সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলারের নাম [আপডেট ২০২৩]

বহুল পরিচিত, আলোচিত ও জনপ্রিয় একটি খেলার নাম ফুটবল। ফুটবল ছোট থেকে বড় সবাই-ই পছন্দ করে। প্রত্যেক দর্শক নিজেদের দলকে এবং পছন্দের প্লেয়ারকে সাপোর্ট করে। ইতিহাসে অনেক ব্যাক্তিই ফুটবল খেলা দিয়ে তারকা বনে গেছেন। স্থান করে নিয়েছে খেলা ভক্তদের হৃদয়ে।

খেলার দক্ষতা, যোগ্যতা দিয়ে অর্জন করেছে সেরা ফুটবলারের খেতাব। হ্যাঁ, আজ আপনাদেরকে জানাবো ইতিহাসের সেরা ১০ ফুটবলার ওরফে নক্ষত্র সম্পর্কে। প্রথমেই একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেরা ১০ ফুটবলারের নামের তালিকা-

১. পেলে

পেলে ব্রাজিলের একজন প্রফেশনাল ফুটবলার। তিনি ব্রাজিলের প্রতিনিধি হয়ে মিডফিল্ডে আ্যটাকিং প্লেয়ার হিসেবে খেলে। তার জন্ম ২৩শে অক্টোবর,১৯৪০ সালে। ৮২ বছর বয়সী এই পেলে ব্রাজিলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং বিশ্বকাপজয়ী।

তিনি তিনবার ফিফা বিশ্বকাপ জয় করে ইতিহাসে সেরা ফুটবলারের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। তিনি তাঁর খেলার দক্ষতা দিয়ে ব্রাজিলের সকল সাপোর্টারদের মনে তারকা হয়ে আছেন। তিনি ব্রাজিল জাতীয় দলের পক্ষে ৯২ ম্যাচে ৭৭ গোল করেছেন।

২.দিয়াগো ম্যারাডোনা

ফুটবল মানেই ম্যারাডোনা, ম্যারাডোনা মানেই ফুটবল। ফুটবল ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম ম্যারাডোনা। যার জন্ম ৩০শে অক্টোবর ১৯৬০ সালে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার ক্লাবের হয়ে প্রফেশনালি খেলতে শুরু করেন।

ম্যারাডোনাকে আর্জেন্টিনারা গড অব ফুটবলার মনে করেন। শুরু থেকেই ম্যারাডোনর পায়ের শৈল্পিক গুণ এবং সম্মোহনী শরীর নিয়ে বিশ্বের মন জয় করে নিয়েছেন। বহুবার তিনি এসেছেন বিতর্কে তাঁর ব্যাক্তিজীবন নিয়ে, তবুও তাঁর ভক্তরা তার খেলার জাদুতে মজেছেন।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে হাত দিয়ে গোল দিয়ে জয়ের শিরোপা এনে দেয় আর্জেন্টিনাকে খেলার জাদুকরের ভুমিকায় থেকে। দুর্ভাগ্যক্রমে, এই তারকার জীবনপ্রদীপ নিভে যায় ২৫ নভেম্বর, ২০২০ সালে।

৩. লিওনেল মেসি

লিওনেল মেসি একজন আর্জেন্টাইন পেশাদার ফুটবলার যিনি ফরাসী ক্লাব পিএসজি এবং আর্জেন্টিনার একজন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় এবং জাতীয় ফুটবলার হিসেবে খেলে।

বর্তমানে তিনি আর্জেন্টিনার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছে। যার জন্ম ২৪শে জুন, ১৯৮৭ সালে। তিনি তাঁর খেলার দক্ষতার মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম। মেসিকে বলা হয় খেলার এলিয়েন।
তার সাফল্যের ঝুলিতে রয়েছে ৭টি ব্যালন ডি’অর যা বিশ্বরেকর্ড হয়ে রয়েছে। মেসির কর্মজীবনে মোট গোলের সংখ্যা রয়েছে ৭৫০ অধিক। এসব অর্জন তাকে একজন সেরা ফুটবলার হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

৪. ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো একজন প্রফেশনাল পর্তুগিজ খেলোয়ার যিনি ১০০টি আন্তর্জাতিক গোল করা দ্বিতীয় পুরুষ এবং প্রথম ইউরোপীয়। তাকে বলা হয় স্টাইলিশ ফুটবলার। ইউরোপীয়ানদের মধ্যে রোনালদোই রেকর্ড সংখ্যক গোল স্কোরার।

তাঁর ক্যারিয়ারের পুরোটা সময়ে ইউরোপে রাজত্ব করে যাচ্ছে। তার সফলতার ঝুলিতে এযাবৎ পাঁচটি ব্যালন ডি’অর এবং চারটি গোল্ডেন শু জমা হয়েছে যা একটি অন্যতম রেকর্ড একজন ইউরোপীয় খেলোয়াড় হিসেবে। তিনি প্রিমিয়ার লীগ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং এবং পর্তুগাল জাতীয় দলের ফরওয়ার্ড হিসেবে খেলে।
তিনি তাঁর কর্মজীবনে এপর্যন্ত ৩২টি প্রধান সারির শিরোপা জয় করেছেন যেগুলো তাকে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। আশা রাখা যায়, তিনি বিশ্বের প্রথম ১০জন ফুটবলারের তালিকায় সবসময়ই থাকবে।

৫. নেইমার দা সিল্ভা স্যান্তোস জুনিয়র

নেইমার দা সিল্ভা স্যান্তোস জুনিয়র যিনি সবার কাছে সংক্ষেপে নেইমার নামে পরিচিত। যিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯২ সালের ৫ই ফ্রেব্রুয়ারি। নেইমার একজন ব্রাজিলিয়ান পেশাদার ফুটবলার, যিনি ব্রাজিলের জাতীয় দলের আ্যটাকিং প্লেয়ার হিসেবে খেলে থাকে এবং ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের হয়ে খেলে।

তাঁর ক্যারিয়ারে মাত্র ১৯ বছর বয়সে দক্ষিণ আমেরিকার পর পর দুবছর বর্ষসেরা ফুটবলার হিসেবে নির্বাচিত হোন। ২০১১ সালে তিনি ফিফা ব্যালন ডি’অরের জন্য মনোনিত হন এবং সেখানে দশম স্থান অর্জন করেন। তাঁর খেলার ধরন যেমন-গতি,ত্বরণ,বল কাটানো এবং দুই পায়ের শক্তি তাকে বিশ্বের কাছে সুপরিচিতি দিয়েছে। বলা যায়, নেইমার তরুণ প্রজন্মের এক সম্ভাবনাময় ফুটবলার এবং সেরা ১০ জনের একজন।

৬.লুকা মদ্রিচ

লুকা মদ্রিচ ক্রোয়েশিয়ান পেশাদার ফুটবলার, যিনি বর্তমানে স্পেনের ফুটবল শীর্ষের লা লিগার ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ এবং ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দলের মিডফিল্ডের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন। পাশাপাশি, ক্রয়োশিয়ার জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব পালন করছেন।

তাঁর ক্যারিয়ারের সাফল্যের ঝুলিতে রয়েছে ফিফ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বল, দিনামো জাগরেবের এবং রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার মোট ২২টি শিরোপা অর্জন। এছাড়াও, ২০০৭-২০২০সাল পর্যন্ত ৯বার বর্ষসেরা ফুটবলার হিসেবে নির্বাচিত হন,যেটি একটি অন্যতম রেকর্ড।
তাছাড়া, ২০১৮ সালের জলাৎকো দালিচের অধীনে বিশ্বকাপের রানার আপ হয়েছেন। তাঁর ক্যারিয়ারের এত এত সাফল্য এবং খেলার অসাধারণ দক্ষতা তাকে ইতিহাসের সেরাদের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

৭.রবের্ত লেভানদোভোস্কি

রবের্ত লেভানদোভোস্কি একজন পোলিশ পেশাদার ফুটবলার, যিনি স্পেনের ফুটবলের শীর্ষ স্তর লা লিগার বার্সেলোনা এবং জাতীয় দলের হয়ে খেলেন। এছাড়াও পোল্যান্ড জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব পালন করছেন।

তাঁর ক্যারিয়ারে তিনি ২০১৯-২০২০ মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখের উয়েফা চ্যাম্পিয়ানস লীগও ট্রেবল জয়ের প্রতিযোগিতাগুলোর সর্বোচ্চ গোল স্কোরার। তাঁর খেলার দক্ষতাও তাকে সেরা ১০ আসনের একজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

৮.টনি ক্রুস

টনি ক্রুস জার্মান পেশাদার ফুটবলার, যিনি বর্তমানে স্পেনের লা লিগার ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে একজন মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেন। তিনি তাঁর খেলার দক্ষতার জন্য পরিচিত হয়েছেন। তিনি ২০১৪ সালের জার্মানির হয়ে ফিফা বিশ্বকাপের শিরোপা অর্জন করেছেন।

এছাড়া, ব্যাক্তিগতভাবে ২০০৭ ফিফা অনুর্ধ্ব -১৭ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল ও ব্রোঞ্জ শু এবং দলগতভাবে এযাবৎ ২৩টি শিরোপা জয় করেছেন। এছাড়াও, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে সেরা ফুটবলার হিসেবে নির্বাচিত হন। এসব অর্জন তাঁকে বিশ্বের কাছে এনে দিয়েছে খ্যাতি।

৯. মিশেল প্লাতিনি

মিশেল প্লাতিনি একজন সাবেক ফরাসি ফুটবলার, ম্যানেজার এবং ২০০৭ সাল হতে উয়েফার (ইউনিয়ন অব ইউরোপীয় ফুটবল আ্যসোসিয়েশন) প্রেসিডেন্ট। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন আশির দশকের একজন সুদক্ষ খেলোয়াড়। প্লাতিনি ১৯৮৩,১৯৮৪ ও১৯৮৫ সালে প্রথম একটানা তিনবার ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন এবং ফিফার প্লেয়ার লিস্টে সপ্তম স্থানে ছিলেন।

১০.রোনালদো নাজারিও

রোনালদো নাজারিও একজন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার যিনি মাঠে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে। তাঁর সমসাময়িক সময়ে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। রোনালদো বড় রোনালদো বা R9 পরিচিত সবার কাছে।

রোনালদো ব্রাজিলের পক্ষ হয়ে ৯৭ টি আন্তর্জাতিক খেলায় অংশগ্রহণ করেন এবং ৬২ টি গোল করেন।২০০৬ সালে ফিফা বিশ্বকাপে রোনালদো ১৫ তম গোল করে বিশ্ব ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল স্কোরার হিসেবে পরিচিত হোন।
তাঁর সাফল্যের ঝুলিতে রয়েছে দুইটি ব্যালন ডি’অর এবং তিনবার বর্ষসেরা ফিফা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হোন। তাঁর ক্যারিয়ারে তিনি তিনবার ফিফা বিশ্বকাপ অর্জন করেছেন। তাই, তিনি একজন ইতিহাসের সেরা ফুটবলার।

শেষ কথা

আশা করি, আপনাদেরকে জানাতে পেরেছি ফুটবল জগতের সেরা ১০ নক্ষত্রকে নিয়ে। এই সেরা ১০ জনের মধ্যে যারা বর্তমানে খেলে চলেছেন তাঁরা ফুটবল খেলাটাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলবে এবং তাঁরা নিজেরা আরো জনপ্রিয় হবে। অর্থাৎ সেরাদেরও সেরা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *