত্রে এর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ, চাহিদা বিধি কতকগুলো অনুমিত শর্তের উপর নির্ভরশীল। এসব শর্তের পরিবর্তন হলে বিধিটির ব্যতিক্রম ঘটে। নিম্নে চাহিদা বিধির ব্যতিক্রমসমূহ বর্ণনা করা হল।
১. অভ্যাস ও রুচির পরিবর্তন
মানুষের অভ্যাস ও রুচির পরিবর্তন ঘটলে বিধিটি কার্যকর হয় না। যেমন- বর্তমানে অধিক লোক ঝরনা কলমের পরিবর্তে বলপেন ব্যবহার করে। এমতাবস্থায় ঝরনা কলমের দাম কমলেও বলপেনের চাহিদা কমবে না। অর্থাৎ, মানুষের অভ্যাস ও রুচির পরিবর্তন ঘটলে দ্রব্যের দাম বাড়লে চাহিদা কমে না এবং দাম কমলে চাহিদা বাড়ে না।
২. আয়ের পরিবর্তন
ভোক্তার আয়ের পরিবর্তন ঘটলে চাহিদা বিধিটি কার্যকর হয় না। যেমন- ভোক্তার আয় বৃদ্ধি পেলে কোন দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও এর চাহিদা কমে না। আবার ভোক্তার আয় কমে গেলে দ্রব্যের দাম হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও চাহিদা বৃদ্ধি পায় না।
৩. ভবিষ্যতে দামের পরিবর্তন
ভবিষ্যতে কোন দ্রব্যের দাম কমার সম্ভাবনা থাকলে বর্তমানে তার দাম কমলেও চাহিদা বাড়ে না। আবার ভবিষ্যতে দাম আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকলে বর্তমানে দাম বাড়া সত্ত্বেও চাহিদা না কমে বরং বাড়তে পারে। যেমন- যুদ্ধের সময় অনেক দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও ভবিষ্যতে আরও দাম বৃদ্ধির আশঙ্কায় ভোক্তারা এসব দ্রব্য আরও অধিক পরিমাণে ক্রয় করে থাকে।
৪. বিলাসজাত ও জাঁকজমকপূর্ণ দ্রব্য
বিলাসজাত দ্রব্য ও জাঁকজমকপূর্ণ দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধিটি কার্যকর হয় না। যেমন- হীরক, মণিমুক্তা, দামি গাড়ি, শৌখিন বাড়ি প্রভৃতি বিলাসজাত দ্রব্যের মর্যাদা মূল্য আছে। তাই এসব দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে চাহিদা আরও বৃদ্ধি পায়। আবার এ জাতীয় দ্রব্যের দাম হ্রাস পেলে চাহিদা হ্রাস পায়।
৫. ভোক্তার অজ্ঞতা
ভোক্তা অনেক সময় অজ্ঞতার দরুন দ্রব্যের গুণাগুণ বিচার করতে পারে না। এক্ষেত্রে তারা দ্রব্যের দামকে দ্রব্যের গুণাগুণ হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে কোন দ্রব্যের দাম বাড়লে তারা দ্রব্যটি অধিক পরিমাণে ক্রয় করে। আবার দাম হ্রাস পেলে তারা ক্রয়ের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
৬. বিকল্প দ্রব্য
কোন দ্রব্যের দামের পরিবর্তনের সাথে যদি এর বিকল্প দ্রব্যের দামের পরিবর্তন ঘটে তবে সে ক্ষেত্রে চাহিদা বিধিটির ব্যতিক্রম ঘটে। যেমন- চিনির দাম বাড়ার সাথে সাথে যদি তার বিকল্প দ্রব্য গুড়ের দামও বাড়ে তাহলে চিনির দাম বাড়া সত্ত্বেও তার চাহিদা কমবে না।
৭. গিফেন দ্রব্য
কোন দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে যদি ঐ দ্রব্যের চাহিদা না কমে বৃদ্ধি পায় তবে তাকে গিফেন দ্রব্য বলে। যেমন- মোটা কাপড়, মোটা চাল, ডাল, আলু প্রভৃতি। স্যার রবার্ট গিফেন সর্বপ্রথম এসব দ্রব্যের অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেন। তাই তার নাম অনুসারে এগুলোকে গিফেন দ্রব্য বলে। গিফেন দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধিটির ব্যতিক্রম ঘটে।
৮. অবস্থাগত কারণে
অনেক সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দ্রব্যের দাম কমলেও চাহিদা বাড়ে না। যেমন- কোন এলাকায় কলেরা দেখা দিলে মাছের দাম কমলেও চাহিদা বৃদ্ধি পাবে না। সুতরাং, অবস্থাগত কারণেও চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম ঘটে।
৯. ভোক্তার সঞ্চয় প্রবণতা
ভোক্তার সঞ্চয় প্রবণতা চাহিদা বিধিকে অকার্যকর করে তুলতে পারে। যেমন- কোন দ্রব্যের দাম কমলে ভোক্তা তা বেশি ক্রয় না করে সাশ্রয়ী অংশ সঞ্চয় করে রাখতে পারে। সাধারণত কৃপণ লোকের ক্ষেত্রে এ অবস্থা পরিলক্ষিত হয়।
উপরিউক্ত ক্ষেত্রে চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম দেখা দেয়। তবে বলা যায়, গিফেন দ্রব্যই চাহিদা বিধির প্রকৃত ব্যতিক্রম। এসব দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং দাম হ্রাস পেলে চাহিদা হ্রাস পায়। উপরিউক্ত আলোচনায় আমরা চাহিদাবিধি এবং চাহিদাসূচির, আলোচনা করেছি এবং এদের মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্য উল্লেখ করেছি। এসব পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও চাহিদাবিধি এবং চাহিদাসূচি উভয়ই চাহিদা বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়।