চলে এলো মাহে রমজান পবিত্র এই মাসে মুসলমানরা আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে নাজাত রহমত এবং বরক ত বরকত পেয়ে থাকেন। রমজানের এই মাস হচ্ছে এবাদতের মাস। আল্লাহ পাকের কাছে এবং মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় মাস। রমজানে যত গুরুত্বপূর্ণ এবাদত রয়েছে তার মধ্যে তারাবির নামাজ অন্যতম। আমরা মুসলমানেরা তারাবির নামাজ খুব গুরুত্বসহ পড়ে আদায় করে থাকি। অনেকেই এমন আছে যারা তারাবির নামাজের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে কম জানি। তাই আজকে আমরা তারাবির নামাজ সম্পর্কে খুঁটিনাটি সবকিছু জেনে নেব।
তারাবির নামাজের নিয়ম
তারাবি একটি আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে আরাম, প্রশান্তি অর্জন, বিশ্রাম নেওয়া, বিরতি নেওয়া ইত্যাদি। যেহেতু তারাবির নামাজে চার রাকাত পর পর বিরতি নিতে হয় তাই এই নামাজের নাম তারাবি। সাধারণত তারাবির নামাজে চার রাকাত শেষ হওয়ার পর বিরতি নেওয়ার সময় হচ্ছে চার রাকাত নামাজ পড়তে যতটুকু সময় লেগেছে ততটুকু। তারাবির নামাজ আদায় করা আবশ্যকীয় একটি আমল কারণ এই নামাজ আদায় না করলে গুনাহগার হতে হবে।
যাই হোক আমরা এবার তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে একটু আলোচনা করে নিই। আমাদের দেশে দুই ধরনের তারাবির নামাজ এর প্রচলন রয়েছে। একটি হচ্ছে খতম তারাবি যেটাতে পবিত্র কুরআন মাজীদ পুরো রমজান মাসে খতম করা হয় বা সম্পূর্ণটা পড়া হয়। অন্যটা হচ্ছে সূরা তারাবি যেখানে পবিত্র কোরআনের যে কোন সূরা দিয়ে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। সুরা তারাবির তুলনায় খতম তারাবীর সওয়াব বেশি। ইসলামে উভয় পদ্ধতি অনুমোদিত রয়েছে।
তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম হচ্ছে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার পর দুই রাকাত সুন্নত আদায় করতে হবে এবং এরপর তারাবির নামাজ ২০ রাকাত আদায় করে বেতের নামাজ পড়তে হবে। তারাবির নামাজ মোট ২০ রাকাত আদায় করতে হবে। যেখানে দুই রাকাত করে নামাজ সম্পন্ন করতে হবে।
তারাবির নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে। আবার দুই রাকাত নামাজ পড়ে সালাম ফিরিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। অর্থাৎ প্রতি চার রাকাত পর পর বিশ্রাম নিতে হবে। বিশ্রামের সময় জিকির-আজগার, তাসবিহ তাহলিল , দোয়া দরুদ পড়তে হবে।
যদিও ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্য সকল নামাজ একাকী আদায় করা উত্তম কিন্তু তারাবির ক্ষেত্রে জামাতবদ্ধভাবে আদায় করার অনুমতি রয়েছে এটি শরীয়ত সম্মত। মহাদ্দিসগণ বলেন তারাবি একাকী আদায় করার চেয়ে জামাতবদ্ধভাবে আদায় করা উত্তম। কারণ আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম নিজেও তারাবির নামাজ জামাতের মাধ্যমে আদায় করেছেন এবং জামাতে আদায়ের ব্যাপারে তিনি আমাদেরকেও তাগিদ দিয়েছেন।
তারাবির নামাজের নিয়ত
ইতিমধ্যে আমরা অনেকেই জেনেছি যে নামাজের জন্য অথবা যেকোনো এবাদতের জন্য আলাদা করে নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। তারাবির নামাজের নিয়তের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। যেহেতু নিয়ত হচ্ছে মনের ব্যাপার অর্থাৎ মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করলেই নিয়ত হয়ে যায় তাই তারাবির নামাজ পড়ার ক্ষেত্রেও আলাদা করে নিয়তের দোয়া পড়ার প্রয়োজন নেই।
শুধুমাত্র বাংলায় মনে মনে আমি ক্যাবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবির সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করছি আল্লাহু আকবার বললেই তারাবি নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে।
তারাবির নামাজের দোয়া
سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.
উচ্চারণ: ‘সুবহানাজিল মুলকি ওয়ালমালাকুতি সুবহানাজিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়ালহাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারুতি; সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানুমু ওয়া লা ইয়ামুতু, সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাববুনা ওয়া রাব্বুন মালাইকাতি ওয়ার রূহ। ’
অর্থ: আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্তা। ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব, কখনো ঘুমায় না এবং চির মৃত্যুহীন সত্তা। তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক, ফেরেশতাকুল এবং জিবরাইলের (আ.) প্রতিপালক।
তারাবির নামাজের দোয়া ছবি
তারাবি নামাজের মোনাজাত
اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’
তারাবির নামাজের মোনাজাত সাধারণত নামাজ শেষ করার পর পড়া হয়। অনেকে আছে চার রাকাত পর পর মোনাজাত আদায় করেন। একটা বিষয় উল্লেখ করে রাখা জরুরী যে যদি আমরা এই মোনাজাত না পড়ে তাহলে নামাজ হবে না এ ধরনের ধারণা রাখলে সেটা ভুল হবে। এই মোনাজাতের সঙ্গে তারাবির নামাজের কোন সম্পর্ক নেই। মোনাজাতটি ছাড়া অন্য মোনাজাত করলেও নামাজ হয়ে যাবে। এই মোনাজাত পড়লে নামাজ হবে না এমন ধারণা করা ভুল আবার এই মোনাজাত পড়লে গুনাহ হবে না। মনোযোগ হচ্ছে আল্লাহ পাকের দরবারে কোন কিছু চাওয়া পাওয়া থাকলে সেটার দরখাস্ত করা। সেই হিসেবে এই মোনাজাতের শব্দগুলো অনেক স্মৃতি মধুর এবং উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সেজন্যই মূলত এই মোনাজাতটি প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। তবে এই মোনাজাতটি তারাবি নামাজের কোন অংশ নয়