প্রাণিবিজ্ঞান

পরিপাক তন্ত্র কি, কাকে বলে এবং চিত্রসহ বর্ণনা

1 min read

পরিপাক তন্ত্র কি, কাকে বলে

প্রাণীদেহে যে সকল অঙ্গের সমন্বয়ে খাদ্যবস্তু গ্রহণ, পরিপাক, পাচিত খাদ্যসার পরিশোষণ এবং খাদ্যের অপাচ্য অংশ দেহের বাইরে পরিত্যক্ত হয়, সেসব অঙ্গ সমষ্টিকে একত্রে পরিপাকতন্ত্র বলে। যেমন- পৌষ্টিক নালীর বিভিন্ন অংশ ও পরিপাক গ্রন্থি নিয়ে মানুষের পরিপাক তন্ত্র গঠিত।

পৌষ্টিক নালী (Alimentary canal)

মানুষের মুখছিদ্র থেকে শুরু করে পায়ুছিদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত নালীকে পৌষ্টিক নালী বলে। নিম্নে পৌষ্টিক নালীর বিভিন্ন অংশ বর্ণনা করা হল :

১. মুখছিদ্র

নাসারন্ধ্রের নিচে দুই ঠোঁট দ্বারা পরিবেষ্টিত অনুগ্রস্থ ছিদ্রকে মুখছিদ্র বলে। মুখছিদ্রের মাধ্যমে খাদ্যবস্তু গৃহীত হয়।

২. মুখবিবর

মুখছিদ্রের পরবর্তী, ঊর্ধ্ব চোয়াল ও নিম্নচোয়ালের মধ্যবর্তী প্রশস্ত গহ্বরটিকে মুখগহ্বর বা মুখবিবর বলে। মুখগহ্বরে খাদ্যবস্তু কর্তন, চর্বণ, পেষণ ও পিচ্ছিল হয়। ফলে খাদ্যবস্তু গলাধঃকরণে সহজ হয়। মুখবিবরে খাদ্যবস্তু লালারসের সাথে মিশ্রিত হয়।

৩. গলবিল বা ফ্যারিংক্স

এটি মুখবিবরের পরবর্তী সরু, ফানেল আকৃতি অংশ। এটি অন্ননালী পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মাধ্যমে খাদ্য অন্ননালীতে পৌঁছে। শ্বাসনালীর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

৪. অন্ননালী

গলবিলের পর থেকে পাকস্থলি পর্যন্ত নলাকার নালীকে অন্ননালী বলে। এর সাহায্যে খাদ্য পাকস্থলীতে যায়।

৫.পাকস্থলী

অন্ননালীর পরবর্তী থলে আকৃতির, পুরু প্রাচীর বিশিষ্ট পেশীময় অংশকে পাকস্থলী বলে। এটি দুটি অংশে বিভক্ত। যথা— নিকটবর্তী প্রশস্ত অংশকে কার্ডিয়ার পাকস্থলী এবং দূরবর্তী সরু অংশকে পাইলোরিক পাকস্থলী বলে। পাইলোরিক পাকস্থলী পেছনে কার্ডিয়াক পাকস্থলী ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনামে মুক্ত থাকে। পাকস্থলী ও অন্ননালির সংযোগস্থল এবং পাইলোরিক পাকস্থলী ও ডিওডেনামের সংযোগস্থলে যথাক্রমে কার্ডিয়াক স্ফিংটার ও পাইলোরিক স্ফিংটার নামক পেশীবলয় থাকে। পাকস্থলীর প্রাচীরের মিউকোসা স্তরে অসংখ্য গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থাকে। পাকস্থলীতে খাদ্যবস্তু জীবাণুমুক্ত হয় এবং কতিপয় খাদ্যের অংশবিশেষ পরিপাক হয়।

চিত্রঃ মানুষের পরিপাকতন্ত্র
চিত্রঃ মানুষের পরিপাকতন্ত্র

৬. ক্ষুদ্রান্ত্র

পাইলোরিক স্ফিংটারের পর থেকে বৃহদন্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত প্যাচানো নলাকার অংশকে ক্ষুদ্রান্ত্র বলে। এটি ৩টি অংশে বিভক্ত, যথা –

(ক) পাকস্থলী পরবর্তী ‘U’ আকৃতি অংশের নাম ডিওডেনাম,

(খ) মধ্যবর্তী অংশের নাম জেজুনাম এবং

(গ) শেষ অংশের নাম ইলিয়াম। ইলিয়ামের অন্তর্গাত্রে ভিলাই নামক অসংখ্য অভিক্ষেপ থাকে। ক্ষুদ্রান্ত্রে খাদ্য পচিত হয় এবং এর প্রাচীর দ্বারা খাদ্যসার শোষিত হয়।

৭. বৃহদন্ত্র

ইলিয়ামের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ইলিওকোলিক স্ফিংটার থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত মোটা নলাকার ও খাঁজযুক্ত অংশকে বৃহদন্ত্র বলে । এটি ৩টি অংশে বিভক্ত, যথা-

(ক) ক্ষুদ্রান্ত সংলগ্ন সংক্ষিপ্ত থলির মত উল্লম্ব অংশের নাম সিকাম। এর নিম্ন প্রান্তে অ্যাপেনডিক্স নামক ক্ষুদ্র নলাকার বদ্ধ থলি থাকে।

(খ) সিকাম পরবর্তী লম্বা নলাকার অংশের নাম কোলন যার ৪টি অংশ, আরোহী কোলন, অনুপ্রস্থ কোলন, অবরোহী কোলন ও সিগময়েড কোলন।

(গ) কোলন পরবর্তী থলির মত সংক্ষিপ্ত অংশকে মলাশয় বলে। বৃহদন্ত্রে মল তৈরি হয়, পানি ও লবণ শোষিত হয় এবং মলাশয় অংশে সাময়িকভাবে মল জমা থাকে।

৮. পায়ু

শ্রোণী অঞ্চলে অবস্থিত মলাশয় যে ছিদ্রপথে বাইরে উন্মুক্ত থাকে তাকে পায়ু বলে। পায়ুপথে দুটি স্ফিংটার পেশী বলয় থাকে । পায়ু ছিদ্ৰ মলত্যাগে অংশ নেয়।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x