মুনাফা কাকে বলে?
সাধারণ অর্থে উদ্যোক্তা বা সংগঠকের আয়কে মুনাফা বলা হয়। ব্যাপক অর্থে উৎপাদন কাজ পরিচালনা ও ঝুঁকি বহনের জন্য সংগঠন যে আয় বা পারিশ্রমিক পায় তাকে মুনাফা বলে। উৎপাদনের জন্য ভূমি, শ্রম ও মূলধন প্রয়োজন হয়। সংগঠক এসব উৎপাদন উপাদানকে একত্র করে উৎপাদন কাজ সম্ভব করে তোলে। উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রয়ের সমুদয় অর্থ সংগঠকের হাতে আসে। এ অর্থ হতে ভূমির খাজনা শ্রমিকের মজুরি এবং মূলধনের সুদ প্রদানের পর সংগঠকের হাতে যা অবশিষ্ট থাকে তাই মুনাফা। সহজ কথায় বলা যায়, দ্রব্যের মোট বিক্রয়লব্ধ আয় হতে মোট উৎপাদন ব্যয় বাদ দিলে যা উদ্বৃত্ত থাকে তাকে মুনাফা বলা হয়। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ মুনাফার বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাদের সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল।
অধ্যাপক মার্শালের মতে, “সংগঠক ব্যবসায় পরিচালনার জন্য যে আয় পায় তাকে মুনাফা বলে।”
অধ্যাপক টাউজিগের মতে, “মুনাফা হল সংগঠকের কর্মক্ষমতার পারিশ্রমিক।”
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ সুমপিটারের মতে, “সংগঠকের উদ্যোগ ও উদ্ভাবনের পুরস্কারই হল মুনাফা।”
অধ্যাপক হলে বলেছেন, “মুনাফা হল সংগঠকের ঝুঁকি গ্রহণের পুরস্কার।”
এসব সংজ্ঞার আলোকে সংক্ষেপে বলা যায়, উৎপাদন কার্যপরিচালনা এবং ঝুঁকি বহনের জন্য সংগঠক বা উদ্যোক্তা যে পারিশ্রমিক পায় তাকেই অর্থনীতিতে মুনাফা বলা হয়।
মুনাফার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলো
মুনাফার কতকগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে মুনাফার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হল।
১. অবশিষ্ট আয় : মুনাফা হল একটা অবশিষ্ট আয়। মোট আয় হতে মজুরি, খাজনা ও সুদ প্রদানের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাই মুনাফা।
২. অনিশ্চিত আয় : ব্যবসায় বাণিজ্যে লাভের কোন নিশ্চয়তা নেই। খাজনা, মজুরি, সুদ ইত্যাদি চুক্তিবদ্ধ আয় হলেও মুনাফাকে ‘চুক্তিবদ্ধ আয়’ হিসেবে গণ্য করা যায় না। সুতরাং, মুনাফা হল একটা অনিশ্চিত আয়।
৩. ঝুঁকি বহনের পুরস্কার : ব্যবসায় কার্যপরিচালনার জন্য ঝুঁকি বহন করতে হয়। কেননা ব্যবসায়ে লাভ না হয়ে লোকসানও হতে পারে। এ ধরনের ঝুঁকি যারা নেয় তাদের পুরস্কার দিতে হয়। সুতরাং মুনাফা হচ্ছে ঝুঁকি বহনের পুরস্কার।
৪. পারিতোষিক শূন্য নয় : খাজনা, মজুরি বা সুদের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে। কিন্তু এসব কখনও শূন্য হতে পারে না। মুনাফার পরিমাণ শূন্য এমনকি ঋণাত্মক বা লোকসানও হতে পারে।
৫. আকস্মিক আয় : মুনাফা একটি আকস্মিক আয়। যুদ্ধ বিগ্রহ, দুর্ঘটনা, হঠাৎ রুচির পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে দ্রব্যের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যায়, তখন দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক মুনাফা লাভ হয়। সুতরাং, আকস্মিক আয় মুনাফার একটি বৈশিষ্ট্য।
৬. উদ্বৃত্ত আয় : উৎপাদন ব্যয় বাদ দিয়ে যে আয় হয় তাই মুনাফা। স্বাভাবিক মুনাফা ছাড়া অতিরিক্ত মুনাফা থাকলে তা উৎপাদন ব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় না। কিন্তু খাজনা, মজুরি ও সুদ উৎপাদন ব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত।
৭. দ্রুত পরিবর্তনশীল : অন্যান্য উপাদানের আয় অপেক্ষা মুনাফা অধিক ও দ্রুত পরিবর্তনশীল। বাণিজ্য চক্রের উঠানামার ফলে কোন বছর হয়তো প্রচুর লাভ হয়, আবার কোন বছর হয়ত প্রচুর ক্ষতি হয়।
৮. মুনাফার তারতম্য : বিনিয়োগ ও ব্যবসায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুনাফার ব্যাপক তারতম্য দেখা যায়। কিন্তু অন্যান্য আয় মোটামুটি নিশ্চিত থাকে এবং তাদের ক্ষেত্রে তারতম্যের মাত্রা খুব বেশি হয় না।
সুতরাং, মুনাফার উপরিউক্ত স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করা যায়। এসব বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে অধ্যাপক টাউজিগ মুনাফাকে ‘এক মিশ্র এবং বিরক্তিদায়ক আয়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।