ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচার আমল। ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে আমল সমূহ করা জরুরী

আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ঘূর্ণিঝড়ের সময় অনেক বেশি বিচলিত হয়ে পড়তেন। তিনি ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ধরনের এবাদত করতেন। যখন ঘূর্ণিঝড় শুরু হতো তিনি দ্রুত মসজিদে চলে যেতেন। তাই আজকের পোস্টে ঘূর্ণিঝড়ের সময় কি কি আমল করা জরুরী সে সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোচনা পেশ করব। যেহেতু নবীজি সাল্লাল্লাহু সাল্লাম আমাদেরকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় কিছু কিছু এবাদত সম্পর্কে বলে দিয়েছেন অথবা তিনি যে সকল এবাদত করতেন সেগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

ঘূর্ণিঝড় বা দুর্যোগের সময় সুন্নত আমলসমূহ

ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই কিছু সুন্নত আমল রয়েছে যেগুলো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ করতেন। এই সুন্নত আমলসমূহ করার মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি কোথাও ভূমিকম্প হয় অথবা সূর্যগ্রহণ কিংবা ঝড় বাতাস অথবা বন্যা হওয়ার উপলক্ষণ দেখা যায় তাহলে সবার উচিত নবীজি সালাম যে সকল আমল করতেন সেগুলো করা। এ সময় নিশ্চয় আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করতে হবে, বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে, এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এ ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তাঁর কাছে তওবা করো।’ (বুখারি ২/৩০; মুসলিম ২/৬২৮)

ঘূর্ণিঝড়ের সময় আল্লাহর জিকির করা

ঘূর্ণিঝড় এর সময় আল্লাহ পাকের কাছে যতগুলো এবাদত করার পদ্ধতি রয়েছে সবগুলোই পালন করার চেষ্টা করতে হবে। এ সময় নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করা অথবা দোয়া দরুদ পাঠ করা জরুরী।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় বেশি বেশি তওবা করা

যখন ঘূর্ণিঝড় হবে তখন আমাদের উচিত বেশি বেশি আল্লাহ পাকের দরবারে তওবা করা। তওবা ইস্তেগফার এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পানাহ চাইতে হবে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ দুর্যোগ অথবা ঘূর্ণিঝড়ের সময় মসজিদে চলে যেতেন এবং নামাজে মশগুল থাকতেন। (মিশকাত ৬৯৬)

ঘূর্ণিঝড়ের সময় তাকবীর এবং আযান দেওয়া

আমরা ছোটবেলায় দেখেছি যে যখন কোন ঘূর্ণিঝড় অথবা ঝড় হতো তখন আমাদের বাবা চাচারা জোরে জোরে আযান দিতেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবাদত যখন ঘূর্ণিঝড় অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। ঘূর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সাহাবীদের জীবনেও এমন আমল রয়েছে যখন তারা নামাজ ও ধৈর্যের পাশাপাশি থাকবে এবং আযানের আমল করতেন। (তবে এই আজানে ‘হাইয়া আলাছ ছলাহ’ বা নামাজের জন্য আসো এবং ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বা সফলতার জন্য আসো’ বাক্য দুটি বলার প্রয়োজন নেই)।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় জোরে জোরে বাতাস হলে যে দোয়া পড়বেন

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻫَﺎ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর কল্যাণটাই কামনা করি। এবং আপনার কাছে এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ ৫০৯৯; ইবন মাজাহ ৩৭২৭)

প্রচন্ড মেঘের গর্জনে যে দোয়া পড়বেন

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু যখন প্রচন্ড প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিত অথবা মেঘের গর্জন হত তখন কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে পবিত্র কুরআনের এই আয়াত তেলাওয়াত করতেন
سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ، والـمَلائِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهِ
উচ্চারণ : ‘সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা`দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি।’
অর্থ : ‘পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা- তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা।’
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম মেঘের গর্জন শুনলে অথবা বিদ্যুৎ চমকের আওয়াজ শুনলে সঙ্গে সঙ্গে যে দোয়া পড়তেন তা হলো –
اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাদ্বাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা- বি আজাবিকা, ওয়া আফিনা ক্বাবলা জালিকা।’
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের কারণে আমাদের মেরে ফেলো না আর তোমার আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদের ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নাও।’ (তিরমিজি)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *