সুষম খাদ্য কাকে বলে | সুষম খাদ্য তালিকা

 

সুষম খাদ্য

আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো সুষম খাদ্য কাকে বলে সম্পর্কে।  তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আর্টিকেল সুষম খাদ্য কাকে বলে।

আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা সুষম খাদ্য কাকে বলে তা আসলে বুঝেন না কিংবা জানেন না।  অনেক সময় আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং ডাক্তার আমাদের সুষম খাদ্য খেতে বলে।  কিন্তু অনেকেই সুষম খাদ্য কাকে বলে  জানে না।  তাই আজকে আমরা সুষম খাদ্য কাকে বলে সেই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব।  আমাদের আজকের আর্টিকেল সুষম খাদ্য কাকে বলে তাদের জন্য যারা কিনা জানেন না সুষম খাদ্য কাকে বলে।  নিচে সুষম খাদ্য কাকে বলে উল্লেখ করা হলো।

সুষম খাদ্য কাকে বলে

সুষম খাদ্য বলতে যে খাদ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় 7 টি উপাদান  যেমন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন,  খনিজ, ফাইবার, এবং পানি সঠিক অনুপাতে উপস্থিত থাকে এবং যে খাদ্য গ্রহণ করলে ব্যক্তির সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে।

সুষম খাদ্য মানবদেহের সকল প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান উপস্থিত থাকে।  খাবারের ক্যালরি সেই খাবারের সঞ্চিত শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে।  মানুষের শরীরের প্রতি দিনের ক্রিয়া-কলাপ যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস, নড়াচড়া, চিন্তাভাবনা, হাঁটা, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদনের জন্য ক্যালোরি ব্যবহার করা হয়।

একজন ব্যক্তির বর্তমান ওজন বজায় রাখতে প্রতিদিন প্রায় 2000 ক্যালরি প্রয়োজন হয়। যাই হোক না কেন দৈনিক ক্যালরি চাহিদা ব্যক্তির লিঙ্গ বয়স এবং শারীরিক কার্যকলাপ এর মাত্রা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।  মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি ক্যালরি প্রয়োজন হয়। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে এমন পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার সুষম খাদ্যের বিদ্যমান রয়েছে।

সুষম খাদ্যের উপাদান সংখ্যা

এতক্ষণ আমরা জেনেছি সুষম খাদ্য কাকে বলে সেই সম্পর্কে।  এখন আমরা জানবো সুষম খাদ্যের উপাদান সংখ্যা কয়টি।  সুষম খাদ্যের উপাদান সংখ্যা হল সাতটি। নিচে এই উপাদানগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

কার্বোহাইড্রেট

কার্বোহাইড্রেট আমাদের মানব শরীরের জন্য  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  কার্বোহাইড্রেট হল প্রাথমিক শক্তির উৎস যা কিনা আমাদের মস্তিস্ক এবং বেশি ব্যবহার করে থাকে।  আমাদের যে ক্যালরির প্রয়োজন তা অনেকটাই কার্বোহাইড্রেট থেকে আসে।  এবং ক্যালরির পরিমাণ হল 55 থেকে 60%।

প্রোটিন

মানব শরীরের দ্বারা প্রোটিন ব্যবহৃত হয়।  প্রোটিন আমাদের সঠিকভাবে বিকাশ এবং বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।  প্রোটিন আমাদের পেশী অঙ্গ ত্বক এবং চুল তৈরি করে।  আমাদের শরীরে যদি প্রোটিনের ঘাটতি থাকে তাহলে আমাদের ত্বক নষ্ট হয়ে যায় চুল পড়ে যায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।  আর আমরা সুষম খাদ্য বলতে প্রোটিনের উপস্থিতি বুঝি।  সুষম খাদ্য মানব শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চর্বি

মানব শরীরের যেই ক্যালরি দরকার হয় তার অনেকটাই আমরা চর্বি থেকে পাই।  এবং এই ক্যালরির পরিমাণ হলো প্রায় 35 শতাংশ।  কিন্তু এর থেকে বেশি চর্বি থেকে আসা উচিত নয়। চর্বি হলো শক্তির একটি দুর্দান্ত উৎস।  কেননা এক গ্রাম চর্বি তে রয়েছে নয় ক্যালোরি।  তাই মানব শরীরের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন রয়েছে।

ভিটামিন

আমাদের শরীরে ভিটামিনের উপস্থিতি থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  ভিটামিন হলো একটি জটিল জৈব পদার্থ যা আমাদের খাবারের পাওয়া যায়।  যা আমাদের শরীরের প্রায় প্রতিটি সিস্টেম কে সমর্থন করে। যার মধ্যে ইমিউনিটি সিস্টেম মস্তিস্ক এবং স্বতন্ত্র রয়েছে।  তাই আমাদের শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিলে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি।  আমাদের শরীরের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।  অনেক সময় ভিটামিনের অভাবে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ডাক্তারের কাছে যাই।  এবং ডাক্তারের পরামর্শ দেয় ভিটামিন খাওয়ার জন্য।  তাই আমরা শুরু থেকেই যদি আমাদের শরীরে ভিটামিনের পরিমাণ ঠিক রাখে তাহলে আমরা এধরণের সমস্যায় পরবো না।

ফাইবার

ফাইবার হলো দুই ধরনের।  একটি হলো দ্রবণীয় ফাইবার, অন্যটি হলো অদ্রবণীয় ফাইবার।  এই দুটো মানব শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  কেননা এই দুই ধরনের ফাইবার মানব শরীরের সুস্বাস্থ্যের জন্য কাজ করে থাকে।  ফাইবার সাধারণত ফল শাকসবজি এবং সর্ষের মতো উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়।  একজন ব্যক্তির প্রতিদিন একটি করে ফল খাওয়া উচিত।  এবং এই ফলগুলো যদি মৌসুমী ফল হয়ে থাকে তাহলে আরো বেশি ভালো হয়ে থাকে।

পানি

আমরা সচরাচর বলে থাকি  পানির অপর নাম জীবন।  কেননা আমাদের শরীরের প্রায় 65 শতাংশ পানি দ্বারা গঠিত।  এটি আমাদের শোষণ, হজম, মলত্যাগের, সহায়তা করে।  পানি আমাদের শরীরের চারপাশের পুষ্টির সঞ্চালনে সহায়তা করে।  পানি আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং তাপ বিতরণের জন্য অপরিহার্য।  তাছাড়া পানি আমাদের শরীরকে চলন্ত এবং আমাদের চোখ লুব্রিকেট করে।  একজন ব্যক্তি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া উচিত।  কেননা পানি না খাওয়ার ফলে অনেক সময় আমাদের শরীর কষা হয়ে যায়।  এবং এর ফলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয়ে থাকে।  তাই এ সকল সমস্যা এড়ানোর জন্য আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া উচিত।

এতক্ষণ আমরা সুষম খাদ্যের মধ্যে উপস্থিত সাতটি উপাদান নিয়ে আলোচনা করলাম।  এই সাতটি উপাদানের কথা যদি আপনারা বুঝে থাকেন তাহলে আপনার সুষম খাদ্য কাকে বলে সেই সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা পেয়েছেন।  প্রতিটি মানুষের উচিত সুষম খাদ্য কাকে বলে সেই সম্পর্কে একটি সঠিক ধারণা রাখা।  কেননা সুষম খাদ্য গ্রহণ করা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সুষম খাদ্যের তালিকা

ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি সুষম খাদ্য কাকে বলে সেই সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো সুষম খাদ্যের একটি তালিকা সম্পর্কে।  নিচে সুষম খাদ্যের তালিকা দেওয়া হল।

  • শাকসবজি
  • মাছ, মাংস
  • শস্য জাতীয় খাবার
  • ফলমূল
  • দুধ, ডিম

সুষম খাদ্য গ্রহণ

আমরা সুষম খাদ্য কাকে বলে সেই সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা পেয়েছি।  এখন আমরা জানবো  কিভাবে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা যায়।

  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।  অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন একজন ব্যক্তির 6 থেকে 8 গ্লাস পানি খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।  কিন্তু এটা বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হতে পারে।
  • প্রতি সাপ্তাহে মাছের অন্তত দুটি অংশ অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন।
  • প্রতিদিন সকালের নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রতি সাপ্তাহে 150 মিনিট মাঝারি ব্যায়াম করা উচিত।
  • প্রতিদিন অন্তত পাঁচ ভাগ ফল ও সবজি খাওয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখুন।

সুষম খাদ্যের গুরুত্ব

আমরা সুষম খাদ্য কাকে বলে সেই সম্পর্কে বুঝতে পেরেছি।  এখন আমরা সুষম খাদ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করব।

মানব শরীর যাতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে তার জন্য যে পুষ্টি ও শক্তির প্রয়োজন তা সুনির্দিষ্ট মাত্রা সুষম খাদ্য থেকে পাওয়া যায়।  আমরা যে খাদ্য খেয়ে থাকি সেই খাদ্যে যদি পুষ্টির সুষম বন্টন না হয় তাহলে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। বিশেষ করে পুষ্টির অভাবজনিত রোগ গুলো হতে পারে।  এছাড়া সুষম খাদ্য না খেলে শরীর অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাবে এবং শরীরের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে।  সৈসব বয়সের যদি সুষম খাদ্যের ঘাটতি থাকে তাহলে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাঘাত ঘটে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে সুষম খাদ্য না খাওয়ার ফলে।  তাই আমাদের সকলের সুষম খাদ্য খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  তাছাড়া যদি আমাদের শরীর চর্চা না থাকে তাহলে ওবিসিটি সহ অন্যান্য জটিল রোগ যেমন হূদরোগ, ডায়াবেটিস, ও হাই ব্লাড প্রেসার, এর মত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বলা যায় যে আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

সুষম খাদ্যের উপকারিতা

এতক্ষণ আমরা সুষম খাদ্য কাকে বলে সেই সম্পর্কে জেনেছি এখন আমরা জানবো সুষম খাদ্যের উপকারিতা সম্পর্কে।

  • উন্নত স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য।
  • ভালো মেজাজ এবং শক্তিস্তর।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার পর্যাপ্ত শরীরের ওজনের অবদান রাখতে পারে।
  • স্বাস্থ্যের বিকাশের জন্য ভিটামিন এবং খনিজ অত্যাবশ্যক।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্য মানব দেহকে নির্দিষ্ট ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

 

এবং এই সকল কাজ করে থাকে সুষম খাদ্য।  তাই মানব শরীরে সুষম খাদ্যের ভূমিকা অপরিসীম।

আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল সুষম খাদ্য কাকে বলে সেই সম্পর্কে।  আশা করি আপনারা সবাই বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন সুষম খাদ্য কাকে বলে সেই সম্পর্কে।  আপনাকে আমাদের আজকের আর্টিকেল সুষম খাদ্য কাকে বলে সম্পন্ন করার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *