উৎপাদন অপেক্ষক বলতে কি বুঝ | উৎপাদন অপেক্ষক কি

মানুষ কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষ কেবল প্রকৃতি প্রদত্ত বস্তুর মধ্যে রূপগত ও কাঠামোগত পরিবর্তন এনে তা অধিক ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে পারে। উৎপাদন বলতে উপযোগ সৃষ্টিকে বুঝায়। উৎপাদন করতে কতকগুলো উপকরণের প্রয়োজন হয়। এ উপকরণ নিয়োগের উপর উৎপাদনের পরিমাণ নির্ভরশীল। উপকরণ ও উৎপাদনের মধ্যে একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। উৎপাদন অপেক্ষকের মাধ্যমে এ সম্পর্ক প্রকাশিত হয়।

উৎপাদন অপেক্ষক কি

উৎপাদন ক্ষেত্রে উপকরণকে স্বাধীন ও উৎপাদনকে নির্ভরশীল চলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থনীতিতে উৎপাদন ক্ষেত্রে স্বাধীন ও অধীন চলকের মধ্যে যে গাণিতিক সম্পর্ক বিদ্যমান তাকে উৎপাদন অপেক্ষক বলে। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে উৎপাদন অপেক্ষকের সংজ্ঞা প্রদান করেন। নিম্নে এর কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হল।

অর্থনীতিবিদ লিওনটিয়েফ এর মতে, “কোন একটি নির্দিষ্ট উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ফার্ম কি পরিমাণ উপাদান ব্যবহার করে কি পরিমাণ দ্রব্যাদি উৎপাদন করতে পারবে তাই হল উৎপাদন অপেক্ষক।”

অধ্যাপক স্যামুয়েলসন এর মতে, “উৎপাদনের উপকরণসমূহের প্রত্যেক নির্দিষ্ট সমন্বয়ের দ্বারা যে পরিমাণ উৎপাদন করা সম্ভব হয়, তা যে কৌশলগত সম্পর্ক থেকে জানা যায় তাকে উৎপাদন অপেক্ষক বলে।”

অর্থনীতিবিদ Baumol and Blinder এর মতে, “The Production function is a quantitative or mathematical description of the various technical production possibilities faced by a firm.”

উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে উৎপাদন অপেক্ষককে আমরা নিম্নোক্তভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি। নির্দিষ্ট কারিগরী জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে উপাদানের পরিমাণের সাথে উৎপাদনের যে সম্পর্ক তা যখন গাণিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তখন তাকে উৎপাদন অপেক্ষক বলে। গাণিতিক উৎপাদন অপেক্ষককে নিম্নলিখিত আকারে প্রকাশ করা হয়।

Y=f (L, K, Q, V, T)
যেখানে, Y = মোট উৎপাদন
L= শ্রম
K = মূলধন
Q = জমি
V =  কাঁচামাল
T = কারিগরী অবস্থা
f = অপেক্ষক।

সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন অপেক্ষক দুই প্রকার। নিম্নে বর্ণনাসহ প্রকারদ্বয় উল্লেখ করা হল।

১. স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষক

স্থির ও পরিবর্তনীয় উপাদানের যৌথ প্রয়োগের উপর উৎপাদনের নির্ভরশীলতাকে স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষক বলা হয়। Q = f (L, K) এ উৎপাদন অপেক্ষকে যদি K স্থির ও L পরিবর্তনীয় উপাদান হয় তাহলে স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষক হবে Q =f (L, K)।

স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষক

চিত্রে, ভূমি অক্ষে শ্রমের পরিমাণ (L) এবং উলম্ব অক্ষে উৎপাদনের পরিমাণ (Q) দেখানো হয়েছে। এখানে K স্থির। I বিন্দু পর্যন্ত Q ক্রমবর্ধমান হারে এবং I বিন্দুর পরে M বিন্দু পর্যন্ত ক্রমহ্রাসমান হারে বৃদ্ধি পায়।

২. দীর্ঘকালীন উৎপাদন অপেক্ষক

যে উৎপাদন অপেক্ষকে উৎপাদনের সকল উপাদানই পরিবর্তনীয় তাকে দীর্ঘকালীন উৎপাদন অপেক্ষক বলে। দীর্ঘকালীন উৎপাদন অপেক্ষকে অপরিবর্তনীয় কোন উপাদান থাকে না। সকল উপাদানই প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে পরিবর্তন করা যায়। চিত্রানুযায়ী, দীর্ঘকালে উপকরণসমূহের পরিবর্তন ও ক্রমবৃদ্ধির ফলে উৎপাদনও ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পায়। স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষক ও দীর্ঘকালীন উৎপাদন অপেক্ষকের মধ্যে পার্থক্য মূল্য উপাদানসমূহের স্থিরতা ভিত্তিক।

দীর্ঘকালীন উৎপাদন অপেক্ষক