অর্থনীতিতে উৎপাদন বলতে কি বুঝায় | উৎপাদন মানেই উপযোগ সৃষ্টি – ব্যাখ্যা কর

অর্থনীতিতে উৎপাদন বলতে কি বুঝায় | “উৎপাদন মানেই উপযোগ সৃষ্টি"- ব্যাখ্যা কর

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ জীবন ধারণের প্রয়োজনে বিভিন্ন রকম দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করে আসছে এবং তা করছে প্রকৃতির অকৃপণ সহযোগিতার মাধ্যমে। কিন্তু উৎপাদন আসলে কি তা সম্পর্কে অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। তাই অর্থনীতিতে উৎপাদন কি তা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন প্রয়োজন।

উৎপাদন বলতে কি বুঝ

উৎপাদনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Production. সাধারণত উৎপাদন বলতে কোন কিছু সৃষ্টি করাকেই বুঝায়। কিন্তু মানুষ যেমন কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, তেমনি সে কোন কিছু ধ্বংসও করতে পারে না। সে কেবল পারে অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে। অর্থাৎ রূপান্তর করতে। উৎপাদন হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষেত্রে শক্তি ও সম্পদ একত্রিত হয়। অর্থাৎ, ব্যবহারযোগ্য কাঁচামাল ও প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোর সমন্বয় ঘটে এবং তার দ্বারা কোন দ্রব্য বা সেবার উৎপত্তি হয়। অর্থনীতিতে উৎপাদন বলতে বুঝায় উপযোগ সৃষ্টি। মানুষ কোন কিছু সৃষ্টি বা ধ্বংস করতে না পারলেও সে প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের রূপান্তর ঘটিয়ে উপযোগ করতে পারে।

উৎপাদন মানেই উপযোগ সৃষ্টি

মানুষ প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদকে এমনভাবে রূপান্তরিত করে যেন তা ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠে এবং মানুষের প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হয়। যেমন : মানুষ গাছ সৃষ্টি করতে পারে না, কিন্তু গাছ থেকে প্রাপ্ত কাঠ দিয়ে চেয়ার তৈরি করে এবং এ চেয়ার তার প্রয়োজন মিটায়। তাই মানুষ চেয়ার তৈরির মাধ্যমে মূলত উপযোগই সৃষ্টি করল। আর এ কারণেই উৎপাদন বলতে উপযোগ সৃষ্টিই বুঝায়। এখন কোন কিছুতে উপযোগ সংযোজিত হলে তার জন্য মানুষ অতিরিক্ত মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকে। তাই উৎপাদনকে মূল্য সংযোজন (Value added)ও বলা হয়। বাস্তবে মানুষ প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদকে রূপান্তরের মাধ্যমে চার ধরনের উপযোগ সৃষ্টি করতে পারে। নিম্নে বর্ণনা সহ এগুলো পেশ করা হল।

১. আকৃতিগত বা আকারগত উপযোগ (Form Utility)

মানুষ কোন না কোনভাবে অভাব মিটানোর জন্য প্রাকৃতিক উপকরণসমূহের আকার পরিবর্তন করে। এভাবে কোন কিছুর আকৃতি পরিবর্তন করে যে উপযোগ সৃষ্টি করা হয় তাকে আকৃতিগত বা আকারগত উপযোগ বলে। যেমন: গাছ থেকে কাঠ এবং কাঠ থেকে চেয়ার তৈরি। এখানে গাছকে আকৃতিগত পরিবর্তন করে চেয়ার তৈরি করা হয়েছে।

২. স্থানগত উপযোগ (Place Utility)

প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের স্থান পরিবর্তন করে যে উপযোগ সৃষ্টি করা হয় তাকে স্থানগত উপযোগ বলে। যেমন: নদী থেকে বালি শহরে স্থানান্তরিত করে শহরে বিল্ডিং তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বালির স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

৩. সময়গত বা কালগত উপযোগ (Time Utility)

এক মৌসুমের ফসল অন্য মৌসুমে ব্যবহার এবং বিক্রয় অর্থাৎ, কোন কিছুকে ঠিক উপযোগী সময়ে উপস্থিত করে যে উপযোগ সৃষ্টি করা হয় তাকে সময়গত বা কালগত উপযোগ বলে। যেমন: আলুর উৎপাদন মৌসুমে আলুর প্রান্তিক উপযোগ হ্রাস পায়। ফলে দাম কমে। এ আলু কোল্ড স্টোরেজে রেখে দিলে পরে এর উপযোগ বাড়ে এবং দাম বৃদ্ধি পায়।

৪. সেবাগত উপযোগ (Service Utility)

সেবিকা তার সেবাকে, শিক্ষক তার শিক্ষকতা নামক সেবাকে উপযোগী করে তোলে। এক এর শারীরিক ও মানসিক শ্রমের দ্বারা অপরের অভাব পূরণ করা হলে তাকে সেবাগত উপযোগ বলে। যেমন : ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা।

সুতরাং, উপরিউক্ত বিভিন্ন প্রক্রিয়াতে মানুষ যখন উপযোগ সৃষ্টি করে এবং ঐ উপযোগের জন্য মূল্য পাওয়া যায় তখন তাকে উৎপাদন বলে।

Similar Posts