৬জি এর সুবিধা-সুপ্রিয় ভিজিটর বন্ধুরা আপনারা সকলে হয়তো জানেন ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু হয় ২জি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। এরপর পরিবর্তন এর সাথে ২০০১ সালে ৩জি, ২০০৯সালে ৪জি, এবং ২০১৮সালে ৫জি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার সূচনা হয়। ৫জি এর যাত্রা শুরু হওয়ার অনেক সময় পার হয়ে গেলেও এখনো তেমন একটা বিস্তৃতি অর্জন করতে পারেনি এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। বন্ধুরা মজার ব্যাপার হলো ইতিমধ্যে ৬জি নিয়ে জোরেসোরে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বন্ধুরা আজকের এই পোস্টে ৬জি কি, কি কাজে লাগবে ও কখন নাগাদ বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন।
৬জি কি?
বন্ধুরা প্রথমে আমরা জানবো ৬জি মুলত কি , সহজ ভাষায় বলতে গেলে পরবর্তী প্রজন্মের ওয়্যারলেস ইন্টারনেট ব্যবস্থাকেই প্রধানত ৬জি বা 6th Generation নামে অবিহিত করা হয়েছে। নাম শুনতে আহামরি কোনো উন্নতি মনে না হলেও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে আগের প্রজন্মের চেয়ে এই প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা অনেক বেশি উন্নত হবে।
বন্ধুরা এখনো কিন্তু ৬জি প্রযুক্তি একটি ধারণা মাত্র। পুরোপুরিভাবে ৬জি এর অভিজ্ঞতা গ্রহণে প্রয়োজনীয় প্রয়োজনীয় অগ্রগতি আনা সম্ভব হলে তবেই ৬জি প্রযুক্তি বাস্তবে রুপান্তরিত হবে।
৬জি এর সুবিধাসমূহ
পাঠক বন্ধুরা ৫জি ইন্টারনেট এখনো সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি, সেখানে ৬জি কি কাজে আসতে পারে সে সম্পর্কে আপনাদের মনে প্রশ্ন থাকতেই পারে। তাই এবার আমরা জানবো ৬জি প্রযুক্তির ব্যবহার ও সুবিধাসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
প্রযুক্তিগত উন্নতি
বন্ধুরা সাই-ফাই গল্পে আমরা যেসব প্রযুক্তি দেখে থাকি, সেসব প্রযুক্তিকে বাস্তবে রুপান্তরিত করা হয়ত অনেক সময়ের ব্যাপার। ৬জি প্রযুক্তির সাহায্যে আরও বেশি অটোনমাস ভেহিকল এর মত প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন করা সম্ভব হবে।
তবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি, এই দুইটি ক্ষেত্রেও ৬জি প্রযুক্তি বেশ কাজে আসবে। ইতিমধ্যে এআর ও ভিআর এর অন্যতম অংশ হয়ে উঠেছে ৫জি, এর বিষয়টিকে নিয়ে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে ৬জি।
অনেক গবেষকরা তো এমনও দাবি করেন যে আমাদের ব্রেনে কানেক্টেড চিপ পর্যন্ত ইমপ্ল্যান্ট করা যাবে ৬জি এর মাধ্যমে। এই ধরনের কিছু সম্ভব হলে ভিআর হেডসেট পরে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে প্রবেশ করতে হবেনা, বরং সরাসরি ব্রেনের মাধ্যমে কানেক্টেড নেটওয়ার্ক থেকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে চলে যাওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা
বন্ধুরা পাবলিক সেফটি এর ক্ষেত্রেও কিন্তু অনেক উন্নতি আনবে ৬জি। ফেসিয়াল রিকগনিশন, থ্রেট ডিটেকশন, এমনকি আইন প্রয়োগ সংস্থার কাজেও সরকার ৬জি প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারবে। এছাড়া এয়ার কোয়ালিটি, টক্সিসিটি লেভেল, ইত্যাদি পরিমাপ করার কাজে ৬জি অনেক কাজে আসতে পারে।
এজ কম্পিউটিং
বন্ধুরা Edge Computing হলো এমন একটি IoT নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা যেখানে কানেক্টেড থাকা সকল ডিভাইস একে অপরের সাথে ক্লাউডের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। এখানে ৬জি হলো আমাদের ডিভাইসগুলোকে হাব এর মত ব্যবহারের মত সুবিধা প্রদান করবে।
স্পিড
বন্ধুরা প্রতি জেনারেশনে উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায় ইন্টারনেট স্পিড। এই ৬জি এর অন্যতম ফিচারের মধ্যে স্পিড বাড়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত। সিডনি ইউনিভার্সিটির এক প্রভাষক বলেন যে চাইলে সেকেন্ডে ১টেরবাইট অর্থাৎ প্রায় ১০০০জিবি এর সমপরিমাণ ডাটা ট্রান্সফারের স্পিড পাওয়া যেতে পারে এই ৬জি থেকে। তবে ৫জি এর স্পিড কাগজে কলমে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ১০জিবি/সেকেন্ড। তাই ৬জি এর ক্ষেত্রে এতো বিশাল উন্নতি দেখা যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। ৫জি থেকে ৬জি ৫০ থেকে ১০০ গুণ দ্রুততর হতে পারে।
৬জি স্পিড কেমন হবে
পাঠক বন্ধুরা বর্তমানে সর্বত্র ৪জি এর ব্যবহার রয়েছে, আমাদের দেশে আমরা ৪জি ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি। ৪জি ইন্টারনেটকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে ৫জি, যা থেকে প্রতি সেকেন্ডে 40Mbps থেকে 1,100Mbps পর্যন্ত স্পিড পাওয়া যায়।
কিন্তু কিছু কিছু দেশ ইতিমধ্যে ৬জি নিয়ে কাজ করছে। উক্ত দেশগুলোর চালানো পরীক্ষা থেকে ৫জি এর চেয়ে ৬জি ইন্টারনেটে প্রায় ১০গুণ বেশি স্পিড পাওয়া যায়। তাই আমরা ধারণা করতে পারি ৫জি এর চেয়ে ৬জি ইন্টারনেট এর স্পিড কমপক্ষে ৫ থেকে ১০গুণ বেশি হবে।
৬জি কখন আসবে
বন্ধুরা বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশ ৬জি নিয়ে কাজ করলেও কোনো দেশই বাণিজ্যিকভাবে ৬জি ইন্টারনেট প্রদানে এখনো আগাচ্ছে না। তবে ধারণা করা যায় ২০৩০সাল নাগাদ বিশ্বের অনেক দেশে ৬জি এর দেখা পাওয়া যাবে।
৬জি প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেক দেশের অনেক কোম্পানি ও কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে মোবাইল ইন্টারনেটে এই প্রযুক্তি সবার আগে পরিচয় করে দিতে হুয়াওয়ে, স্যামসাং, নকিয়া এর মত কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ইতিমধ্যে কোম্পানিগুলো ৬জি নিয়ে কাজ করছে ও অনেক পথ এগিয়ে গিয়েছে।
বন্ধুরা আমরা আগেই জেনেছি এখনো পর্যন্ত ৬জি একটি ধারণা মাত্র। যেখানে ৫জি প্রযুক্তি বিশ্বের সকল স্থানে এখনো উপলব্ধ্য নয়, সেখানে ৬জি এর প্রসারের চিন্তা করা বোকামি। তবে ৫জি ব্যবস্থার প্রসারের সাথে সাথে খুব শীঘ্রই ৬জি প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফলতা আসবে বলে আশা করা যায়।