ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম
ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম
বাংলা দ্বিতীয় পত্রে আমাদের সাধারণত ভাব সম্প্রসারণ লিখতে হয়। আমাদের মধ্যে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা জীবনে একবারও ভাব সম্প্রসারণ লেখেনি এমন। তবে পাওয়া যদিও যায় তবে সে সংখ্যাটা হবে একেবারেই কম। কারণ ভাব সম্প্রসারণ হচ্ছে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা ছোট একটি ভাবকে সম্প্রসারিত রূপে প্রকাশ করে। কিন্তু আমাদের মধ্যে সবাই সুন্দর করে ভাব সম্প্রসারণ লিখতে পারেনা কারণ তারা জানে না আসলে ভাব সম্প্রসারণ টা কি। আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব ভাব-সম্প্রসারণ কি এবং কিভাবে ভাব সম্প্রসারণ লিখতে হয় অথবা ভাব সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম।
ভাব সম্প্রসারণ কি
প্রথমেই আসুন জেনে নিই ভাব সম্প্রসারণ কি। ভাব সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম শেখার আগে যদি আপনি ভালোভাবে বুঝতে পারেন ভাব সম্প্রসারণ আসলে কি তবে আপনার নিয়ম গুলো খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। ভাব সম্প্রসারণ হচ্ছে একটা গুরুগম্ভীর কথাকে অথবা বাক্যকে সহজ-সরল প্রাঞ্জল ভাষায় খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। এবং এটাকে এত ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা যেন এর সম্পূর্ণ অংশটা একজন খুব সহজে বুঝতে পারে। যদিও এমনও হয় যিনি তেমন জ্ঞানের অধিকারী নন তারপরেও যদিও এই সম্প্রসারিত ভাবটাকে তিনি পড়েন তবে তিনি যেন বুঝতে পারেন এটার ভিতরে তাৎপর্য কি রয়েছে। তাই ভাবকে আমাদের খুব সাবলীল ভাবে সম্প্রসারিত করতে হবে যেন ভাবটা পরিপূর্ণরূপে প্রকাশ পায়।
ভাব সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম
যেহেতু ভাব সম্প্রসারণ আমাদের বিভিন্ন পরীক্ষায় আসে তাই আমরা ভাব সম্প্রসারণ লেখার নিয়মের প্রতি গুরুত্ব দিব। কারণ ভাব সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম গুলো সম্পর্কে যদি আমরা খুব ভালো ধারণা রাখি তখন আমরা যে কোন ভাবকেই সম্প্রসারিত করি না কেন তা অবশ্যই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। আর সেটা যদি হয় আমাদের পরীক্ষার খাতায় তবে বাড়তি নাম্বার পাওয়ার তো একটা আসাদ থাকবেই। তাই চলুন আমরা জেনে নেই ভাব সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম গুলো আসলে কি কি।
বিষয় উপলব্ধি
যে বিষয়ে ভাব সম্প্রসারণ করবেন সে বিষয়টি সম্পর্কে আগে আপনার ভালো ধারণা থাকতে হবে। যদি এমন হয় যে সেই বিষয়টি সম্পর্কে আপনার স্টাডি করার প্রয়োজন তবে তা করুন। বিষয়টি উপস্থাপনার জন্য যেভাবে সাজালে ভালো হয় সেই উপাত্ত গুলো সংগ্রহ করুন এবং তা আপনার ভাব সম্প্রসারণে লিখুন। তাহলে আপনি যে ভাব সম্প্রসারণটি লিখবেন সেটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য হবে এবং সবার কাছে পছন্দনীয় হবে।
প্রথম পরিচ্ছেদ
প্রথম পরিচ্ছেদে সাধারণত আপনি যে বিষয়টি সম্পর্কে ভাব সম্প্রসারণ লেখবেন সেই বিষয়টির পরিচয় দেবেন। এখানে যদি কোন কথা থাকে যেটা সহজে বোধগম্য নয় কঠিন ভাষায় লেখা সেটাকে ব্যাখ্যা করবেন। যেমন ধরুন একটা ভাব সম্প্রসারণ এর জন্য আসতে পারে যে পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। এখানে আপনি পরিশ্রম, সৌভাগ্য এবং প্রসূতি বিষয় সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা দিয়ে নিতে পারেন। তবে প্রথম পরিচ্ছেদে অবশ্যই বিষয়টি খুব বিশদভাবে ব্যাখ্যা করবেন না যেন খুব বড় হয়ে যায়। এখানে শুধু শব্দের অর্থগুলো খুবই সহজ সরল প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করতে পারেন।
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ হচ্ছে ভাব-সম্প্রসারণ এর মূল অংশ। আমরা যে ভাব সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব সেটি মূলত এই দ্বিতীয় অংশ লেখার জন্য। কারণ দ্বিতীয় অংশই হচ্ছে ভাব সম্প্রসারণের একেবারেই মূল এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেটার জন্য আমরা এতক্ষন অপেক্ষা করছি। যে যেকোনো একটা ভাব কে আপনি সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করবেন। সেই ভাবটাকে এখানেই বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হবে। তাই শুধু পুঁথিগত কিছু মুখস্ত বিদ্যা এখানে না এনে আপনার পারিপার্শ্বিকতা থেকে বিভিন্ন ডাটা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে যদি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন সেটা অধিকতর গ্রহণযোগ্য হবে। এখানে যদি কোন ডাটা দেওয়ার প্রয়োজন হয় তবে সেই ডাটাটা এখানে। যেমন সেটা হতে পারে বিভিন্ন কবি এবং সাহিত্যিকের নাম অথবা বিভিন্ন বিজ্ঞানিকের নাম। যেমন যদি আপনি সম্পর্কে কোন তথ্য এখানে দিতে চান তবে তার সম্পর্কে যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো রয়েছে সেটা এখানে উল্লেখ করতে পারেন। অথবা মনে করুন আপনি এখানে কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চান তবে কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে তার প্রাথমিক ধারণা এখানে ব্যাখ্যা করবেন।
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
তৃতীয় অনুচ্ছেদ হবে আপনার ভাব সম্প্রসারণের সর্বশেষ অনুচ্ছেদ। এখানে ভাব সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম সম্পর্কে বলা তেমন কিছুই নেই। এটা হচ্ছে আপনি যে মনের কথাটা বলতে চাচ্ছেন সেটা খুব সহজভাবে এক কথায় উপস্থাপন করা। এক কথা বলতে আবার এমন না যে আপনি একটি লাইনে লিখতে পারবেন। এক কথা মনে হচ্ছে তুই একটা বাক্য দিয়ে হলেও সংক্ষিপ্তভাবে যেন আপনার মনের কথাটা উল্লেখ। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখবেন এখানে যে কথাটা বলবেন সে কথাটা যেন আগের অনুচ্ছেদে রিপিট করা না হয়ে থাকে। কারণ মানুষ একই কথা বারবার শুনতে চায় না। এই কথাটা অবশ্যই হবে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা যেটার জন্য সম্পূর্ণ ভাব সম্প্রসারণে পাঠক অপেক্ষা করছিল।
ভাব সম্প্রসারণ লেখার ক্ষেত্রে সতর্কতা
ভাব সম্প্রসারণ যেহেতু বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসে তাই ভাব সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। আপনি যে বিষয়ে ভাব সম্প্রসারিত করছেন সে বিষয়ে ভাব িত সম্প্রসারণ করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপমা আপনাকে দিতে হবে। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে বিভিন্ন উপমা দিতে গিয়ে আপনি আবার মূল বিষয় থেকে না দূরে সরে যান। কারণ আপনি যদি মূল বিষয় থেকে দূরে সরে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপমা খুব বিশদভাবে ব্যাখ্যা করতে থাকেন তবে পাঠক বিরক্ত বোধ করবে। তাই উপমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনারা সতর্ক থাকবেন যেন সেগুলো খুবই সংক্ষিপ্ত ভাবে দেওয়া যায়। আর যদি এমন হয় একটা বিষয় বুঝানোর জন্য একাধিক উপমা দিতে পারছেন তবে সেটা আরো ভালো হবে।
ভাব সম্প্রসারণ যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করা উচিত
ভাব সম্প্রসারণ সাধারণত একটা ভাবকে সম্প্রসারণ করে বড় করে পড়া হয়। একটা কঠিন ভাবকে যেহেতু সহজ ভাবে উপস্থাপন করা হবে তাই এখানে শব্দ নির্বাচন করতে হবে খুব সতর্কতার সাথে। কারণ আপনি যে শব্দগুলো ব্যবহার করবেন সেগুলো খুবই সহজ হয় এবং সবাই খুব সহজে বুঝতে পারে। এবং অবশ্যই গুরুচন্ডালী দোষ মুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ আপনি যে ভাব সম্প্রসারণ লিখবেন সেখানে সাধু এবং চলিত ভাষার মিশ্রণ করা যাবে না।
দৃষ্টান্ত নির্বাচনের প্রতি সচেতনতা
আমরা একটা ভাবকে সম্প্রসারণ করতে গিয়ে অথবা একটা ভাব সম্প্রসারণ লিখতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টান্ত এবং উপমা নিয়ে আসি। তবে এই উপমা গুলো হতে হবে সার্বজনীন সবাই যেন বুঝতে পারে। এই উপমাগুলো দ্বারা কাউকে আঘাত করা যাবে না এবং এমন কোন তথ্য উপস্থাপন করা যাবে না যেটা মিথ্যা। অবশ্যই উপমাগুলো হতে হবে।
পরীক্ষার উপযোগী ভাব সম্প্রসারণ
বিশেষ কিছু ভাব সম্প্রসারণ এখানে দেয়া হলো যেগুলো আপনাদের পরীক্ষায় আসে।
- যেমন কর্ম তেমন ফল
- সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না
- বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃ করে
- সঙ্গদোষে লোহা বাসে
- লোভে পাপ পাপে মৃত্যু
আজকে আর্টিকেলের বিষয় ছিল ভাব সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম। আসলে ভাব সম্প্রসারণ লেখার তেমন কোন নিয়ম নেই। তবে এখানে যে ব্যাপারগুলো নিয়ে কথা বলা হয়েছে সে ব্যাপারগুলো যদি আপনি ফলো করেন তাহলে দেখবেন যে আপনার ভাবটা অনেক সুন্দরভাবে সম্প্রসারণ করতে পেরেছেন অর্থাৎ ভাব সম্প্রসারণ টা অনেক ভালো হয়েছে। তবে ভাব সম্প্রসারণ অবশ্যই নিজের বুদ্ধিমত্তাকে গুরুত্ব দিবেন এবং আপনি যেভাবে বুঝছেন সেই ভাবে উপস্থাপন করবেন।