মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায়

মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায়

আসসালামুআলাইকুম প্রিয় পাঠক আজ আমরা আপনাদের সাথে মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করব। আমরা এটা লক্ষ্য করি যে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের মানসিক চাপ বা মানসিক চিন্তা রয়েছে। কিন্তু এই থেকে মুক্তি পাবার কোন রাস্তা বা পরিত্রান পাচ্ছে না। তাই আমরা আপনাদের কাছে মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় আপনাদের সামনে হাজির করছি। চলুন তাহলে শুরু করা যাক মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আলোচনা।

 লাইফস্টাইল ডেস্ক

দুশ্চিন্তা ও মানসিক কম বেশি সবারই থাকে।দুশ্চিন্তা প্রকট  হলে  শারীরিক নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। দুশ্চিন্তা দুই ধরনের। মৃদু ও তৃপ্ত ধরনের । মৃদু ধরনের চিন্তা সামলানোর ক্ষমতা সাধারণ মানুষের থাকে। তবে  গভীর চিন্তা শরীরের জন্য হুমকি স্বরূপ। দুশ্চিন্তার কারণে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ঘুম না হওয়া, পেটের সমস্যা, বুক ধড়ফড় করাসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের ফলে মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞের মতে, কিছু জটিল রোগে উচ্চ হল দুশ্চিন্তা। এ জন্য যতটা সম্ভব  চিন্তা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে:-

দুশ্চিন্তা কে প্রশ্রয় না দেয়া

জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, হতাশা ভর হতেই পারে। তবে এগুলোকে কখনোই প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। মনে করতে হবে, এগুলো আপনার সচেতন প্রচেষ্টাতেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এসব ব্যাপার নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন এবং কিভাবে দুশ্চিন্তা দূর হবে তা লিখে রাখুন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে মানসিক চাপের কারণ গুলো অনেকটা গোছানো হবে। তাতে সমাধান খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।

গান শোনা

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পছন্দের গান শুনতে পারেন। প্রিয় শিল্পীর গান এই সময় ভালো লাগবে। গবেষকরা বলেছেন, পছন্দের গান নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করা যেতে পারে। এতে একঘেয়েমি দূর হয়।

বই পড়া

জগতের সেরা বন্ধু হল বই। ভালো বই মনের  খাদ্যদাতা। ভালো বই পড়লে উৎসাহ বারে, মানসিক শক্তি ফিরে আসে, প্রতিদিন অন্তত অল্প সময়ের জন্য হলেও মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় বই পড়া দরকার।

পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে

পুষ্টির অভাব হলে মানসিক চাপ বেশি করে আঁকড়ে ধরে। তাই এই সময় পুষ্টিকর খাবারের প্রতি গুরুত্ব দিন। ফাস্টফুড বাদ দিন। বেশি মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো তখন। ফলমূল খান। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ করুন।

অত্যন্ত কার্যকরী হচ্ছে ব্যায়াম

মানসিক চাপ শিথিল করতে ব্যায়ামের জুড়ি নেই। ব্যায়াম করলে স্নায়ু সচল হয়। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায় এবং হতাশা কমে যায়। নতুন কাজের উদ্যম ও বাড়ে। চিন্তায় ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রেহাই পেতে অবশ্যই আমাদের ব্যায়াম করতে হবে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম

মানসিক চাপ থাকলে অনেক সময় ঠিকমতো ঘুম হয়না। হলে সারাদিন ঝিমুনি ভাব থাকে। ক্লান্ত লাগে, পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম পারলে স্বাস্থ্য ও মন দুটোই ভালো থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম জরুরী।

 আলো,  বাতাসে থাকা ভালো

শোবার ঘর যতটা সম্ভব খোলামেলা রাখতে হবে। কারণ এই শোবার ঘরে যাতে খুব সহজে আলো-বাতাস দ্রুত প্রবেশ করতে পারে। তাই আমাদের শোবার ঘর সব সময় খোলা খোলা রাখা উচিত। আলো, বাতাস চলাচলের  ব্যবস্থা থাকতে হবে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় কিছুক্ষণ বসতে পারেন। কিংবা বিশেষ করে পার্ক বা খোলামেলা জায়গায় হাঁটাহাঁটি করা ভালো। তাতে মন ফ্রেশ হয়ে।

 সামাজিকতা বাড়াতে হবে

দিনশেষে মানুষই আমাদের বন্ধু হয়। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রিয় মানুষের কাছে গেলে, দু-চার কথা বললে এমনিতেই হালকা লাগে। তাই মন খারাপ থাকলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন, প্রতিবেশী  সঙ্গে গল্প করুন, পছন্দের মানুষদের সঙ্গে কোথাও ঘুরতে যান, বন্ধু, পরিবার ও প্রিয় মানুষের সঙ্গে সময় কাটান।

মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কখনো কখনো নিজের হাতে নাও থাকতে পারে। তখন অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। মনে রাখা ভাল, মানসিক চাপ দীর্ঘস্থায়ী হলে শারীরিক নানা ক্ষতি হতে পারে। এ ধরনের মানসিক ব্যক্তি জীবনে অনেক খারাপ দিক ফেলে। মানসিক চাপের জন্য কখনো কখনো দেখা গেছে হার্ট অ্যাটাকে পরিণত হয়েছে।

নিজের সাথে কথা বলুন

সর্বোপরি নিজের সাথে কথা বলুন। কোন  বিষয়গুলো আপনাকে মানসিক চাপে ফেলতে? কি করলে চাপ কম হতো? বর্তমানে কি অবস্থা? এর পরিপ্রেক্ষিতে আপনি কি করতে পারেন এগুলো  ভাবুন।  মানসিক চাপ দূর করতে  কি করা, প্রয়োজন, এর জন্য একটি তালিকা তৈরি করুন। আপনার চাহিদা অনুসারে তালিকা এবং সেই তালিকা অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। এই পদক্ষেপ গুলো  মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে।

সব পরিবর্তন হয় না

হয়তো খুব কাছের কারো মৃত্যু আপনাকে ভঙ্গুর করে দিয়েছে বা কোন ঘটনা আপনাকে এতোটা আহত করেছে যে এর তা বহন করার কষ্ট হয়ে যাচ্ছে আপনার পক্ষে।  ভাবুন অতীত কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব  বা ঠিক করা সম্ভব। যদি উত্তর না আসে, তবে এটি নিয়ে ভাবনা বন্ধ করে দিন। কেননা সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আর সবকিছু আমাদের হাতে থাকে না।

 নিজেকে গুছান

খারাপ হয়তো সবসময় এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে চেষ্টা করুন ইতিবাচক চিন্তা করতে। ভাবুন  যা চাইছেন ইতিবাচক ভাবেই পাবেন। এটা আপনাকে মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করবে।

 ডাইরি লিখুন

আপনি হয়তো কখনোই  লেখেন নি। তবুও এ সময়টায় নোটপ্যাড বা ডাইরিতে কিছু লেখার চেষ্টা করুন। যে বিষয়টি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, মানসিক তাপ হচ্ছে সেটি লিখুন। পাশাপাশি আপনি কি চান বা কি করলে আপনার ভাল লাগত সে বিষয়টিও লিখতে পারেন। ডাইরি লেখার এই অভ্যাসটি মানসিক চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করবে আপনাকে।

যোগ ব্যায়াম ও ধ্যান করুন

মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান করতে পারেন। ধ্যানের সময় গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম শরীরকে শিথিল করে। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে ধ্যান। পাশাপাশি চাপ কমাতে যোগ ব্যায়াম করতে পারেন।

আপনজনদের সাথে সমস্যা শেয়ার করুন

আপনার সমস্যা খুব কাছের কোন বন্ধু বা আত্মীয়ের সাথে শেয়ার করতে পারেন। হয়তো আল্লাহ তাদের মাধ্যমে আপনার সমস্যা সমাধান করে দিবেন। তবে অবশ্যই পার্সোনাল কথা কাউকে বলার আগে দেখবেন যাকে বলছেন তিনি কতটা বিশ্বাসযোগ্য। তবে আমার কাছে মনে হয় কোন মানুষকে বলার আগে আল্লাহকে বলাই উত্তম। তাহলে সমাধান পাওয়ার আশা থাকে আবার আমানতের খেয়ানত করার ভয় থাকে না।

কুরআনের মাধ্যমে সাহায্য

যখনই আপনি মানসিক চাপ অনুভব করবেন বিসমিল্লাহ বলে কুরআনের মাঝখানের যে কোন জায়গা হলে পেইজ খুলে পড়া শুরু করবেন। দেখবেন আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন কুরআনের মাধ্যমে। নয়তো অপেক্ষা করার শক্তি পাবেন যা মানসিক চাপ অনেকটা কমিয়ে দিবে ইনশাল্লাহ।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আমরা আমাদের বিভিন্ন ধরনের উপায় আলোচনা করেছি। আপনার যদি মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। তবে আপনার ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *