শেখ রাসেলের জীবনী রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আজ আমরা আপনাদের সাথে শেখ রাসেলের জীবনী রচনা সম্পর্কে আলোচনা করব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেল । একাত্তরের ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি সেইদিনের শেখ রাসেল। 11 বছরের শেখ রাসেলকে হত্যা করা হয় নির্মমভাবে। আজকে আমরা শেখ রাসেলের জীবনী রচনা সম্পর্কে জানব।
ভূমিকা:
বাংলার বিভিন্ন ঘর থেকে অসংখ্য মহান ব্যক্তিদের যুগে যুগে আবির্ভাব হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখতে পেরেছি। আবার অনেকেই বৃষ্টির শহরে চলে গিয়েছেন সবার অন্তরালে। তবে আজ বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা যেখানে বর্তমানে পৌছিয়েছি, তার কমবেশি অবদান রেখেছে সেই সব ব্যক্তিরা।
বাঙালি জাতির নেতা এবংপিতা বললেই যে মানুষটির নাম ভেসে উঠে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 19 বঙ্গবন্ধুকে হাজার 975 সালে বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথা আমার সবাই জানি। সপরিবারে মেরে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে ছোট ছেলে অবুঝ শিশু শেখ রাসেলকে। মাত্র 11 বছর বয়সে তিনি প্রাণহারা নির্মমভাবে। তার অপরাধ ছিল তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সন্তান ছিলেন।
শিশুর শেখ রাসেলের জন্ম:
1968 সালের অক্টোবর মাসে 18 তারিখে শিশু শেখ রাসেলের জন্মগ্রহণ করেন। এক আনন্দের দিনে, ধানমন্ডির 32 নম্বরে বাড়িতে মায়ের কোল আলো করে আসে বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ রাসেল। রাসেলের জন্ম হয়েছিল তার বড় বোন শেখ হাসিনা শোবার ঘরে। সেই আনন্দের জোয়ারে সমগ্র বাড়ি মেতে উঠেছিল। রাসেলের জন্মের পরপর বড় বোন শেখ হাসিনা একটা ওড়না দিয়ে শেখ রাসেলের ভেজা মাথা পরিষ্কার করে দেন। জন্মের সময় রাসেল ছিল বেশ স্বাস্থবান। তার জন্ম যেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের নয়, সমগ্র জাতির জন্য আনন্দ নিয়ে এসেছিল।
রাসেলের নামকরণ:
শেখ রাসেলের নামকরণের পিছনে রয়েছে ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বিশ্বশান্তি সহাবস্থানের পক্ষে। এজন্য তিনি দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল বিশেষ ভক্ত ছিলেন। বার্ট্রান্ড রাসেল একজন নোবেল বিজয়ী দার্শনিক এবং সমাজ বিজ্ঞানী ছিলেন। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরোধী দলের একজন বড় মাপের নেতা ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পৃথিবী যখন সম্ভাব্য একটি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় সমস্ত হইয়াছে, তখন যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র হয়ে কাজ করেছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল। এই মহান ব্যক্তি অনুপ্রাণিত ছিল বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবার। এই অনুপ্রেরণার থেকেই বঙ্গবন্ধু তার সন্তানের নাম রাখেন শেখ রাসেল।
শেখ রাসেলের ছেলেবেলা:
রাসেলের ছেলেবেলা দেশের উত্তপ্তর রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতোই বর্ণময়। জন্মের পর খুব বেশি সময় তার সৌভাগ্য হয়নি বাবার সন্দিগ্ধ পাওয়ার। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কিছুদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে জেলে রাখা রাখে তখনকার পাকিস্তান সরকার।
বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে ঢাকায় রাখা হলেও পরে পাকিস্তানের জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনা এমন হয়েছে যে, বড় বোনের সাথে কারাগারে বঙ্গবন্ধু কে দেখতে গিয়েছিলেন শিশু শেখ রাসেল। মাত্র দু বছর বয়সের রাসেল তখন তার বোনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন- তোমার বাবা কে আমি কি বাবা বলে ডাকতে পারি?’’অর্থাৎ সে তার আপার বাবা, অর্থাৎ তার নিজের বাবাকে কি বাবা বলে ডাকতে পারে? তার মানে তার বাবা তার কাছে একেবারেই অপরিচিত একজন মানুষের মতো ছিলেন।
যখন সে ভালোভাবে চিনতে পারে তখন সে বাবার কাছ থেকে আসতে চাইতো না একদমই। তখন তাকে বোঝানো হয়েছিল ওই জেলেই বাবার বাড়ি। সেখানে তার বাবা থাকেন। সামান্য কিছু দিনের জীবন দশায় বেশিরভাগ সময়টাই রাসেল কাটিয়েছিলেন তার মা ও বোনদের সাথে। তার পড়াশুনা শুরু হয়েছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ। 11 বছর বয়সে যখন তাকে হত্যা করা হয় তখন রাসেল সেই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।
শেখ রাসেলের হত্যাকাণ্ড:
1975 সালের 15 ই আগস্ট অভিশপ্ত রাত সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। সেই রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যা করা হয়। একদল বিপথগামী সেনা কর্ম, দেশী বিদেশি বাংলাদেশে বিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্রে, সেইরাতে ধানমন্ডির 32 নম্বর বাসভবন ঘিরে ফেলা হয় টেন দিয়ে। একে একে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়।
সেই রাতের শেষ অংশে বঙ্গবন্ধুর, এবং ব্যক্তি কর্মচারী দের সাথে শেখ রাসেলকে ও হত্যা করে হত্যাকারীরা। শেখ মুজিব ব্যক্তিগত কর্মচারী মহিতুল ইসলাম পরে জানান, রাসেল দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে জানতে চায় সেনারা তাকেও মারবে কিনা। ঠিক তখনই একজন সেনা কর্মকর্তা মহিদুলকে চড় মারে। ভয় পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয় রাসেল। সে কাঁদতে থাকে তার মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য। সেই সময় একজন ঘাতক শিশু রাসেলকে ভেতরের ঘরে নিয়ে গিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে।
কেন শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু:
শেখ রাসেল কেন আমাদের বন্ধু, কীভাবেই বা তিনি আমাদের বন্ধু হয়ে উঠলেন বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে রাসেলের ছেলেবেলার দিনগুলো লেখা বিভিন্ন বই। তার ছেলে বেলার দিন গুলো সম্পর্কে যেটুকু জানা যায় তার অধিকাংশ শিশু বয়সের নিষ্পাপ আত্মভোলা কর্মকাণ্ডে পূর্ণ ছিল। শোনা যায় বঙ্গবন্ধুর বাসায় টমি নামে একটা কুকুর ছিল যার সাথে সব সময় খেলে বেড়াতেন।একদিন খেলার সময় কুকুরটি জোরে ডেকে উঠল ছোট রাসেলের মনে হয় টমি তাকে বকছে।
শিশু রাসেল তখন তার বোন রেহানা কাছে এসে কাঁদতে থাকে। এছাড়াও রাসেলের মাছ ধরার খুব শখ ছিল। মাছ ধরে আবার সেই মাসে পুকুর ছেড়ে দিত অবুঝ রাসেল। এতেই সে ভীষণ আনন্দ পেত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের জলে রাসেলকে নিয়ে সারাদিন খেলাধুলা করত।
রাসেলের স্বভাব ছিল অত্যন্ত দুরন্ত প্রকৃতির। তারেই দুরন্তপনার সঙ্গী ছিল একটি বাইসাইকেল। রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙে নিজের বাইসাইকেলের রোজ স্কুলে যেত রাসেল। রাসেলের যেন আমাদের সকলের শৈশবের গল্প মনে করিয়ে দেয়।
শেখ রাসেলের জীবনী রচনা তার শৈশবের গল্প কথাগুলির মধ্যে আমরা যেন বারবার নিজেকে খুঁজে পাই। পড়াশোনা, খেলাধুলা, দুরন্তপনা এসব নিয়ে রাসেল আমাদের সকলের কাছে হয়ে ওঠে শৈশবের এক আদর্শ। রাসেলের মধ্যে খুব ছোট বেলাতেই দেখা গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর মতো মানবিকতা। সব মানুষ ও পশু পাখিদের জন্য ও ছিল তার অগাধ রকমের ভালোবাসা। সবার কাছে যেত শিশু রাসেল। সবার সাথে মিশতে, বাড়িতে কাজের লোক সহ সবাই সম্মান শ্রদ্ধা।
উপসংহার;
বাঙালি জাতির কাছে এক যুগন্তর মানব শেখ রাসেল। তিনি অবুঝ থেকেও দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। বাঙালি জাতি তার মধ্যে খুঁজে পায় রূপকথার মত নিজে নিজে ছেলেবেলাকে। শেখ রাসেলের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকে আপামর বাঙালির শিশু সময়। অন্যদিকে তার মৃত্যুর কাহিনী বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাদের দেশের করুন ইতিহাস কে। সেই নিশংস ক্ষমতালোভী মানুষের কথা যারা কেবলমাত্র ক্ষমতার লোভে 11 বছরের একটি ছোট্ট শিশুটিও জীবন ভিক্ষা দেয় নি।
বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক জ্বলন্ত প্রতীক শেখ রাসেল। তার স্মৃতি চিরদিন বাঁচিয়ে রাখা উদ্দেশ্য বাংলাদেশ-এ গঠন করা হয়েছে শেখ রাসেল ক্রিয়া চক্র এবং শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ। শেখ রাসেলের নামে রাজধানী ঢাকার বুকে করা হয়েছে একটি স্ক্রেটিং স্টাদিয়াম। এভাবেই চিরকাল শেখ রাসেল আমাদের হয়ে থাকবেন বাঙালি জাতির স্মৃতির হৃদয়। বাঙালি জাতি শেখ রাসেল স্মৃতি বুকে নিয়ে তাকে বন্ধুর স্নেহে আসনে বসিয়ে সভ্যতার পথে আরও অগ্রসর হোক।
আজকের পোস্টে আমরা শেখ রাসেলের জীবনী রচনা সম্পর্কে জেনেছি। এছাড়া ও জেনেসিস শেখ রাসেলের জীবনী রচনা লেখা। শেখ রাসেলের জীবনী রচনা ইউনিক উপায়। তাই আপনারা যদি শেখ রাসেলের জীবনী রচনা সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে আপনারা আমাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।