সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনাদের ফোনের জন্য চার্জার কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আপনাদের জেনে রাখার প্রয়োজন রয়েছে। কারন ভুল চার্জার ব্যবহারের ফলে আপনাদের ডিভাইসের মারাত্মক রকমের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই পোস্টে আপনারা জানবেন স্মার্টফোনের চার্জার কেনার সময় লক্ষণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে ।
চার্জিং পোর্ট
বন্ধুরা যেকোনো ডিভাইসের জন্য চার্জার কেনার পূর্বে আপনাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে উক্ত চার্জার আর আপনাদের ডিভাইসের চার্জার, উভয় এর চার্জিং পোর্ট একই রকম কিনা। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ এন্ড্রয়েড ফোনে ইউএসবি-সি পোর্ট ব্যবহার করা হয়, আগের ফোনগুলোতে মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট অধিক ব্যবহৃত হতো। অন্যদিকে আবার অ্যাপল এর আইফোনে লাইটনিং পোর্ট ব্যবহার করা হয় চার্জিং এর জন্য। অবশ্য ইউএসবি-সি টু লাইটেনিং এডাপ্টার/কেবল ব্যবহার করে অ্যাপল ডিভাইস চার্জ করা যেতে পারে।
যদি আপনার ফোন নিয়ে গিয়ে চার্জার কিনেন তাহলে স্মার্টফোনের চার্জিং পোর্ট ভুল করার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। ফোন সাথে না থাকলে সেক্ষেত্রে ইন্টারনেট থেকে আপনার ফোনের চার্জিং পোর্ট সম্পর্কে জেনে নিয়ে তবেই চার্জার কেনা শ্রেয়।
আউটপুট
পাঠক বন্ধুরা পাওয়ার আউটপুট সম্পর্কে জানতে হলে আপনাদের প্রথমে ভোল্টেজ ও এম্পেয়ার সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে।
ভোল্টেজ (V)
একটি ভালো চার্জারের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আপনাদের ফোনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভোল্টেজ প্রদান করবে। 5V বা ৫ভোল্ট অনেকদিন ধরেই স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে কোয়ালকম স্নাপড্রাগন এর মত টেকনোলজির সুবাদে ৯ভোল্ট থেকে ৫ভোল্ট পর্যন্ত ব্যবহার হয়ে থাকে। আপনাদের অরিজিনাল চার্জার কত ভোল্ট এবং আপনাদের ফোন সর্বোচ্চ কত ভোল্টের চার্জার সাপোর্ট করবে তা ফোনের ইউজার ম্যানুয়াল থেকে জেনে নিতে হবে।
এম্পিয়ার (A)
আপনারা সকলেই হয়তো জানেন একটি চার্জারের এম্পিয়ার যত বেশি হবে, এটি তত দ্রুত আপনাদের ডিভাইসকে চার্জ করবে। তবে কিছু ডিভাইস এর সর্বোচ্চ চার্জিং ক্যাপাসিটি লিমিট করা থাকে, যার ফলে অধিক এম্পিয়ারের চার্জার ব্যবহার করেও কোনো পরিবর্তন দেখা যায়না। আপনাদের অরিজিনাল চার্জার কত এম্পিয়ারের এবং আপনাদের ফোন সর্বোচ্চ কত এম্পিয়ারের চার্জার সাপোর্ট করবে তা ফোনের ইউজার ম্যানুয়াল থেকে জেনে নিতে হবে।
এবার আমরা কথা বলব ফোনের পাওয়ার আউটপুট বা ওয়াট (W) সম্পর্কে, অধিকাংশ স্মার্টফোন চার্জার এর দ্রুততা পরিমাপের একক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কোনো চার্জারের পাওয়ার আউটপুট জানতে হলে এর এম্পিয়ারের ও ভোল্টেজকে গুণ করতে হবে। বন্ধুরা এই সংখ্যা যত বেশি হবে, তত দ্রুত উক্ত চার্জার দ্বার কোনো ডিভাইস চার্জ করা যাবে।
ধরা যাক একটি চার্জার এর ভোল্টেজ 5V ও এম্পিয়ার 2A, তাহলে উক্ত চার্জার এর পাওয়ার আউটপুট হবে 10W অর্থাৎ ১০ওয়াট। অন্যদিকে 9V ও 2A এর একটি চার্জারের পাওয়ার আউটপুট হবে ১৮ওয়াট। বর্তমানে ১৮ওয়াট চার্জার থেকে শুরু করে ১৫০ওয়াট এর চার্জার পর্যন্ত স্মার্টফোনগুলোর বক্সের সাথে দেওয়া হয়ে থাকে।
অবশ্যই ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে এমন চার্জার দ্বারা দ্রুত করা যাবে, তবে আপনাদের ফোন ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে কিনা সে বিষয় আগে নিশ্চিত করা জরুরি।
ফাস্ট চার্জিং প্রটোকল
বন্ধুরা ফাস্ট চার্জিং প্রোটোকল দ্বারা আমরা ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তিকে বুঝি । অধিকাংশ স্মার্টফোন কুইক চার্জার প্রোটোকল অথবা পাওয়ার ডেলিভারি সাপোর্ট করে। এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তাদের নিজেদের চার্জিং প্রোটোকল রয়েছে, যেমনঃ ওয়ানপ্লাস ওয়ার্প চার্জিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ফোনের চার্জার কেনার সময় এটি নিশ্চিত করতে হবে যে আপনাদের ফোন আর উক্ত চার্জারের চার্জিং প্রোটোকল একে অপরের সাথে সাপোর্টেড কিনা। একমাত্র একই চার্জিং প্রোটোকলের চার্জারই কোনো ফোনে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ সুবিধা পাওয়া যাবে।
স্যামসাং ডিভাইসগুলো দুই ধরনের ফাস্ট চার্জিং প্রোটোকল ব্যবহার করে থাকে এডাপ্টিভ ফাস্ট চার্জিং যা মূলত কুইক চার্জ এর মডিফাইড ভার্সন ও সুপার-ফাস্ট চার্জিং, যা পাওয়ার ডেলিভারি এর মডিফাইড ভার্সন। অর্থাৎ স্ট্যান্ডার্ড কুইক চার্জ বা পাওয়ার ডেলিভারি প্রোটোকল সাপোর্ট করে এমন যেকোনো চার্জার দ্বারা স্যামসাং ফোন চার্জ করা যাবে।
আপনারা যদি আইফোন ৮ বা তার পরে মুক্তি পাওয়া কোনো আইফোন ব্যবহার করেন, তাহলে দ্রুত চার্জিং এর জন্য পাওয়ার ডেলিভারি প্রোটোকল সাপোর্টেড চার্জার কিনতে পারেন। এসব ডিভাইস ১৮ওয়াট আউপুট দিতে পারে যা দ্বারা মাত্র ৩০মিনিটে আইফোন ৫০% চার্জ করা যাবে।