সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক

সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক

সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক

সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। সমাজকর্ম নিয়ে কাজ করতে গেলে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান একান্ত অপরিহার্য। এমনিভাবে সমাজকর্ম নানাদিক দিয়ে মনোবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হল।

১. সংজ্ঞাগত

সমাজকর্ম মানুষকে তার নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্য ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উপযোগী করে তোলে এবং পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতির সাথে খাপখাইয়ে চলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, মনোবিজ্ঞান প্রাণী ও মানুষের আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। অর্থাৎ, মানুষ কোন পরিস্থিতিতে কি রকম আচরণ করে তা নিয়ে আলোচনা করে। এ থেকে বুঝা যায়, সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞান উভয়ই মানুষের কল্যাণকে ঘিরেই কাজ করে। এদিক থেকে উভয়ে সম্পর্কিত।

২. সামঞ্জস্যগত

সমাজকর্ম মানুষকে পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সামাজিক ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করে। আর এ জন্য মানুষের প্রেষণা, বুদ্ধি, আবেগ, ব্যক্তিত্বের কাঠামো ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হয়, যা মনোবিজ্ঞানের সাহায্যে সম্ভব। এ বিবেচনায় সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞান পরস্পর সম্পর্কিত।

৩. লক্ষ্যগত

সমাজকর্ম মানুষের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে সমস্যার কারণ, উৎস, প্রকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হয়। এ কথা সর্বজনবিদিত, সকল সমস্যার মূলে রয়েছে মনস্তাত্ত্বিক কারণ। অতএব, সমস্যার বিশ্লেষণ করতে হলে সমাজকর্মীকে মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হয়। অর্থাৎ, সমাজকর্ম মনোবিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল।

৪. ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যীকরণে

সমাজকর্ম ব্যক্তি স্বাতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে সমাজের কল্যাণে কাজ করে। কেননা, সমাজকর্মে বিশ্বাস করা হয়, প্রত্যেক মানুষই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আর এ জন্য সমাজকর্মী সমাজকর্মের পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তবে তা করতে গিয়ে তাকে মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হয়।

৫. প্রতিভা বিকাশে

সমাজকর্ম মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধনের মাধ্যমে তাকে স্বাবলম্বী করতে চায়। আর এ জন্য ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করতে হয়। কেবল মনোবিজ্ঞানের সাহায্যেই তা সম্ভব। এ বিবেচনায় সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞান সম্পর্কিত।

৬. ক্ষেত্রগত

সমাজকর্ম শিশুকল্যাণ, শ্রমকল্যাণ, স্কুল সমাজকর্ম, চিকিৎসা সমাজকর্ম ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, শিল্প মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের সাহায্য নেয়। এ অর্থে সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞান সম্পর্কিত।

৭. মনস্তাত্ত্বিক

সমাজকর্ম মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে। সমাজকর্ম মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান ও তত্ত্ব বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানকে পরিপূর্ণতা দান করে।

পরিশেষে বলা যায়, সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান। অন্যদিকে, মনোবিজ্ঞান বহুলাংশে মৌলিক বিজ্ঞানের অন্তর্গত। উপরিউক্ত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সমাজ জীবনের সামগ্রিক উন্নয়নে সামাজিক উত্তেজনা হ্রাস, জাতি ও বর্ণগত বৈষম্য দূরীকরণ, সামাজিক সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখতে এবং মানুষের পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করার জন্য, সমাজকর্মীদের মনোবিজ্ঞান ও এর বিভিন্ন শাখার জ্ঞানার্জন করতে হয়। এ প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানী গিডিংস বলেছেন, “সমাজ মানস ও ব্যক্তি মানসের মধ্যে আশ্চর্য সাদৃশ্য রয়েছে। বহু ব্যক্তি মানসের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে সমাজ মানসের সৃষ্টি হয়।”

Similar Posts