Health

ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার | ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাবে যেসব খাবার

0 min read

ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার

আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য এবং ক্ষুধা নিবারণের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। খাবারগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান ছাড়াও খনিজ পদার্থ থাকে।  এই খনিজ পদার্থ গুলোর মধ্যে অনেকগুলো খনিজ পদার্থ রয়েছে যেগুলো আমাদের দেহের জন্য একেবারেই আবশ্যকীয়।  এরকম একটি হচ্ছে ক্যালসিয়াম। সুস্থ হওয়ার এবং সুস্থ পেশী গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে আমাদের দেহের জন্য।  তাই আমরা এই আর্টিকেলে আজকে ক্যালসিয়াম নিয়ে আলোচনা করব এবং জানার চেষ্টা করব কি কি খাবারের ক্যালসিয়াম রয়েছে এবং ক্যালসিয়াম আমাদের কি পরিমান প্রয়োজন। 

ক্যালসিয়ামের উপকারিতা

ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার নিয়ে আমরা অবশ্যই আলোচনা করব তবে তার পূর্বে আমরা জেনে নেই ক্যালসিয়ামের উপকারিতা আসলে কি।  যুক্তরাষ্ট্রের একজন রেজিস্টার্ড পুষ্টিবিদ বলেন, শরীরের প্রায় প্রতিটি কুশে কোন না কোন ভাবে ক্যালসিয়াম ব্যবহার করে।  ক্যালসিয়াম শক্তিশালী দাঁত গঠন করে এবং হাড় তৈরিতে প্রায় ৯৯% ভূমিকা রাখে এই ক্যালসিয়াম।  স্নায়ুতন্ত্রের বেশি গঠনের ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  এছাড়া রক্ত জমাট বাঁধা ও হার ভঙ্গুর রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ক্যালসিয়াম এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের দেহে ক্যালসিয়ামের চাহিদা

নিউইয়র্কে এর একজন রেজিস্টার্ড পুষ্টিবিদ বলেন, অন্যান্য পুষ্টির মতোই ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বয়স এবং লিঙ্গ সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে।  সাধারণত একজন ব্যক্তির ক্যালসিয়ামের চাহিদা ঘরে প্রায় এক হাজার মিলিগ্রাম।  তবে কিশোরী এবং ৭০ বছরের বেশি বয়স্কদের এর চেয়ে বেশি প্রয়োজন।  তবে আমাদের এটা জেনে রাখা উচিত যে ক্যালসিয়ামের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সাথে সাথে ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।  ভিটামিন ডি সাধারণত রক্ত থেকে হারে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে থাকে।  তাই ভিটামিন  ডি এর অভাবে দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়।  আমরা বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার ছাড়া সূর্যের আলোতে গেলে আমাদের শরীর ভিটামিন উৎপন্ন হয়।

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

আমরা এবার ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার নিয়ে আলোচনা করব।  অনেক ধরনের  খাবারাই ক্যালসিয়াম রয়েছে।  তবে যেহেতু আমাদের ক্যালসিয়াম ঘাটতির জন্য ক্যালসিয়াম নির্ভর খাবার খাওয়া উচিত তাই আমরা জেনে নিব ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার এর তালিকা সম্পর্কে।

দুধ

ক্যালসিয়ামের জন্য দুধ একটি উত্তম নাম।  কারণ দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে।  সাধারণত এক কাপ গরুর দুধে ৩০০ থেকে ৩২৫ মিলিগ্রাম পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে যা আমাদের দৈনিক ক্যালসিয়াম চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ।  এছাড়াও দুধে যেহেতু বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে তাই ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমরা অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও এই  দুধ থেকে পেয়ে যাব।

মটর

অনেক সময় আমাদের সাধ্যের মধ্যে চিন্তা করতে হয় পুষ্টির ব্যাপারটি।  যেহেতু আমাদের মধ্যে অনেকেই সচ্ছল নয় তাই আমরা যথেষ্ট দামি খাবার গুলো খেতে পারি না।  কিছু কম দামি খাবারের ভালো ভালো পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় সেটা আমাদের জানতে হবে।  এ জন্য আমরা ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে মটর কে পরামর্শে রাখবো।  মোটরের দানার মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম।    এক কাপ ছোলা জাতীয় মোটরে ২৪৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

বাদাম ও বিভিন্ন ধরনের   বিচি

বিভিন্ন বীজের মধ্যে উচ্চ ক্যালসিয়াম রয়েছে।  এগুলোর মধ্যে তিল,  সূর্যমুখী ও প্রতি অন্যতম।  তিলের বীজে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে।  এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ তিলের মধ্যে সাধারণত ৩৯১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে যা দৈনিক চাহিদার প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ।  কাঠ বাদাম নাস্তা হিসেবে খুব ভালো।  কার্ড বাদে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম।  প্রায় 246 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।  কাঠবাদাম ক্যালসিয়াম দেওয়ার সাথে সাথে ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করবে আপনার শরীরে।

দই

আমরা আগেই বলেছি  দুধ ক্যালসিয়াম জাতীয়  খাবার গুলোর মধ্যে খুব ভালো উৎসব।  যেহেতু দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় তাই এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে।  এটা প্রোবায়োটিক  হৃদ স্বাস্থ্য ভালো রাখে।  তাই আমাদের দৈনিক খাদ্য তালিকায় মাঝে মাঝে দুই থাকতে পারে।

শুকনো ফল

বিভিন্ন ধরনের শুকনো ফল যেমন খেজুর অথবা  বাদামে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।  এই শুকনা ফলগুলো খাওয়ার মাধ্যমে আপনি ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।  তবে যেহেতু শুকনো ফল আপনার স্বাস্থ্যর উন্নতি ঘটাতে পারে অর্থাৎ আপনি মোটা হয়ে যেতে পারেন তাই শুকনো ফল গ্রহণে আপনাকে সচেতন হতে হবে।

সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি

পালং শাক, সরষে শাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি, ফুলকপি ইত্যাদিও ক্যালসিয়ামের যোগান দিয়ে থাকে।  যেহেতু এগুলোর খুবই সহজলভ্য এবং এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায় তাই এগুলো থেকে আমরা ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারি।  তবে যে কোন শাকসবজি খাবার আগে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

বেরি

বেরি ক্যালসিয়ামে ভরপুর।  ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার নিয়ে কথা বলতে গেলে  বেরি কথা আসতেই হয়।  বাড়িতে ক্যালসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের  পুষ্টি উপাদান রয়েছে।  তাই  বেরি খাওয়া খুবই উপকারী।

খেজুর

খেজুর খুবই উত্তম একটি খাবার।  যা মুখরোচক এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণেও খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  খেজুরের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম সালফার আয়রন পটাশিয়াম ফসফরাস কপার এবং ম্যাগনেসিয়াম।  খুরমা খেজুর খেলে সেটা আরো ভালো কাজ করে।  খেজুর দেহের হার এবং দাঁতের গঠনে অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে।

ডাল

বিভিন্ন দানা জাতীয় খাবার সহ ডাল জাতীয়  খাবার ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার।  এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে।  তাই আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বিভিন্ন ধরনের ডাল জাতীয় খাবার থাকতে পারে।

কমলা

ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধএই ফলটি প্রতিদিন নাস্তায় আপনারা রাখতে পারেন কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।  একটি মাঝারি আকৃতির কমলা থেকে ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

সয়াবিন

ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মাতাতে সয়াবিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি  উপাদান।   সয়াবিনের তেলে প্রচুর পরিমাণ  ক্যালসিয়াম রয়েছে।  ১৭৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।  আমরা সাধারণত প্রতিনিয়তই সয়াবিন তেল খেয়ে থাকি।  তবে খেয়াল রাখবেন যেন সয়াবিন তেলটি অবশ্যই সয়াবিনের হয় সেটি পামওয়েল বা অন্য কিছু না হয়।

মাছ

বিভিন্ন ধরনের মাছের প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।  সার্ডিন ও স্যামন মাছের প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে।  বিভিন্ন পুষ্টিবিদ এই  মাছগুলো খাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন যখন দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়।  এছাড়া এগুলো ফসফরাস ও ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস যা হার বেশি এবং দাঁত শক্ত করতে সাহায্য করে।

বেশি ক্যালসিয়াম গ্রহণে যে ধরনের ক্ষতি হতে পারে

প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালসিয়ামের চেয়ে যদি বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা হয় তবে তাকে সাধারণত  হাইপার  ক্যালসেমিয়া বলা হয়।  কারো হাইপার্ক্যালসেমিয়া হয় অথবা ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায় তবে সাথে সাথে তার ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিতে হবে।  একজন পুষ্টিবিদ জানান যে ক্যালসিয়াম গ্রহণের মাত্রা  দুই হাজার মিলি  গ্রামের চেয়ে বেশি যেন না হয়।  অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে সাধারণত প্রচুর পরিমাণ তৃষ্ণা পেয়ে থাকে এবং প্রস্রাবের পাশাপাশি বমি বমি ভাব হয়।  কুষ্ঠ কাঠিন্য দেখা দিতে পারে এবং প্রচুর পরিমাণ বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।  তাই ক্যালসিয়াম গ্রহণে যথেষ্ট পরিমাণ সচেতন থাকা উচিত।  বেশি ক্যালসিয়াম গ্রহণ কোনভাবেই উচিত নয়।

সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ক্যালসিয়াম

অনেক সময় খাবারের মাধ্যমে আমাদেরকে সামনের ঘাটতি পূরণ হয়ে ওঠে না তখন আমরা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে বিভিন্ন ঔষধের দোকান থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে থাকি।  তবে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম খাওয়ার চেয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা যুক্তি যুক্ত কারণ এতে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও পাওয়া যায়।  আবার যে কোম্পানির ক্যালসিয়াম ঔষধ হিসেবে আপনি গ্রহণ করলেন সেটা যথেষ্ট   সচেতনতার সাথে নাও তৈরি করতে পারে।  মানে সেটা নকল হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়।

যাহোক আজকে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার নিয়ে কথা বললাম।  যেহেতু এটি একটি স্বাস্থ্যের ব্যাপার এবং স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল তাই যথেষ্ট যত্নের সাথে ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করতে হবে।  অথবা যদি আপনার একান্তই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয় তবে আপনার জন্য কি ধরনের খাবার প্রয়োজন হবে সেটা শুধু আপনার ডাক্তার বলে দিলে সবচেয়ে বেশি ভালো হবে।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x