সংখ্যা পদ্ধতি কি

মানুষের প্রতিনিয়ত প্রয়োজন পড়ে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশের।  প্রাচীনকালেও মানুষ বিভিন্ন হিসাব নিকাশের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে।  একসময় মানুষ হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে গুণে হিসাব নিকাশ করতো।  এমনকি তারা হিসাব-নিকাশের জন্য পাথর, দড়ি, দাগ কাটা, এমনকি পাতায় লিখে রাখত।  তবে সময়ের সাথে সাথে মানুষের হিসাব-নিকাশের ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে।  মানুষ বিভিন্ন চিহ্ন সংবলিত বর্ণ এবং প্রতীকের সাহায্যে অংক তৈরি করেছে এবং সেগুলো ব্যবহার করে সংখ্যা তৈরি করা শিখেছে। 

এই সংখ্যাগুলো বিভিন্নভাবে হিসাব করা হয়ে থাকে।  আমরা যেভাবে হিসাব করে থাকি আসলে কি প্রাচীনকালেই দশ ভিত্তিক পদ্ধতিতে হিসাব করা হতো।  বা এই পদ্ধতি ছাড়া কি আর কোন পদ্ধতি নেই।  এরকম বিভিন্ন সংখ্যা পদ্ধতি নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আসতে পারে।  আজকে আপনাদের মনের সেই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।  তাহলে সংখ্যা পদ্ধতি কি এ সম্পর্কে জানতে হলে  এই আর্টিকেলটি এক নজরে পড়ে নিন।

সংখ্যা পদ্ধতিতে কি

যে পদ্ধতিতে সংখ্যা গণনা করা হয় বা সংখ্যা প্রকাশ করা হয় সেই পদ্ধতিকেই বলা হয় সংখ্যা পদ্ধতি।  বিভিন্ন সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে   বিয়োগ  যোগ গুন ভাগ ইত্যাদি করা যায়।  তবে বিভিন্ন সংখ্যা পদ্ধতি বিভিন্ন নিয়ম মেনে চলে।  তবে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে একটা সংখ্যা পদ্ধতি থেকে অন্য সংখ্যা পদ্ধতিতে রূপান্তর করার।

সংখ্যা পদ্ধতির প্রকারভেদ

সংখ্যা পদ্ধতি প্রধানত চার ভাগে বিভক্ত।

  •  দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি
  •  বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি
  •  অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি
  •  হেক্সাডেসিমেলসংখ্যা পদ্ধতি

আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজে সাধারণত দশমিক  সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকি।  আর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্র যেমন কম্পিউটার বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে।

দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বা ডেসিমেল নাম্বার

দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে দশটি অংক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  এগুলো হলো 0,1,2,3,4,5,6,7,8,9

এই দশটি প্রতীক ব্যবহার করেই সাধারণত সংখ্যা গঠন করা হয়ে থাকে । আর এই পদ্ধতিতে দশটি সংখ্যা ব্যবহার করা হয় বলেই এর নাম হচ্ছে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি।  এই  সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি হচ্ছে ১০ ।

এ সংখ্যা পদ্ধতিতে সাধারণত একক দশক শতক হাজার এভাবে লেখা হয়ে থাকে।  প্রতিক্ষেত্রে বাম দিকের চেয়ে ডানদিকের সংখ্যার মান ১০ গুন করে বৃদ্ধি পায়। যেমন 2653 এই সংখ্যাটি বিবেচনা করুন।  এক্ষেত্রে তিন হচ্ছে একক স্থানীয় অংক, পাঁচ হচ্ছে দশক স্থানীয় অংক, ৬ হচ্ছে শতক স্থানে অংক, এবং দুই হচ্ছে হাজার স্থানীয় অংক।

এখানে

3 একক স্থানীয় অংক তাই 3*1=3

5  দশক স্থানীয় অংক তাই 5*10=50

6  শতক স্থানীয় অংক তাই 6*100=600

2  হাজার স্থানীয় অংক তাই 2*1000=2000

 

এখন সবগুলো সংখ্যাকে আপনি যোগ করে নিলেই  কাঙ্খিত রেজাল্ট 2653 পেয়ে যাবেন।

বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি

বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে সাধারণত দুটি অংক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  এগুলো হচ্ছে শূন্য (0)এবং এক(1)। যেহেতু মাত্র দুইটি অংক ব্যবহার করা হয় এই সংখ্যা পদ্ধতিতে তাই এই সংখ্যা পদ্ধতির নাম হচ্ছে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি।  সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে টমাস  হেরিয়ট প্রথম বাইনারি সংখ্যা কাজে লাগান।  আধুনিক  ডিজিটাল যন্ত্রপাতিগুলোতে সাধারণত বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।  যেমন কম্পিউটার আমাদের মুখের ভাষা বুঝতে পারে না।  কিন্তু সে বুঝতে পারে ইলেকট্রিসিটি অন এবং অফ হওয়াকে।  বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে 1  কে ধরা হয় ইলেকট্রিসিটি অন এবং 0 কে ধরা হয় ইলেকট্রিক সিটি অফ।  এখন কম্পিউটার যেহেতু শুধু ইলেকট্রিসিটি অন এবং অফ বুঝতে পারে তাই বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে কম্পিউটারের সকল নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে।  যদিও এখন উন্নত মানের কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে কিন্তু প্রত্যেক ল্যাংগুয়েজ সবশেষে 0 এবং 1 তে কনভার্ট করা হয় এবং তারপর কম্পিউটার তার হিসাব নিকাশ করে।  আবার আমরা যেহেতু বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিকে সহজে বুঝতে পারি না তাই কম্পিউটার ফলাফল প্রকাশ করার সময় বাইনারি পদ্ধতির সংখ্যাকে ডেসিমেল পদ্ধতিতে প্রকাশ করে।  নিচে দশমিক পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত কয়েকটি বর্ণের সংখ্যা দেয়া হলো

বাম পাশে দশমিক সংখ্যা এবং ডান পাশে বাইনারি সংখ্যা

0=0

1=1

2=10

3=11

4=100

5=101

6=110

7=111

8=1000

9=1101

10=1110

11=1010

12=1011

অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি

যে পদ্ধতিতে আটটি অংক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয়  সংখ্যা কে প্রকাশ করার জন্য তাকে অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়।  অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতিতে 0,1,2,3,4,5,6,7 পর্যন্ত অংক গুলোকে ব্যবহার করা হয়।  যেহেতু এখানে শূন্য থেকে সাত পর্যন্ত আটটি অংক রয়েছে তাই একে অক্টাল পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।  অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি হচ্ছে 8।   ডেসিমেল পদ্ধতির 8 কে যদি অক্টাল পদ্ধতিতে লিখতে যান তবে আপনাকে লিখতে হবে 10।  কারণ এক্ষেত্রে যেহেতু সর্বশেষ 7 সর্বোচ্চ নাম্বার তাই সেভেন এর পরে আর কোন অংক না থাকায় আবার ওয়ান এরপরে জিরো বসাতে হবে যেটা এইট কে নির্দেশ করবে।  এবার আপনি যদি  দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির নাইন কে অক্টাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করতে চান তবে আপনাকে লিখতে হবে 11।  অর্থাৎ আপনাকে প্রথমে একক বসাতে হবে এবং তারপর এক এক করে বসিয়ে যাবেন এবং শেষ পর্যন্ত 7 পর্যন্ত বসাতে পারবেন।  এরপর যখন সেভেন পর্যন্ত বসানো শেষ হয়ে যাবে তখন বাম পাশে যে একক সংখ্যা ছিল ওয়ান সেটার জায়গায় লিখতে হবে ২ এবং তার ডান পাশে একটি জিরো দিতে হবে।  অর্থাৎ17  এর পরের সংখ্যাটি হবে 20।

হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি

যে সংখ্যা পদ্ধতিতে ১৬ টি অংক ব্যবহার করা হয় তাকে হেক্সারডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।  সাধারণত সংখ্যা পদ্ধতিতে 0,1,2,3,4,5,6,7,8,9,A,B,C,D,E,F পর্যন্ত সংখ্যা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  যেমন এরকম একটি সংখ্যা হতে পারে যে 76A । হেক্সিমেল  সংখ্যা এর ভিত্তি হচ্ছে ১৬।  অর্থাৎ ১৬ টি অংক যখন শেষ হয়ে যায় তখন আবার একক বসিয়ে শূন্য দিতে হয়।  অর্থাৎ হেক্সিমেল পদ্ধতিতে আপনি যদি দশমিক পদ্ধতির অথবা আম্মাদের ব্যবহারিক ১৭ লেখতে চান তবে আপনাকে লিখতে হবে 10 ।

আপনারা জানতে চেয়েছেন সংখ্যাপদ্ধতি কি।  তাই আজকে সংখ্যা পদ্ধতি কি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমে উপরে যে চারটি সংখ্যা পদ্ধতি নিয়ে কথা বলেছি সবগুলোই ছিল পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি।  যেহেতু আমরা সবাই খুবই দ্রুত সংখ্যা পদ্ধতি কি জানতে চেয়েছি তাই যেগুলো দরকারই বা গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোই উপরে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।  কিন্তু আপনার যদি আরেকটু হাতে সময় থাকে আপনি যদি নন পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি কি জানতে চান তবে  পড়তে থাকুন।

নন পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি

যে সংখ্যা পদ্ধতিতে সংখ্যার কোন স্থানীয় মান নেই এবং অবস্থানের ভিত্তিতে পরিসংখ্যার মানের কোন পরিবর্তন হয় না তাকে নন পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।  ধরুন X=5 , এখন আমি এক্স যেখানেই বসাই না কেন সেখানেই তার পরিবর্তে 5 বসানো যাবে।  কারণ এটি একটি নন পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি এবং এর স্থানীয় মান নেই।  এর শুধু স্বকীয়মান ফাইভ রয়েছে।

আজকের আর্টিকেলটির বিষয় ছিল সংখ্যা পদ্ধতি কি এই সম্পর্কে।  সংখ্যাব পদ্ধতিতে কি এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।  কিন্তু যারা সংখ্যা পদ্ধতি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে চান তাদেরকে আরো ভালোভাবে সময় নিয়ে পড়তে হবে।  যেহেতু অনেকে শুধু সংখ্যা পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা রাখতে চায় তাদের জন্য এটি।  এছাড়াও সংখ্যা পদ্ধতির  রূপান্তর যোগ বিয়োগ গুন ভাগ সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যালকুলেশন রয়েছে।  সংখ্যা পদ্ধতি কি এটি ভালোভাবে বুঝতে পারলে আপনি সেগুলো ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন বলে আশা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *