ভিটামিন সি সম্পর্কে খুটিনাটি জেনে নিন

ভিটামিন

ভিটামিন আমাদের শরীরের কৃতিত্বপূর্ণ একটা উপাদান।  ভিটামিন খুব অল্প পরিমাণ প্রয়োজন হলেও সেটা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।  একটা  গাড়ি যত বড় হোক অথবা ছোট হোক তার একটা চাবি থাকে।  এই চাবিটাও আকৃতিতে যেমন হক গাড়ি চালাতে গেলে সেটা কিন্তু প্রয়োজন।  আমাদের দেহ ঘড়ি এমন একটা যন্ত্র যেটা চালানোর জন্য কিছু অত্যাবশ্যকীয় উপাদান এর প্রয়োজন হয়।  এমন উপাদানগুলোকে আমরা ভিটামিন বলে থাকি। 

ভিটামিন গুলো আবার বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।  এদেরকে আমরা  এ, বি,  সি, ডি, ই, কে  ইত্যাদি নামে চিহ্নিত করেছে।  আজকের আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় যেহেতু ভিটামিন সি তাই আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করব ভিটামিন সি এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে।  অর্থাৎ এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন ভিটামিন সি আমাদের শরীরে কেন প্রয়োজন।  ভিটামিন সি আমরা কোথা থেকে পাব।  ভিটামিন  এর  পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা।  ভিটামিন-সি পাওয়ার সহজ লভ্য খাদ্য ইত্যাদি সম্পর্কে।  তাই যারা ভিটামিন সি এর সম্পর্কে জানতে চান তারা এই আর্টিকেলটি পড়ুন।  আশাকরি ভিটামিন সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে।

ভিটামিন সি । ভিটামিন সি এর রাসায়নিক নাম কি

প্রথমেই জেনে নিয়ে আসলে ভিটামিন সি কি।  ভিটামিন সি এর রাসায়নিক নাম হচ্ছে এসকরবিক এসিড।  একটি জৈব অম্ল যা বিভিন্ন ধরনের শাক সবজিতে পাওয়া যায়।  ভিটামিন সি সহজেই প্রকৃতিতে পাওয়া যায়।  ভিটামিন-সি একটি দানাদার পদার্থ এবং এটি বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান।  হাজার 912 সালে ভিটামিন-সি আবিষ্কৃত হয়।  এটি একমাত্র ভিটামিন যা সবার প্রথম রাসায়নিক ভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছিল।  ভিটামিন কে আবিষ্কার এর সাথে একজন বিজ্ঞানীর নাম উচ্চ ভাবে জড়িত এবং তিনি হলেন আলবার্ট  যেন  গিয়র্গি ।  1937 সালে ভিটামিন-সি আবিষ্কারের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

দিনে কতটুকু ভিটামিন সি গ্রহণ করা প্রয়োজন

ভিটামিন-সি গ্রহণ করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।  তবে নিশ্চয়ই তা গ্রহণ করতে হবে পরিমিত পরিমাণে।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, একজন ব্যক্তির প্রতিদিন গড়ে অন্তত 45 মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি খাওয়া উচিত।  এর বেশি খাওয়া উচিত নয়।  অনেকেই মনে করেন আমি যত বেশি ভিটামিন সি গ্রহণ করব আমি তত বেশী ভালো ফিল করব অথবা শরীরের জন্য ভালো হবে।  এটি একেবারেই ঠিক নয়।  কারণ এর বেশি ভিটামিন সি যদি আপনি গ্রহণ করেন সেই ভিটামিন-সি আর আপনার শরীরে থাকবে না।  এর ক্ষতিকর প্রভাব আপনার শরীরে পড়তে পারে।  অন্যদিকে যদি আপনি 45 গ্রাম এর চেয়ে কম ভিটামিন-সি গ্রহণ করেন তবে এর অভাবে আপনার বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ হতে পারে।  এর জন্য আপনাকে অবশ্যই ভিটামিন সি এর  মাত্রা ঠিক রাখতে হবে।

ভিটামিন সি এর ফলে সৃষ্ট রোগসমূহ । ভিটামিন সি এর অভাবে কি হয়

ভিটামিন সি এর অভাব এর ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হয়ে থাকে।  নিচে এমন কিছু রোগ ব্যাধি সম্পর্কে আলোচনা করা হল যেন আপনারা সে সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন।  এর পরবর্তীতে অবশ্য আমরা ভিটামিন-সি কোথা থেকে পাব সেটি নিয়ে আলোচনা করব।  চলুন তবে জেনে নেই ভিটামিন সি এর অভাবজনিত রোগ সমূহ।

স্কার্ভি

ভিটামিন সি এর অভাবজনিত লক্ষণ গুলো রয়েছে  বা যে  রোগ গুলো প্রকাশিত হয়  তাদের মধ্যে অন্যতম হলো স্কার্ভি।  স্কার্ভি হলে দাঁতের মাড়িতে ক্ষত সৃষ্টি হয়।  মাড়ি দিয়ে অনেক সময় রক্ত বেরিয়ে আসতে পারে।  এছাড়াও দুর্বলতা ক্লান্তি লাগা ভিটামিন সি এর অভাবে ঘুরতে পারে।  স্কার্ভি রোগের প্রাথমিক যেসকল উপসর্গ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু হলো ক্লান্তি লাগা, খিদে কম হওয়া, বিরক্তি অনুভব করা, জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা।  এই রোগটি হলে যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হয় তবে রক্তাল্পতা এবং  মাড়িতে প্রদাহ হতে পারে।  তাই স্কার্ভি হলে সাথে সাথে এর চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

হাইপারথাইরয়ডিজম

ভিটামিন সি এর অভাব হলে অনেক সময় থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন এর নিঃসরণে জটিলতা দেখা দিতে পারে।  যদি থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ থাইরক্সিন নিঃসৃত হয় তবে তাকে আমরা হাইপার থাইরয়েডিজম বলি।  হাইপারথাইরয়ডিজম এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে ভিটামিন সি এর ঘাটতি।  হাইপারথাইরয়ডিজম হলে মানুষের ওজন হালকা হয়ে যায়।  হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় এবং খিদেও বেড়ে যায়।  এছাড়া যাদের হাইপারথাইরয়ডিজম রয়েছে এমন মহিলাদের রজঃস্রাবের না সময় ও ধরনের পরিবর্তন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।

রক্ত স্বল্পতা

শরীরে আয়রন রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে।  আবার এই আয়রনকে শোষণের সহায়তা করে ভিটামিন সি।  তাই যারা আয়রনযুক্ত খাবার খাচ্ছেন এবং তার উপকারিতা অনুভব করছেন না তারা অবশ্যই ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান।  কারণেই ভিটামিন-সি আপনার আয়রনকে সহায়তা করবে এবং লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করবে।  যারা ক্লান্তি শ্বাসকষ্ট ছাড়াও মাথা ঘোরা এবং ওজন কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন তারা ভিটামিন সি বেশি করে খেতে পারেন।  তবে দেখবেন আপনার ধীরে ধীরে রক্তস্বল্পতা কমে যাচ্ছে এবং আপনি সুস্বাস্থ্য ফিরে পেয়েছে।

মাড়ি থেকে রক্ত পড়া

আমরা যদি সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করতে চাই তবে অবশ্যই আমাদের দেহের সকল দিকে নজর রাখতে হবে।  মারি হচ্ছে এমন একটি শরীরের অংশ যা সহজে যা সহজেই আক্রান্ত হতে পারে । ভিটামিন-সি আপনার মাড়িকে শক্ত এবং মজবুত হতে সহায়তা করবে।  তাই ভিটামিন সি বেশি বেশি গ্রহণ করা উচিত যেন মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

ত্বকের সমস্যা

ত্বকের কিছু সমস্যা রয়েছে যা ভিটামিন সি-এর ঘাটতিতে হতে পারে।  আপনার খাবারের যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে তবে এই সমস্যাগুলো হবে না।  ভিটামিন সি-তে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে তাকায় এটি আপনার ত্বক চুল এবং জয়েন্ট এর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা কে দূর করবে।

যে সকল খাবারে ভিটামিন সি রয়েছে । ভিটামিন সি জাতীয় খাবার

সাধারণত সকল টক জাতীয় খাবারে ভিটামিন সি থাকে।  তবে এখানে বিশেষ কয়েকটি ফলের নাম উল্লেখ করছি যেগুলোতে ভিটামিন সি রয়েছে।

  • পেয়ারা
  • লিচু
  • কুল বড়ই
  • পেঁপে
  • কমলালেবু
  • আনারস
  • বেদেনা
  • আমলকি

আমি আমলকির কথা একটু আলাদাভাবে বলতে চাচ্ছি।  কারণ আমলকিতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়।  100 গ্রাম আমলকি থেকে প্রায় 42। 6 মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়।  এটি চুলের স্বাস্থ্য ভালো করার ছাড়াও কাশির সমস্যা দূর করে।  তাই আমি আপনাকে পরামর্শ দিব খেতে একটু তেতো হলেও নিয়মিত আমলকি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

 ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সবজি । ভিটামিন সি জাতীয় খাবার

এবার আমরা এমন কিছু  সবজি  এর কথা তুলে ধরব যেখানে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি’ রয়েছে।

  • কাঁচা মরিচ
  • করোলা
  • ফুলকপি
  • সজনে
  • ডাটা
  • মিষ্টি আলু
  • মোল্লা
  • কাঁচা টমেটো
  • চাল কুমড়া
  • পাকা টমেটো
  • মিষ্টি কুমড়া
  • শালগম
  • সিম
  • কাঁচা কলা
  • পাকা পেঁপে
  • কাঁচা পেঁপে
  • আলো
  • পটল
  • চিচিঙ্গা
  • ঢেঁড়স
  • কলার মোচা
  • বাঁধাকপি

তবে কষ্টের ব্যাপার হলো ভিটামিন-সি রান্না করলে নষ্ট হয়ে যায়।  তাই যদি সম্ভব হয় বেশিক্ষণ যাবত এই শাকসবজি গুলোকে রান্না করবেন না।  অল্প পানিতে দ্রুত শাকসবজি গুলোকে রান্না করে দিন এবং ডাকনাম ব্যবহার করো । সর্বোচ্চ পরিমাণ ভিটামিন সি’ ধরে রাখতে প্রেসার কুকারে রান্না করলে ভালো হয়।

যে সকল শাক এ ভিটামিন সি পাওয়া যায় । ভিটামিন সি জাতীয় খাবার

  • সজনে পাতা
  • ধনেপাতা
  • ডাটা শাক
  • গাজার পাতা
  • বরবটি পাতা
  • পাটশাক
  • লাউ শাক
  • কচু শাক
  • হেলেঞ্চা শাক
  • লাল শাক
  • মিষ্টি কুমড়া শাক
  • কলমি শাক
  • পালং শাক

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিল ভিটামিন সি সম্পর্কে।  আমরা চেষ্টা করেছি ভিটামিন সম্পর্কে আপনার মনের প্রশ্নগুলোকে দূর করার জন্য।  তবে যেহেতু তথ্যগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহিত তাই আপনি যদি কোনো গবেষণা অথবা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান যার জন্য পর্যাপ্ত উৎস সহ তথ্য, তখন আপনাকে আমি বলবো ভিটামিন সি সম্পর্কে আপনি আমার এই ইন্টারনেটনির্ভর তত্ত্বের ওপর নির্ভর করবেন না। সর্বশেষ পরামর্শ আমি আপনাকে দেখব জটিল কোন রোগের জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *