গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম

গর্ভাবস্থায় ঘুমানো

গর্ভাবস্থার সম্পূর্ণ সময়টা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই স্পর্শকাতর একটা সময়।  কেননা এই সময়ে পেট ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এই কারণে ঘুমের সময়,কিংবা  অন্যান্য অনেক সময় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।  আপনি যখন জানতে পারবেন আপনি গর্ভবতী ঠিক তখন থেকেই আপনার ঘুমের দিকটা বিবেচনা করতে হবে।  কেননা আপনি আগে যেভাবে ঘুমাতেন সেইভাবে ঘুমালে আপনার বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।  কিংবা আপনার শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।  তাই গর্ভকালীন সময় ঘুমানোর কিছু সঠিক নিয়ম রয়েছে।
আমাদের আজকের আর্টিকেল গর্ভবতী মায়েদের জন্য।  কেননা আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।  তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আর্টিকেল গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।  নিজে গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়মগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম

  1. গর্ভাবস্থায় চিত হয়ে শোয়া উচিত নয়।  চিত হয়ে শুলে শরীরের সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে। কেননা আপনি যদি গর্ব অবস্থায় চিত হয়ে ঘুমান তাহলে বাচ্চার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়ে থাকে।  আর আপনি যদি চিৎ হয়ে ঘুমান তাহলে আপনারও নিশ্বাস নিতে সমস্যা হবে।  তাই গর্ভবতী অবস্থায় অবশ্যই চিৎ হয়ে ঘুমাবেন না।
  2. গর্ভাবস্থায় বামপাশে হয়ে ঘুমানোর কথা বেশি বলা হয়ে থাকে।  কারণ এইভাবে শোয়াতে লিভার অতিরিক্ত ওজন বিশিষ্ট শরীরের চাপ থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
  3. বাম কাত হয়ে শুলে রক্ত সঞ্চালন সহজ তোর হয়। , গর্ভের শিশুর রক্ত সরবরাহ মায়ের হাত থেকে সরস্তর হয়।
  4. গর্ভাবস্থায় কোন সময় উপর হয়ে শোয়া উচিত নয়।  কেননা উপর হয়ে শুলে পাকস্থলীতে ও জরায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি হয়।  যা কিনা খাবার হজমের সমস্যা করে
  5. গর্ভাবস্থায় উপর হয়ে শুলে বাচ্চার নাড়াচাড়া করতে ব্যাঘাত ঘটে এবং মায়ের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়।  তাই গর্ভাবস্থায় অবশ্যই উপর হয়ে শুবেন না।
  6. গর্ভাবস্থায় আপনি চাইলে ডান পাশ বা বাম পাশ দুই পাশেই ঘুমাতে পারেন এতে কোন মানা নেই। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে বাম পাশে ঘুমালে বেশি উপকার পাবেন।
  7. সাধারণত বলতে গেলে গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম হলো বাম পাশ হয়ে ঘুমানো।  এতে গর্ভবতী মা এবং সন্তান দুজনই উপকৃত হবেন।

গর্ভাবস্থায় ঘুম না হওয়ার কিছু কারণ

কিছুক্ষণ আগেই আমরা জেনেছি গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।  এই সঠিক নিয়ম গুলো সম্পর্কে জানলাম কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় গর্ভাবস্থায় ঘুম আসে না এই কারণগুলো সম্পর্কে জানলাম না বা অবগত হলাম না।  তাহলে তো গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম জেনে কোন লাভ হবে না।  তবে দেরি না করে জানা যাক গর্ভ অবস্থায় ঘুম না হওয়ার কিছু কারণ সম্পর্কে।
  1. গর্ভাবস্থায় ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ আসার ফলে ঘুমের প্রবলেম হয়।  কেননা অনেক সময় দেখা যায় রাতে দূর থেকে তিনবার প্রস্রাব করার জন্য ঘুম থেকে উঠতে হয়।  যার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত হয় একটানা আপনার ঘুমটা পরিপূর্ণ হয় না।  কিন্তু গর্ভাবস্থায় ঘনঘন প্রসাব হওয়াটা স্বাভাবিক।
  2. গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব হওয়া বা ঘন ঘন বমি হওয়ার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।  আর গর্ভবস্থায় বমি হওয়াটা স্বাভাবিক।
  3. গর্ভাবস্থায়  ব্যাক পেইনের জন্য ভালো করে ঘুম হয় না।  কেননা যখনই ঘুমাতে যাবেন তখনই দেখবেন আপনার ব্যাক পেইন টা আগের তুলনায় আরেকটু বেড়ে গেছে বা আরো বেশি ব্যথা করছে।  যার ফলে আপনার ঘুমাতে অনেকটা সময় লেগে যায় কিংবা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।
  4. গর্ভকালীন অবস্থায় শেষের দিকে ব্রেস্ট পেইন হয়ে থাকে।  কারণ এই সময় ব্রেস্ট বড় হতে থাকে।  আর এই অস্বাভাবিক বড় হওয়ার ফলে ব্রেস্টে অনেক ব্যথা হয়ে থাকে।  আর এই ব্যথার কারণে রাতে ঠিকঠাক মতো ঘুম হয় না।
  5. গর্ভাবস্থায় আপনার বারবার ক্ষুধা লাগে।  আর এই বারবার খুদা লাগার কারণে আপনাকে ঘুম থেকে উঠে খাবার খেতে হয়।  যা কিনা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
  6. গর্ভবতী অবস্থায় এসিডিটির সমস্যাটা অনেক বেশি হয়ে থাকে।  অনেক সময় এই সমস্যাটার কারণে বুক জ্বালাপোড়া করে।  আর এই বুক জ্বালাপোড়া করার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।  তাই অনেক সময় ডাক্তাররা গর্ভবতী মায়েদের সকালে এবং রাতে এসিডিটির ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
  7. গর্ভাবস্থায় পায়ে অস্বাভাবিক ব্যথা হয়ে থাকে।  অনেক সময় দেখা যায় পায়ে পা নিয়ে আসে পা ফুলে যায় শরীর ফুলে যায়।  তখন শরীরে পায়ে প্রচুর ব্যথা হয় আর এই ব্যথা হওয়ার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
  8.  গর্ভাবস্থায় আপনার হরমোন ক্রমাগত চেঞ্জ হতে থাকে।  আর এই হরমোন চেঞ্জ হওয়ার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর ভালো কিছু টিপস

এতক্ষণ আমরা জানলাম গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।  এখন আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর ভালো কিছু টিপস সম্পর্কে। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের 8 থেকে 10 ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।  আর আপনি চাইলে দিনে দুই ঘন্টা এবং রাতে ৮ ঘণ্টা এভাবে ভাগ করে ঘুমাতে পারেন।  একজন গর্ভবতী মায়ের ঘুমের স্থান হতে হবে কোলাহলমুক্ত, আরামদায়ক, কম আলো কিন্তু ভালো বাতাস চলাচল করে এমন স্থান। গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর ভালো কিছু টিপস নিচে দেওয়া হল।
  • খাবারের সাথে সাথে ঘুমানো ঠিক না।  শুধু গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই কথাটা প্রযোজ্য নয় এই কথাটা সকলের জন্যই প্রযোজ্য।  কেননা একজন মানুষ যদি খাবার খাওয়ার সাথে সাথে ঘুমায় তাহলে এটা তার শরীরে খারাপ প্রভাব ফেলবে।
  • আপনি যখন ঘুমাবেন তখন চা কফি বা ক্যাফিন জাতীয় খাবার খাবেন না।  তাছাড়া এই সকল খাবার গর্ভাবস্থায় কম খাওয়াটাই ভালো।  শুধু গর্ভকালীন সময় না এছাড়াও আপনি যখন ঘুমাবেন।  তখন এই সকল জাতীয় খাবার খাবেন না।  কেননা এই খাবারগুলো আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
  • গর্ভবতী মায়ের সব সময় ঢিলাঢালা নরম আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা উচিত।  কেননা গর্ভকালীন সময়ে খুব দ্রুত শরীরের পরিবর্তন ঘটে।  এই সময় যদি আপনি শরীরের সাথে ফিটিং জামা কাপড় পরলেন তাহলে আপনার শরীর বৃদ্ধি হওয়ায় ব্যাঘাত ঘটবে।  তাই এই সময় চেষ্টা করবেন ঢিলাঢালা জাতীয় জামাকাপড় পড়া।
  • গর্ভকালীন অবস্থায় আপনি যখন ঘুমাবেন অন্তত তার এক ঘণ্টা আগে এক গ্লাস দুধ খাবেন।  কেননা দুধ খাওয়ার সাথে সাথেই ঘুমানো উচিত না।  এটা আপনার শরীরের খারাপ প্রভাব ফেলবে।
  • গর্ভকালীন অবস্থায় আপনি কিছু হালকা  ব্যায়াম করতে পারবেন।  এই হালকা ব্যায়াম আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে।  গর্ব অবস্থায় কোন সময় ভারী জাতীয় কোন ব্যায়াম করবেন না।  আর আপনি চাইলে গর্ভ অবস্থায় প্রতিদিন 30 মিনিট হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।  যেমন হাঁটাহাঁটি করা, একটু উঠাবসা করা ইত্যাদি।
  • গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর অন্তত এক ঘন্টা আগে যে কোন ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।  কেননা গর্ভকালীন অবস্থায় এমনিতেই কোন ধরনের ডিভাইস চালানো উচিত না।  কিন্তু এখন আমরা ডিভাইস ছাড়া একদিনও বা এক মুহূর্ত চলতে পারি না।  তাই আপনি চেষ্টা করবেন ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে যে কোন ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রাখার।
  • গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর জন্য যে জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল একটা আরামদায়ক বালিশ এবং বিছানা।  আপনার বালিশটা যদি আরামদায়ক না হয় তাহলে আপনি ঘুমিয়ে শান্তি পাবেন না।  তাই চেষ্টা করবেন একটি আরামদায়ক বালিশ সংগ্রহ করার।
  • গর্ভবতী অবস্থায় অনেক সময় পায়ে ব্যথা হয় এবং পিঠে ব্যথা হয়।  এ সময় ঘুমাতে গেলে আরও বেশি এই ব্যথাগুলা বাড়ে।  তাই আপনি চাইলে পায়ের নিচে ও পিঠের নিচে বালিশ দিয়ে পা ও কোমরের ব্যথা থেকে আরাম পেতে পারেন।
  • গর্ভকালীন অবস্থায় একজন মায়ের বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা হয়ে থাকে।  আর এই দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘুমাতে দেয় না বা আপনার রাতের ঘুম নষ্ট করে দেয়।  তাই নিজের ভাবনা চিন্তা সব নিজের সঙ্গী কিংবা নিজের পিতা-মাতা বা বন্ধুর সাথে শেয়ার করুন।  এটা দেখা যাবে আপনার দুশ্চিন্তাও অনেকাংশে কমে গেছে এবং ঘুমও ভালোভাবে হবে।
বিষয়টি ছিল গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম। আপনারা সকলেই বিস্তারিত হবে জানতে পেরেছেন আশা করি এবং বুঝতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম গুলো সম্পর্কে। কেননা আপনি যদি একজন গর্ভবতী নারী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম গুলো সম্পর্কে জানতে হবে।  আর আপনি যদি গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম গুলো মেনে না ঘুমান তাহলে এটা আপনার ক্ষতি এবং আপনার বাচ্চার  জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।  অনেক সময় দেখা যায় আমাদের মা-বোনেরা এই সকল বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে লজ্জা পান বা কারো সাথে এই সকল বিষয় শেয়ার করেন না।  কিন্তু এখন আপনি ঘরে বসেই গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম আর্টিকেলটি পড়ে বিস্তারিতভাবে সকল কিছু বুঝতে পারবেন।  আশা করি আপনি আমাদের আজকের আর্টিকেল গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম সম্পর্কে পড়ে উপকৃত হয়েছেন। আপনাকে আমাদের আজকের গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক নিয়ম আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *