প্রাণিবিজ্ঞান

দ্বিপদ নামকরণ কি, কাকে বলে এবং এর নিয়মাবলি | ত্রিপদ নামকরণ কি

1 min read

প্রাণী নামকরণ কি (Zoological nomenclature) : Nomenclature শব্দটি মূলত ল্যাটিন শব্দ nomen নাম ও calare ডাকা থেকে উদ্ভূত। কোনো বিশেষ প্রাণীকে শনাক্তকরণের জন্য শ্রেণিবিন্যাসের কিছু নিয়মকানুনু ও পদ্ধতি অনুসারে প্রাণীর প্রতিটি প্রজাতির যে বিশেষ নাম প্রদান করা হয় তাকে নামকরণ বা নমতত্ত্ব (Nomenclature) বলে। প্রকৃতপক্ষে নামকরণের মাধ্যমে কোন অপরিচিত প্রাণীর পরিচিতি ঘটে। কোন প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম (scientific name) যেমন প্রাণীবিজ্ঞানীদের কাছে তাকে পরিচিত করে তেমনি সারা পৃথিবীর লোকের কাছে তার পরিচিতি প্রকাশ করে। কোন প্রাণীর স্থানীয় নাম আঞ্চলিক নাম, বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নাম একটি সার্বজনিন পরিচিতির ব্যাত্যয় ঘটায়। এজন্য অনন্যতা, বিশ্বজনীনতা ও নামের স্থায়িত্বদানের লক্ষ্যে প্রাণীর নামকরণের নীতিমালা রচনা করা হয়। প্রাণী নামকরণ বিষয়ক নীতিমালা প্রাণী নামকরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংহিতা (International code of zoological nomenclature) নামে পরিচিত।

প্রাণীরনামকরণের আন্তর্জাতিক সংহিতটিতে একটি মুখবন্ধ। ১৮টি অনুচ্ছেদ ৮৬টি ধারা (Article), ৫টি পরিশিষ্ট (appendix), ১টি পরিভাষার তালিকা, ১টি বিস্তারিত সূচিপত্র রয়েছে। এটা ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ৬ নভেম্বর লন্ডনে অনুষ্ঠিত পঞ্চদশ আন্তর্জাতিক প্রাণিবিজ্ঞান কংগ্রেসের অধিবেশনে অনুমোদন লাভ করে এবং ঐ দিন থেকে কার্যকর হয়।

দ্বিপদ নামকরণ কি এবং কাকে বলে

জীবের নামকরণের আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী গণ ও প্রজাতি নামের দুটি পদ ব্যবহার করে প্রাণীদের যে নামকরণ করা হয় তাকে দ্বিপদ নামকরণ (Binomial Nomenclature) বলে। এভাবে সৃষ্ট নামই হল কোনো প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম (Scientific name)। Carolaus Linneaous কর্তৃক প্রস্তাবিত দুটো পদ দ্বারা কোন জীবের বিজ্ঞানসম্মত নামকরণের রীতিকে দ্বিপদ নামকরণ বলা হয়। লিনিয়াস তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Systema Nature’ নামক গ্রন্থের ১০ম সংস্করণে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিপদ নামকরণের কাঠামো প্রণয়ন করেন ও এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাই লিনিয়াসকে দ্বিপদ নামকরণের জনক বলা হয়। দ্বিপদ নামকরণের ১ম পদটি গণ (Genus) এবং ২য় পদটি প্রজাতি (Species)। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় রুই মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম Labeo rohita এখানে Labeo শব্দটি গণ এবং rohita শব্দটি প্রজাতি। গণ নামটি বিশেষ্য ও প্রজাতি নামটি বিশেষণ।

দ্বিপদ নামকরণের নিয়মাবলি (Rules of Binomial Nomenclature)

প্রাণীর নামকরণের নিয়মগুলো প্রাণী নামকরণের আন্তর্জাতিক সংস্থা (International Commission on Zoological Nomenclature) প্রণয়ন করে থাকে এবং এ নিয়মগুলো আন্তর্জাতিক প্রাণী নামকরণ সংহিতায় (International Code of Zoological Nomenclature) লিপিবদ্ধ করা হয়। ১৯০১ সালে নিয়মগুলো প্রথম প্রকাশিত হয় যা ১৯৬১ সালে সংশোধনের পর ১৯৬৪ সালে গৃহীত হয়। সংহিতার মুখ্য অংশে একটি মুখবন্ধ এবং ১৮টি অনুচ্ছেদে ৮৮টি ধারা সংযুক্ত আছে। সংহিতার ধারাগুলোর আলোকে প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম গঠন করা হয়। সংহিতার উদ্দেশ্য প্রাণীদের বৈজ্ঞানিক নামের স্থায়ীত্ব ও সর্বজনীনতা রক্ষা করা এবং সেই সাথে প্রতিটি নামের অনন্যতা (Uniqueness) ও স্পষ্টতা (distinctness) নিশ্চিত করা।

নামকরণ সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিয়মাবলি নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • ১) প্রত্যেক প্রাণীর একটি বৈজ্ঞানিক নাম থাকবে এবং তার দুটি অংশ থাকবে; একে দ্বিপদ নামকরণ বলা হবে। তবে তিনটি অংশ সম্বলিত নাম হলে তাকে ত্রিপদ নামকরণ বলা হবে।
  • ২) দ্বিপদ নামের প্রথম অংশটি ঐ প্রাণীর গণ নাম ও দ্বিতীয় অংশটি প্রজাতি নামের নির্দেশক। কিন্তু ত্রিপদ নামের প্রথম অংশটি গণ নাম দ্বিতীয় অংশটি প্রজাতি নাম এবং তৃতীয় অংশটি উপপ্রজাতির নামের নির্দেশক।
  • ৩) প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম অবশ্যই ল্যাটিন বা লাটিনকৃত (latinized) শব্দ দ্বারা গঠিত হতে হবে।
  • ৪) বৈজ্ঞানিক নাম ছাপার অক্ষরে হলে সর্বদা ইটালিক (ডান দিকে বাঁকা করে) হরফে হবে (যেমন-Panthera tigris, বাঘ)। তবে হাতে লিখলে ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার করতে হবে এবং প্রতিটি অংশের নিচে (গণ, প্রজাতি ও উপপ্রজাতি) আলাদা আলাদাভাবে দাগ টানতে হবে। যেমন, Panthera tigris বা Naja naja kauthia (পদ্ম গোখরা)।
  • ৫) দ্বিপদ নামে গণ নামটি বিশেষ্য এবং এর প্রথম অক্ষটি অবশ্যই ইংরেজি বড় হরফে (capital letter) লিখতে হবে এবং প্রজতি নামটি বিশেষণ যার সবটুকু অংশ ছোট হরফে (small letter) লিখতে হবে।
  • ৬) আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নালে সর্বপ্রথম প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক নামই স্বীকৃতি পাবে।
  • ৭)যে বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম কোনো প্রাণীর বিজ্ঞানসম্মত বর্ণনা দিবেন, তার নাম বা তার নামের অংশ উক্ত প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নামের শেষে সংযোজিত হবে। যেমন- Homo sapiens L.
  • ৮) কখনোই একই নাম দুটি প্রাণীর ক্ষেত্রে কিংবা দুটি নাম একটি প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে না ।

ত্রিপদ নামকরণ কি

অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম দ্বিপদ হয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে একই গণের অন্তর্ভুক্ত প্রজাতিগুলির মধ্যে ভিন্নতা দেখা দিলে তাদেরকে উপ প্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হয়। যদিও একই প্রজাতিভুক্ত উপ-প্রজাতিগুলির মধ্যে যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে প্রাণী বা উদ্ভিদের তিন পদযুক্ত বৈজ্ঞানিক নামকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। নামকরণের আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী গণ, প্রজাতি ও উপ-প্রজাতি নামের তিনটি পদ ব্যবহার করে প্রাণীদের যে নামকরণ করা হয় তাকে ত্রিপদ নামকরণ (Trinomial Nomenclature) বলে। পাখি বিজ্ঞানী এইচ. শ্লিগেল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে প্রাণী নামতত্ত্বে Sub-species শব্দটি প্রবর্তন করে ত্রিপদ নামকরণের সূচনা করেন।

উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় সিংহের বৈজ্ঞানিক নাম Panthera leo ভারতের সিংহের সাথে আফ্রিকা বা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সিংহের চারিত্রিক পার্থক্য দেখা যায়। সেজন্য ভারতীয় সিংহের বিজ্ঞানসম্মত নাম ৩টি পদের সমন্বয় গঠিত হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে সিংহের ত্রিপদ নাম হয় Panthera leo persia এখানে গণ panther প্রজাতি leo ও উপ-প্রজাতি persica I

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x