কোষের প্রকারভেদ (অবস্থান, গঠন, কার্য পদ্ধতিভেদে)

কোষের প্রকারভেদ (Types of cell)

অবস্থান, গঠন, কার্য পদ্ধতিভেদে বিভিন্ন প্রকারের কোষ হয়ে থাকে।

১. নিউক্লিয়াসের গঠনের ভিত্তিতে কোষের প্রকারভেদ

নিউক্লিয়াসের গঠনের ভিত্তিতে কোষকে নিম্নোক্ত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

ক. প্রোক্যারিওটিক কোষ বা আদি কোষ (Prokaryotic cell) : যেসব কোষের নিউক্লিয়াস সুসংগটিত নয় অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের পর্দা থাকে না ফলে নিউক্লিয় পদার্থ সরাসরি সাইটোপ্লাজমের সংস্পর্শে থাকে, তাদেরকে প্রোক্যরিওটিক কোষ বলে। উদাহরণ- ব্যাকটেরিয়া, নীলাভ সবুজ শৈবাল, মাইকোপ্লাজমা ইত্যাদি।

খ. ইউক্যারিওটিক কোষ বা প্রকৃত কোষ (Eukaryatic cell) : যেসব কোষের নিউক্লিয়াসটি সুসংগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিয়প্লাজম, নিউক্লিয় জালক, নিউক্লিওলাস ইত্যাদি থাকে তাদেরকে ইউক্যারিওটিক কোষ বলে। উদাহরণ- স্নায়ু কোষ, পেশী কোষ ও সকল প্রকার উন্নত প্রাণীকোষ ও উদ্ভিদকোষ।

২. নিউক্লিয়াসে উপস্থিতর অবস্থানভেদে কোষের প্রকারভেদ

কোষের নিউক্লিয়াসে উপস্থিত ক্রোমোজোম সংখ্যার উপর ভিত্তি করে কোষের প্রকারভেদ ও কোষের নিউক্লিয়াসে উপস্থিত ক্রোমোজোম সেট সংখ্যার উপর ভিত্তি করে কোষের প্রকারভেদ নিম্নে বর্ণিত হল।

ক. ডিপ্লয়েড কোষ (Diploid cell) : যেসব কোষের নিউক্লিয়াসে দুই সেট ক্রোমোজোম (2n) বিদ্যমান তাদেরকে ডিপ্লয়েড কোষ বলে। উদাহরণ- দেহকোষ বা জনন মাতৃকোষ ।
খ. হ্যাপ্লয়েড কোষ (Haploid cell) : যেসব কোষের নিউক্লিয়াসে এক সেট ক্রোমোজোম (n) থাকে তাদেরকে হ্যাপ্লয়েড কোষ বলে । মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে হ্যাপ্লয়েড কোষ সৃষ্টি হয়। উদাহরণ- শুক্রাণু ও ডিম্বাণু কোষ।

৩. কার্যভেদে বিভিন্ন অঙ্গের কোষের প্রকারভেদ

বিভিন্ন অঙ্গের কোষের কার্যাদির উপর ভিত্তি করে কোষের প্রকারভেদ নিম্নে বর্ণিত হল।

ক. দেহকোষ (Somatic cell) : প্রাণীদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনকারী কোষগুলিকে দেহকোষ বলে। এসব কোষের নিউক্লিয়াসে দুই সেট ক্রোমোজোম (2n) থাকে। এরা মাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভাজিত হয়। উদাহরণ- যকৃত কোষ, পেশী কোষ ইত্যাদি।

খ. জনন কোষ (Reproductive cell) : যৌন প্রজননকারী প্রাণীদের দেহে যে পুরুষ ও স্ত্রী জনন কোষ উৎপন্ন হয়। তাদেরকে জনন কোষ বলে। জনন কোষ হ্যাপ্লয়েড বা এক সেট ক্রোমোজোম বিশিষ্ট। মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে জনন কোষ সৃষ্টি হয় । উদাহরণ- শুক্রাণু ও ডিম্বাণু।

গ. স্নায়ুকোষ (Nerve cell) : যেসব কোষ এক্সন, ডেনড্রাইট ও কোষদেহের সমন্বয়ে গঠিত হয় এবং উদ্দীপনা গ্রহণ ও উপযুক্ত প্রতিবেদন সৃষ্টি করে তাকে স্নায়ু কোষ বলে। কাজ ও স্নায়ু কোষ বিভিন্ন অঙ্গের কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে, স্মৃতি সংরক্ষণ করে।

ঘ. গ্রন্থিকোষ (Gland cell) : যেসব কোষ বা কোষগুচ্ছ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় জৈব ও অজৈব রাসায়নিক পদার্থ যেমন- উৎসেচক, মাতৃদুগ্ধ, হরমোন, মিউকাস, লালা ইত্যাদি নিঃসরণ করে এবং প্রাণীদেহে নির্দিষ্ট জৈবিক ও রাসায়নিক কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে, তাদেরকে গ্রন্থি কোষ বলে। কিছু কিছু গ্রন্থি কোষ নিঃসৃত পদার্থ শিকার ধরা বা আত্মরক্ষার কাজ করে থাকে। উদাহরণ- যকৃত কোষ, বিভিন্ন ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে।

ঙ. তরুণাস্থি কোষ (Chondrocyte) : যেসব কোষ নিঃসৃত বস্তু দ্বারা তরুণাস্থি তৈরি হয়, তাদেরকে তরুণাস্থি কোষ বলে। উদাহরণ- তরুণাস্থি মাছের হাড় সৃষ্টিকারী তরুণাস্থি কোষ।

চ. অস্থি কোষ (Osteoblast) : যেসব কোষ নিঃসৃত বস্তু দ্বারা অস্থি গঠিত হয় তাদেরকে অস্থিকোষ বলে। উদাহরণ- কঠিনাস্থি মাছের অস্থি গঠনকারী অস্থিকোষ।

কাজ : তরুণাস্থি কোষ তরুণাস্থি সৃষ্টি করে ও অস্থি কোষ কঠিনাস্থি সৃষ্টি করে ।

ছ. সংবেদী কোষ (Sensory cell) : প্রাণীদের বিভিন্ন অঙ্গে অবস্থিত যেসব কোষে বিশেষ ধরনের উদ্দীপনা গৃহীত হয়ে স্নায়ুতন্ত্রে প্রেরিত হয় তাদেরকে সংবেদী কোষ বলে। উদাহরণ – চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বকের সংবেদী কোষ।
কাজ : পরিবেশ থেকে বিশেষ ধরনের উদ্দীপনা গ্রহণ করে স্নায়ুতন্ত্রে প্রেরণ করে।

জ. চর্বিকোষ (Adipos cell) : প্রাণীদেহে যেসব কোষ বিশেষভাবে রূপান্তরিত হয়ে দেহের তাপ সংরক্ষণ ও মাংসপেশীকে আঘাত থেকে রক্ষা করে তাদেরকে চর্বি কোষ বলে।

কাজ : চর্বিকোষে খাদ্য সঞ্চিত থাকে।

ঝ. রক্ত কোষ (Blood cell) : রক্তরসে ভাসমান বিভিন্ন ধরনের যেসব কোষ O2 পরিবহন, দেহের প্রতিরক্ষা ও রক্ততঞ্চন ঘটাতে সাহায্য করে তাদেরকে রক্ত কোষ বলে। উদাহরণ- শ্বেত কণিকা, লোহিত কণিকা, অনুচক্রিকা।

কাজ : লোহিত কণিকা O, পরিবহন করে। শ্বেত কণিকা দেহকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে এবং অনুচক্রিকা কোথাও কেটে গেলে রক্ত তঞ্চনে সাহায্য করে।

ঞ. পেশী আবরণী কোষ (Epithelial cell) : যে সমস্ত কোষ কোন অঙ্গের আবরণ সৃষ্টি করে তাদেরকে পেশী আবরণী কোষ বলে। উদাহরণ- Hydra দেহাবরণে অবস্থিত পেশী আবরণী কোষ।
কাজ : কোন অঙ্গের আবরণ সৃষ্টি করে।

চ. পেশী কোষ (Muscular cell) : যেসব কোষ দেহের মাংসপেশী গঠন করে ও যাদের সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে দেহের অঙ্গ সঞ্চালন করে, তাদেরকে পেশী কোষ বলে। উদাহরণ- হৃদ্‌পেশী কোষ। কাজ : পেশী কোষের সংকোচন ও প্রসারণে দেহ চলাচল করে, পরিপাক নালীর মধ্য দিয়ে খাদ্য বস্তু ও হৃদপিণ্ডের মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচল করে।

Similar Posts