শীতে গাঁটের ব্যথা দূর করতে যা খাবেন
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আজ আমরা আপনাদের সাথেই শীতে গাঁটের ব্যথা দূর করতে যা খাবেন তা নিয়ে আলোচনা করব। অনেকেই আছে শীতে গাঁটের ব্যথা দূর করতে যা খাবেন তা জানে না। তাই তারা অনেক সমস্যায় ভোগে। তাদের হাতের নাগালে এই খাবারগুলো থাকা সত্বেও তারা বুঝতে পারে না যে শীতে গাঁটেরব্যথা দূর করতে যা খাবেন এই বিষয়ে। তাই আজ চলুন আপনাদের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করি।
শীতের সময় অনেকের ঘাটের ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে এই সমস্যা হতে পারে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ইউরিক এসিড এর স্বাভাবিক মাত্রা হলো পুরুষের ক্ষেত্রে 3.4 থেকে সাত এমজি/ এবং নারীর ক্ষেত্রে 2.4 থেকে 6 এমজি/ ডি এল ।
রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়লে বাত, বা কিডনিতে পাথর মতো মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। ইউরিক এসিডের মাত্রা কম থাকলেও হতে পারে বিভিন্ন সমস্যা। ইউরিক এসিডের মাত্রা 2 এমজি/ ডি এল বা এক এমজি/ 1dl- এর কম হলে মাল্টিপল ক্লোরোসিস , পারকিনসন এবং মোটর নিউরন এর মত রোগের ঝুঁকি থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইউরিক এসিড মাত্রা খাবারের উপরে নির্ভর করে। তাই শীতে গাঁটের ব্যথা দূর করতে যা খাবেন বা এই ব্যথা নিয়ন্ত্রণে খাবারের তালিকায় পরিবর্তন আনা জরুরি।
ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে গাঁটেরপাথর তৈরি হতে থাকে। যে কারণে কিডনিতে পাথর হতে পারে। রক্তে ইউরিক এসিড মাত্রানিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য খাবার পানীয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ইউরিক এসিড পিউরিন নামক পদার্থ থেকে তৈরি হয়। পিউরিন বেশি থাকে সামুদ্রিক খাবার, নির্দিষ্ট ধরনের মাংস, শুকনো মটরশুটি, বিয়ার বা ওয়াইন ইত্যাদিতে। কিছু খাবারে রয়েছে, যেগুলো খেলে শীতে গাঁটের ব্যথা দূর করতে যা খাবেন বা মুক্তি পাওয়া যায় চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।-
কমলা
শীতের সময়ের অন্যতম ফল হল কমলা। মেডিকেল নিউজ টুডে তথ্য অনুসারে, গাঁটের ব্যাথা দূর রাখতে কমলা বিশেষ কার্যকরী।উচ্চ ইউরিক এসিডের রোগীদের জন্য কমলা বেশি উপকারী। কমলায় থাকা ভিটামিন সি’র রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে কাজ করে। শীতে গাঁটের ব্যথার সমস্যা হলে নিয়মিত কমলা খাওয়া উচিত। নিয়ন্ত্রণে থাকবে ব্যথা।
চেরি
সুমিষ্ট ফল চেরি। ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে কার্যকরী। হেলপ্লাইন অনুসারে, গাঁটেরব্যথার আক্রান্তরা তালিকায় চেরি ফল যোগ করলে উপকার পাবেন। কারণ চেরি ফলের রয়েছে প্রদাহ বিরোধী গুন। যা ইউরিক এসিড বৃদ্ধির কারণে ব্যথা এবং ফোলা ভাব কমাতে কাজ করে।
আমলকি
ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে কাজ করে আমলকি। এই ফলে আছে প্রচুর ভিটামিন-সি। এছাড়াও আছে এন্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, এবং anti-inflammatory বৈশিষ্ট্য। আমলকি খেলে তাকেবল ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে না, সেই সঙ্গে আরও অনেক উপকার হয় আমলকি খেলে।
ডাবের পানি
ডাবের পানির অনেকগুলো উপকারিতার একটি হলো, এটি শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে কাজ করে। ওয়েবএমডি অনুসারে, ডাবের পানি খেলে তা উত্তর ইউরিক এসিড কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা শীত এলেই গাঁটেরব্যথায় ভুগছে থাকেন তাদের প্রতিদিন সকালে ডাবের পানি খাওয়া উচিত।
গ্রিন টি
গাঁটের ব্যথা দূর করতে অন্যতম কার্যকরী খাবার হলো গ্রিন টি। একটি গবেষণায় বলা হয়, শীতের সকালে নিয়মিত গ্রীন টি পান করলে তার শরীরে ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণ এর কাজ করে। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
পদিনা পাতার রস
পুদিনা পাতায় মেন্থল নামে একটি উপাদান আছে, যা ধনুষ্টংকার রোগ প্রতিরোধ এ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। এয়ারটেল পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা উপশম হয়। এমনকি মাথায় ব্যাথায় পুদিনাপাতা কপালে ব্যথা উপশম হয়।
মরিচের গুঁড়া ও নারিকেল তেলের মিশ্রণ
গাঁটের ব্যথা কমাতে ক্যাপসাইজ খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। লাল মরিচের মিলবেই ক্যাপসাইসিন। আধা কাপ নারকেল তেল এর সাথে দুই চামচ মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে 20 মিনিট ধরে মালিশ করতে হবে। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে জায়গাটা ভালো করে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। দিনে অন্তত তিন থেকে চারবার এভাবে মালিশ করলে গাঁটের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ও আদা
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর সঙ্গে আদার রস মিশিয়ে খাওয়া যায়। প্রয়োজন সামান্য মধু যোগ করা যেতে পারে। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার হালকা গরম পানি সহ খেতে হয়।
তিলের বীজ
তিলের বীজ ও ব্যথা সারাতে ভালো কাজ করে। এতে প্রচুর পরিমানের ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, মাথা ব্যথা ও পেশীর ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।এই তিলের বীজ খাওয়ার ফলে আমাদের গাঁটেরব্যথার সাথে সাথে শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথার উপশম্ ঘটবে।
গাজরের জুস
গাজরের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গাজরের জুস বানিয়ে তার মধ্যে পাতি লেবুর রস দিয়ে খালি পেটে প্রতিদিন সকালে খেলে উপকার্রৃ হবে। গাজরের জুস এমন একটি উপাদান যা খেতে সবারই ভালো লাগে। তাই আমরা যদি শীতকালে ব্যথা দূর করতে চাই অবশ্যই গাজরের জুস প্রতিদিন খেয়ে থাকবো।
ঠান্ডা গরম সেক
হট ওয়াটার ব্যাগ থাকলে ভালো। নইলে একবার ঠান্ডা পানিতে, একবার গরম পানিতে পা ডুবাতে হয়। এরকম 15 মিনিট করতে হবে। হট ওয়াটার ব্যাগ থাকলে 30 মিনিট সেক দিলে গাঁটেরব্যথার সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
রসুন
রসুনের মধ্যে রয়েছে ব্যথানাশক উপাদান সালফার। এটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পেশী ও গাঁটেরব্যথা ও ফোলা ভাব কমাতে বেশ উপকারী। এজন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়া ভালো। তাছাড়া আক্রান্ত স্থানে রসুন তেল গরম করে নিয়মিত মালিশ করা যেতে পারে।
হলুদ ও আধা
একগ্লাস পানিতে আদা ও হলুদ ফুটিয়ে নিয়ে আধা কাপ হলে নামিয়ে নিতে হবে। এবার থেকে নিয়ে মধু মিশিয়ে দিনে দুইবার পান করলে কমবে ব্যথা। শীতকাল খেতে পারলে সুস্থ থাকা হবে ইনশাল্লাহ।
আখরোট
আখরোটে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ তো আছেই, তাছাড়া এমন কিছু যৌগ আছে, যা আর্থ্রাইটিস এর সঙ্গে সম্পর্কিত প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং এর ওমেগা- 3 ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ বেশি। এই পুষ্টিগুণ ব্যথা কমায়।
পরিশেষে
শীতে গাঁটের ব্যথা দূর করতে যা খাবেন সব ধরনের খাবার আমরা উপরে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। আপনারা যদি শীতে গাঁটের ব্যথা দূর করতে যা খাবেন এ সম্পর্কে ধারণা পেতে চান। তা হলে অবশ্যই আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়বেন। তাহলে আপনারা এই বিষয়ে বুঝতে পারবেন। যদি আপনাদের এর বাইরেও আরো কিছু জানার ইচ্ছে বা আগ্রহ থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা এর সঠিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।