কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা
কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা
ভূমিকা: বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ । কৃষি কাজে বিজ্ঞান জীবনটা আরো সহজ করে তুলেছে আলোচনা করব। বিজ্ঞানের কৃষি ক্ষেত্রে জয়যাত্রা লক্ষণীয় । অসংখ্য কৃষি প্রযুক্তি কৃষি কাজকে করে তুলেছে সহজ সাধ্য । বিজ্ঞান প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষকে দিয়েছে বিপুল শক্তি ও সাফল্য । বিজ্ঞানের আশীর্বাদ মানবজীবন কে করেছে গতীময় বিশাল এ পৃথিবীকে মানুষের হাতের মুঠো এনে দিয়েছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের এই কল্যাণ প্রভাব বিস্তৃত হয়েছে কৃষি ক্ষেত্রে । কৃষি কাজে বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবন মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছে বিপ্ল বিগ পরিবর্তন । এই প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাত্রাকে করে তুলেছে আরামদায়ক ।
কৃষি ও বাংলাদেশ:
কৃষি নির্ভর বাংলাদেশ এর অর্থনীতিতে কৃষি গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয়ের শতকরা ৩৮ শতাংশ আসে কৃষি থেকে এবং রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় 14% কৃষি জাত দ্রব্য রপ্তানি থেকে । এছাড়া কর্মসংস্থান ও শিল্পের ভিত্তি হিসেবে বাংলাদেশী কৃষি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু কৃষিকাজের জন্য খুবই অনুকূল। আধুনিক প্রযুক্তি উন্নত দেশগুলো মাটির অনুব্রতাকে এবং পানি দুর্বলতাকে যেভাবে দূর করেছে তাতে আধুনিক প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য আরো বেশি সুবিধা নিয়ে আসবে, স্বাভাবিক । কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসব বাধা দূর করা যায় এবং উন্নত দেশগুলোর মত বাংলাদেশি খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা যায় ।
বাংলাদেশি কৃষি গবেষণা:
কৃষি উন্নতির উপরে বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নতি অনেকাংশে নির্ভরশীল । তাই কৃষি কাজে বিজ্ঞান কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা কোন বিকল্প নেই । তা অত্যন্ত আসার কথা যে , বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইতিমধ্যে বহু নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল উদ্ভাবন করেছে, বহু কৃষি বান্ধব প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে এবং বহু ধরনের কৃষি পুণ্যকে বাজারজাতকরণের ব্যাপারে নতুন নতুন কৌশল বের করেছে। অর্থাৎ কৃষি গবেষণায় বাংলাদেশ কোন কোন ক্রমেই পিছিয়ে নেই । তবে এখন প্রয়োজন এইসব উদ্ভাবনকে দেশে সর্বত্র সহজলভ্য করে তোলা এবং কৃষককে এসব উদ্ধবানের সঙ্গে পরিচিত করে তোলা । বর্তমান সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কৃষকদেরকে নিয়মিতভাবে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে । তাতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার এবং এর যথাযথ সম্পর্কে অনেক টানিশ্চিত হওয়া যেতে পারে । শিক্ষিত জনবল কে কৃষি কাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারলেই কৃষি কাজের সঙ্গে তাদের যুক্ত করতে পারলে কাজটা অনেক সহজ হবে ।
কৃষি ও অতীত কথা:
কৃষি হল মানব সভ্যতার আদি পেশা । জীবনধারণের তাগিদে আদিম মানুষ প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ফলমূল গুহায় নিয়ে আস্ত । এবং বন জঙ্গলের পশু পাখির স্বীকার করত । প্রকৃতির উপর নির্ভরশীলতার কারণে তাদের খাদ্য সংকটে পড়তে হতো । দেখা দিতে বছরেরকিছু সময়ে তাদের কোন খাবার জুটত না । ফলে খাদ্যের সন্ধানে তাদের এক স্থান হতে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াতে হতো । এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আদিম মানুষ এক পর্যায়ে পশু পালন বীজ বপন করতে শিখে । এর ফলে খাদ্যদ্রব্য সুলভ হয় এবং জীবনযাত্রা হয়ে ওঠে অপেক্ষাকৃত সহজ । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পরিবর্তনের আগে পর্যন্ত কৃষি কাজ ছিল অত্যন্ত সময় কঠিন এবং প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ।
কৃষি ও বিজ্ঞান:
কৃষি কাজে বিজ্ঞানের অবদানে ধীরে ধীরে কৃষিক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটেছে । কৃষিকাজকে সহজ ও কম শ্রম শ্রাদ্ধ করতে কৃষি বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত গবেষণা করেছেন । ফলে একদিকে যেমন চাষ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আছে, ফসল নির্বাচন নতুন নতুন ফসল তৈরি কাজে অগ্রগতি হচ্ছে । কৃষি বিজ্ঞানের এসব গবেষণা পৃথিবীকে আজ শস্য ও ফসল সমৃদ্ধি করে তুলেছে । পৃথিবীর মানুষের জন্য এখন ততটা ফসল দরকার তার চেয়ে অনেক বেশি ফসল পৃথিবীতে ফলছে । পুরনো পুরনো প্রযুক্তি লাঙ্গল মই পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাক্টর । উদ্ভাবিত হয়েছে উন্নত জাতির বীজ ও উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত । এতে অল্প সময়ে ও অল্প পরিশ্রমে অধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। ফসলভীজ উৎপাদন সংরক্ষণে বিজ্ঞান সহযোগিতা করেছে । পশুপাখি মাছের রোগ জনিত মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে কৃষি চিকিৎসার কারণে । কৃষিবিজ্ঞান প্রযুক্তি কৃষিকাজের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে ।
উন্নত বিশ্বে কৃষি:
উন্নত দেশগুলোর কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান নির্ভরশীল। জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে তোলা ফসল তোলা পর্যন্ত সমস্ত কাজই রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি যেমন, ফসল কাঠা যন্ত্র, ফসল বাধা যন্ত্র, ও বিভিন্ন ধরনের কৃষি পূর্ণ ইত্যাদি উন্নত দেশগুলোর কৃষি ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয়। যুক্তরাষ্ট্র , কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া ইত্যাদি উন্নত দেশগুলো ট্রাক্টরের মাধ্যমে একদিনে ১০০ একর জমি চাষ করা সম্ভব হয় ।
মানব জীবনে কৃষির গুরুত্ব:
মানুষের অস্তিত্বে সাথে কৃষি সরাসরি জড়িত। মানুষের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক চাহিদা হল খাদ্য , আর এই খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কিত কাজই হলো কৃষিকাজ। বর্তমান যুগে কৃষি অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি । কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতি ও স্বয়ংসম্পূর্ণ তার উপর নির্ভর করে দেশের সার্বিক উন্নতি ।
কৃষির বিভিন্ন শাখায় বিজ্ঞান:
কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আশীর্বাদে ফসলের ক্ষেত্রগুলো আজ পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত উন্নত খাবার গুলো আজ বিস্ময়কর পরিমাণে দুধ, মাংস ডিম ইত্যাদি উৎপন্ন করেছে এবং বাড়তি জনসংখ্যার খাদদের চাহিদা মিটাচ্ছে। ভবিষ্যতে কৃষিক্ষেত্রে জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে ।
কৃষি ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ:
বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু কৃষি কাজের জন্য উপযোগী। কিন্তু উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশি কৃষিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রযুক্তিগতবিপ্লব হয়নি। তবে বর্তমানে অল্প হলেও কৃষিক্ষেত্রে সফলতা এসেছে। গবেষণার জন্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু ইন্সটিটিউট , আর ইত্যাদি ।
উপসংহার: কৃষি কাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দিন দিন মজবুত হচ্ছে । বাংলাদেশের সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । বাংলাদেশের অগ্রগতিকে টেকসই করতে প্রয়োজন কৃষি উপর নির্ভরশীল । সবার আগে দরকার শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে কৃষি পেশা আকৃষ্ট করা এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠী কৃষিকাজের সঙ্গে সংযুক্ত করা । কৃষিকাজের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্পর্কে মজবুত করতে পারলেই কৃষির উন্নত হবে । বিজ্ঞান অসম্ভবকে সম্ভব করেছেবর্তমান যুগে । আমাদের এই সুজলা সফলা দেশে বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহারে কৃষি ক্ষেত্রে এনে দিতে পারে অনেক সাফল্য ।