কুরবানী কার উপর ওয়াজিব, কুরবানী কার উপর ফরজ

আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানবো কুরবানী কার উপর ওয়াজিব, এবং কার উপর ফরজ । কুরবানী নিয়ে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ভ্রান্তি দেখা দেয় ।

আগামী  জুন মাসের ২৯ তারিখ জিলহজ্জ সেই মোতাবেক অনুযায়ী আমাদের পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা ঈদুল আযহা কুরবানীর ঈদ ।

ঈদুল আযহার যে বিষয়ে সব থেকে বেশি সুন্দর এবং সার্থক  আলো উজ্জ্বল করে তোলে মুসলমানদের মধ্যে তার মধ্যে হচ্ছে কুরবানী । কুরবানী শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ থেকে এর অর্থ ইসলামী পরিভাষায় যে কাজের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করতে পারে সেটি কুরবানী নৈকট্য অর্জন করা, কাছে আসা, আত্মত্যাগ, বিসর্জন  ইত্যাদি ।

 কুরবানী কার উপর ওয়াজিব। কুরবানী কার উপর ফরজ

কুরবানী নিয়ে আলেমদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে যে কুরবানী সুন্নত কিংবা ফরজ কিনা। এ নিয়ে একদল  ওলামা বলেছেন যে কুরবানী সুন্নত কুরবানী হলেন সুন্নতের মুকাদ্দা  এটি বেশিরভাগ আলেমদেরই বক্তব্য। আরেকদল বলেছেন কোরবানি ওয়াজিব । যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব শরীয়তের ভাষায় তারা মুসলমান হওয়া, বিবেকবান মানুষ হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ইত্যাদি এর সাথে একটি শর্ত যুক্ত হবে ওই ব্যক্তির উপর কুরবানীর পশু জবাই করা সক্ষম ওই ব্যক্তি কুরবানীর জন্য সুন্নতে মুকাদ্দা এটি বেশিরভাগ আলেমগণই বলেন । আরেকটি হলো সেই ব্যক্তি যার ধন সম্পদ থাকতে হবে যার উপর ফরজ । তার ওপর কুরবানী  ওয়াজিব । যে কোন মুসলমান এই দুটি শর্তের একটি পূরণ করতে না পারে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না । নবী কারীম সা ওয়াজিবের সম্পর্কে বলেছেন তোমাদের মধ্যে যেসব  সক্ষম সেই হোক তাকে কোরবানি দাও । অনেক ব্যক্তি আছে সামর্থ্য থাকার পরেও আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানী না দেয় এবং সে যেন ঈদগাহ ময়দানে না আসে এই হাদিসটিকে কোরবানির ওয়াজিব বলে দলিল করা হয়েছে । যদি আপনার ব্যাংকে বা কুরবানী দেওয়ার মত আপনার টাকা থেকে তাহলে আপনাকে কোরবানি অবশ্যই দিতে হবে । নবীজি বলেছেন নিসাব পরিমাণ সম্পদের কথা একদমই বলেনি এটা না থাকলেও চলবে তবে আপনাকে সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই কুরবানী দিতে হবে । তাই কুরবানী সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের উপর ফরজ ঘোষণা করা হয়েছে ।

 কুরবানী কার উপর ওয়াজিব,  কুরবানী কার উপর ফরজ

যারা কুরবানী করবে তাদেরকে যিলহজ মাস আসার আগে যে কাজগুলো করতে হবে  হাত  পায়ের নখ কাটা পরিষ্কার করতে হবে যদি কোন পুরুষ কুরবানী দিয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই তাকে চুল এবং নাভির নিচের পশম কেটে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে । এর কারণ হলো যখন  চাঁদ দেখা যায় যিনি কুরবানী দিবেন তাকে কোরবানি দেওয়ার আগ পর্যন্ত চুল সুন্নত । রাসুল সাঃ বলেছেন যখন জিলহাসের দশ দিন আসে তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা  তার চুল এবং ত্বকের কোন অংশ কাটা উচিত নয় যদিও কারো  নখ এবং চুল কাটা দরকার হয় তবে এটি মাসে সেদিনের সন্ধ্যার আগে এটি পরিষ্কার করা জরুরী । উল্লেখিত সময়টিকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে । যারা কোরবানি করবে, তারা জিলহজ মাসের  এবং চুল কেটে পরিষ্কার করবে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে রোজা পালন করা উচিত আল্লাহতালা মুসলিম উম্মাহকে জিলহজ্জ মাসের আমল করার যেন তৌফিক দান করে । কোন ব্যক্তি বা কোন পরিবার যদি তার পরিবারে খরচ মেটানোর পরে  জিলহজ মাসের ১০,১১,১২ তারিখে নির্ধারিত পরিমানে স্বর্ণ   রুপা থাকে তার  উপর কুরবানী  ফরজ ।

পবিত্র কোরআনে কুরবানী সম্পর্কে ইতিহাস সুস্পষ্টভাবে আছে কুরবানির মাশাল্লাহ অনুসারে কুরবানী যদি সঠিকভাবে না করা হয় কুরবানী যদি সঠিকভাবে না করা হয় তবে তা কেবল পশু জবাই   করা হবে ,লক্ষ্য পূরণ হবে না যে ব্যক্তি ত্যাগ স্বীকার করে তাদের প্রত্যেককে পশু কোরবানির বিধি ও বিধি গুলো জানতে হবে অন্যথায় কুরবানী আল্লাহ তা’আলা কবুল করবে না ।

 কুরবানী কার উপর ওয়াজিব,  কুরবানী কার উপর ফরজ

কুরবানী দিতে হলে অবশ্যই সামর্থ্যবান ধনী হতে হবে এবং ঋণগ্রস্ত হওয়া যাবে না টাকা ধার নিয়ে বা সুদের উপর দিয়ে কুরবানী দেওয়া যাবে না । কুরবানী ওয়াজিব হওয়া বা সুন্দর হওয়ার জন্য অবশ্যই সেই কুরবানী কারী ব্যক্তি কে ধনী হওয়া সত্ত্বেও এবং সুন্দর মনের হতে হবে যিনি কুরবানী দিবেন তিনি যদি তার সংসারে খরচ পাতি এবং সংসারে সমস্ত খরচ চালিয়ে তার কাছে কোরবানি দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ থাকে তাহলে সেই অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে কুরবানী দিতে পারে তাহলে সেই ব্যক্তির উপর কোরবানি দেওয়ার বিধান রয়েছে । কুরবানী দেওয়ার জন্য নারী পুরুষের কোনরকম  মোতাভেদ নেই  যারা কুরবানী দিবেন অর্থাৎ স্বামী সন্তান না থাকলেও সে কুরবানী দিতে পারবে । রাসুল  বলেছেন প্রত্যেক পরিবারে প্রতিবছর একটি কুরবানী করা ওয়াজিব ।

স্বাভাবিক জ্ঞান সম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলমান যদি হিসাব পরিমান মালিক থাকেন তবে তার পক্ষে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব । কুরবানীতে একটি ছাগল, একটি ভেড়া বা একটি দুম্বা ,গরু

মহিষ ও উট কুরবানী করা যাবে । কুরবানীর পশু যে কোন মুসলমান  নারী ও পুরুষ জবাই করতে পারেন।  যার কুরবানী  তার নিজে জবাই করাই উত্তম দোয়া কোন জরুরী বিষয় না তবে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে জবাই করলেই হবে । জবাইয়ের জন্য কোন নিয়ত নেই কুরবানী দাতার নাম বলা জরুরী নয় । যিনি কুরবানী দিচ্ছেন তার মনের ইচ্ছায়  নিয়েত  হিসেবে কবুল হবে । কুরবানী হলো ত্যাগ স্বীকার করা বা বিসর্জন দেওয়া । কুরবানী ইতিহাস মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম(আ:) ও তার শিশু পুত্র ইসমাইল( আ:) মহান আত্ম বিসর্জনে উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত  নজর স্থাপন হয়েছে কুরবানীর এর কাছ থেকে ।শিশুদের উপর কুরবানিসহ কোন ফরজ ওয়াজিব প্রয়োজন নাই । তাদের জন্য প্রাপ্তবয়সও হতে হবে । কুরবানী শুধু পশু জবাই এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয় কুরবানীর কোন বিকল্প নেই । টাকা পয়সা প্রদান, অর্থ সম্পদ দান ও সদগা ক্ষয়রাতের মাধ্যমে কোরবানি আদায় হবে না ।

 কুরবানী কার উপর ওয়াজিব,  কুরবানী কার উপর ফরজ

সামর্থ্যবান কোন ব্যক্তি বিশেষ কারণে নিজে কুরবানী সম্পাদনে সক্ষম না হলে অন্য কাউকে দিয়ে বা প্রতিনিধির মাধ্যমে তার সম্পাদন করাতে পারবেন । কুরবানীর পাশাপাশি  অভাবী, গরিব-দুখী, দুর্দশা গ্রস্থ মানুষকে ঈদ আনন্দে শামিল করার জন্য বেশি বেশি আর্থিক দান অনুদান জামাকাপড় প্রদান এবং নিত্য প্রয়োজনীয় ঈদ কিনে দেওয়ার মাধ্যমে আরো বেশি পূর্ণ অর্জন করা যায় । কুরবানীর গোস্ত ধনী গরীব সবাই খেতে পারেন, এবং আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া কিছু অংশ গরিব পাড়া প্রতিবেশীদের দেওয়া এবং কিছু অংশ নিজের পরিবারের জন্য রাখা যত বেশি দিবে তত ভালো । প্রয়োজনে সম্পূর্ণটা রাখা যাবে । শরীয়তে যাদের উপর কুরবানী বাধ্যতামূলক হয় তারা হলেন মুসলিম হওয়া, বিবেক সম্পূর্ণ হওয়া প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। ওই দিন কোরবানির পশু জবাই করা সামর্থ্য রাখে সেই ব্যক্তির উপর কুরবানী আদায় করা সুন্নতে মুকাদ্দা এটি বলেছেন অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম । রাসূল সাঃ  স্বয়ং নিজেই বলেছেন তোমাদের মধ্যে যে  যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে সে যেন কোরবানি করে ।

কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে

 

  •  ধনী হওয়া
  •  নিজের খরচ নিজে বহন করতে পারা
  •  কুরবানী করার জন্য  এক্সট্রা টাকা   থাকা
  •  মুসলিম হওয়া
  •  বিবেক সম্পন্ন হওয়া
  •  প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ইত্যাদি

 

আশা করি প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের যাদের কুরবানীর ফরজ এবং ওয়াজিব নিয়ে  দ্বিধাদ্বন্দ ছিল তাদের জন্যই আমার এই পোস্টটি  আপনারা হয়তোবা এখন বুঝতে পারবেন যে কুরবানী সম্পর্কে ফরজ ওয়াজি ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *