তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা / দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা

ভূমিকা: বিজ্ঞান কে মানব কল্যাণে  প্রয়োগ করার কৌশলে হচ্ছে প্রযুক্তি ।মানুষ প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নতি সাধন করছে। মানবজীবন বিকাশের যথার্থ উপায় এখন প্রযুক্তি বিদ্যায় । বর্তমান বিশ্বের   তথ্যপ্রযুক্তি   সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত । আমাদের জাতীয় উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক। তথ্য প্রযুক্তি জাতীয় উন্নয়নে নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে।

তথ্য প্রযুক্তি ও  জাতীয় উন্নয়নের ধারণা : তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাপনাএবং সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতির   সুবিন্যস্ত রূপকে তথ্যপ্রযুক্তি বলে । কম্পিউটার, মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি তথ্যপ্রযুক্তির মধ্যে পড়ে ।  ডাটাবেজ,  সফটওয়্যার উন্নয়ন ইত্যাদি তথ্যপ্রযুক্তির অন্তর্গত । টেলিফোন,  ফ্যাক্স,  ইন্টারনেট ইত্যাদিকে তথ্য প্রযুক্তি বলে । জাতীয় উন্নয়ন বলতে বুঝায় এখনকার তরুণ প্রজন্ম স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে । তথ্য প্রযুক্তির ফলে জাতীয়ভাবে আয় বাড়ছে ।

তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রীতি বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার মূল ভিত্তি হল তথ্য প্রযুক্তি ।  সরকার তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিকে প্রদান করেছেন।  দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য দেশকে ডিজিটাল টেলিফোন ও ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে এসেছে । তাছাড়া সরকার জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা অনুমোদন করেছে । নানা   প্রতিকূলতা সত্বেও তথ্যপ্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নে বিশেষ অবদান   রাখছে।

অনুচ্ছেদ ডিজিটাল বাংলাদেশ । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা

 তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য করণীয়: বর্তমান এক বিংশ শতাব্দীর প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশকে ঠিকই থাকতে হলে  তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের বিকল্প নেই । আমাদের দেশে শিক্ষিত তরুণ সম্প্রদায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তাদের যোগ্যতা বরাবরই প্রমাণ করছে । তাই আমাদের তরুণদের  মেধা, সৃজনশীল শক্তি কে কাজে লাগিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কার্যকরী  করে তুলতে হবে ।

গ্রাম অঞ্চলে ইন্টারনেট প্রসার : টেলিফোন ও ইন্টারনেট  যত  সস্তা হবে এগুলো তত বেশি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে  ।মানুষ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি সুযোগ পাবে ।  সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত তথ্য প্রযুক্তি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া । সরকারের লক্ষ্য হতে হবে তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণ কে উৎসাহ প্রদান এবং অধিকতর প্রতিযোগিতা সৃষ্টি  ।

তথ্য প্রযুক্তি  প্রসারে করণীয় : তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের জন্য টেলিফোনো ইন্টারনেট কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে । সবার জন্য তথ্য প্রযুক্তি নিশ্চিত করতে হলে টেলিফোন সার্ভিসকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হবে ।  দেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে টেলিফোনে হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম । তথ্য প্রযুক্তির    প্রবাহকে   প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের দেশে অবিলম্বে টেলিফোনের আন্তর্জাতিক সংযোগ ব্যবস্থাকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে ।

রচনা ডিজিটাল বাংলাদেশ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা

তথ্যের আদান-প্রদান: প্রতিটি মানুষের জীবনে নতুন নতুন তথ্যেরসমাবেশ করছে । যার ফলে তথ্যের পরিমাণ  দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে । জীবনে বিভিন্ন দিকে মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় সময়ে উপযুক্ত তথ্য  পাওয়ায়  গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাচ্ছে । কারণ মানুষের নিজের পক্ষে মনে রাখা বা হাতের কাছে পাওয়া সম্ভব নয় । এজন্য প্রয়োজন ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সহজেও দ্রুত তথ্য পাওয়া যায় ।

শিল্প অর্থনৈতি উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তি: বর্তমান  বিশ্বে অর্থনীতির মূল  চালিকা ইন্টারনেট ।  তথ্য প্রযুক্তি বিকাশের ফলে সারা বিশ্বে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে । অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এসেছে নতুন নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা । বর্তমানে কৃষি থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানা, অফিস আদালত দেশের এমন কোন ক্ষেত্রে নেই যেখানে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি স্পর্শ পাইনি । অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিন দিন বেড়েই চলছে ।

বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তি: বর্তমান পৃথিবীর সাথে  তথ্য ও প্রযুক্তির সম্পর্ক রয়েছে । যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির প্রসার ও বিকাশের উপর গুরুত্ব উপলব্ধি করে বাংলাদেশ সরকার হাতে নিয়েছে এমন একটি প্রকল্প যার রূপকল্প ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ এর ধারাবাহিকতায় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে । তাছাড়া প্রতিবছর 12ই ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস পালন করা হয় ।

নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা : বেকারত্ব সমস্যা আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি । তবে বর্তমানে অনেক  তরুণ তরুণী পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিংকে বেছে নিয়েছে । এটি বেকারত্বের সমস্যা যেমন সমাধান হয় তেমনি সরকারি কোষাগারে রেমিটেন্স জমা হয় । আমাদের দেশে এখনো নারীদের সেভাবে বাইরে এসে কাজ করতে দেখা যায় না । তার প্রধান কারণ সামাজিক অবকাঠামো । অনেক নারী বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং  পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেকে অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ।

অনুচ্ছেদ ডিজিটাল বাংলাদেশ । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা

কৃষিক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা: কৃষকের আমাদের খাদ্যের যোগান দেয় আমাদের দেশ কৃষি প্রধান এদেশের কৃষকরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফসল ফলালেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে তাদের  ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না । এই সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে সরকারি এমন একটি অ্যাপ চালু করেছে যেটি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা সরাসরি সরকারের কাছে ফসল বিক্রি করতে পারবে এটি সম্ভব হয়েছে তত্ত্ব প্রযুক্তির কারণে । ইন্টারনেটের কল্যাণের বর্তমানে কৃষকেরা বাইরের দেশে কৃষি কাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত  হতে পারছে । ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের  উৎপাদিত পণ্য সারাদেশে বিক্রি করার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে ।

গবেষণা ও তথ্য প্রযুক্তি : গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় বর্তমানে প্রতিমুহূর্তেই তথ্য সংগ্রহ করা যায় । এটি সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে । বিভিন্ন দেশের গবেষকদের নির্দেশনা অনুসরণ করে নিজেদের গবেষণায় সেটি ব্যবহার করে তুলনামূলক ফল  পাচ্ছে । এটি সম্ভব হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে । এক সময় গবেষণা সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা ও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য বিদেশ গমন করতে  হত তা আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় এটি দেশের গবেষকদের জন্য এক বড় আনন্দদায়ক ।

উপসংহার : বর্তমান বিশ্বে যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তি যত বেশি দক্ষ তাদের সার্বিক অবস্থা তত বেশি উন্নত । তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান  বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান মাধ্যম । কিন্তু আমাদের দেশে এখনো তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ প্রসার ঘটেনি । তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র নিরীকরণ, শিক্ষার উন্নয়ন, অর্থনীতিউন্নয়ন, বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদের নানা পরিকল্পনা  গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে ।  সকল প্রচেষ্টায় মাধ্যমে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়ন ঘটবে ।  তথ্যপ্রযুক্তির   বিপ্লবিক উন্নতির মাধ্যমে বিশ্বের  অউন্নত জাতি গোষ্ঠী মানুষেরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *