দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা (PDF)

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা ভালো  আছেন। আজ আমরা আপনাদের সাথে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সম্পর্কে আলোচনা করব। কেননা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা ঘুরেফিরে আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বারবার আসে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রযুক্তির এই যুগে এই রচনা টি মুখস্থ না করে নিজের মতো করে লেখা যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা টির কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরা হলো।

আমরা যদি ভাবতে চাই তাহলে দেখা যাবে যে আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। এখন মানব জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া ভাবাই যায় না। আমরা যদি রান্না করতে চাই সেটাতেও বিজ্ঞান ব্যবহার করে থাকি। আমরা ঘর বা যে কোন জিনিস পত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার ক্ষেত্রেও আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আসছি। তাই চলুন দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করি।

 ভূমিকা:  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

মানব সভ্যতায় বিজ্ঞানেরও আবির্ভাবের চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। বিজ্ঞানের  আবির্ভাবের পূর্বে পৃথিবী  ছিল অজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। দুর্দশা থেকে মুক্তি, অজ্ঞতা ও মানুষের পরিশ্রম লাভের জন্যই জনবিজ্ঞান এর আবির্ভাব।

উনবিংশ শতাব্দীর শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান তার অস্তিত্বের কথা জানায় দেয়। আর বর্তমানে বিজ্ঞান ছাড়া পুরো পৃথিবী একেবারে অচল। হঠাৎ শোনা গেল পুরো পৃথিবীতে এক সপ্তাহের জন্য সেটিং এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। ভাবুন তো কেমন হবে? সব কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, খাদ্য উৎপাদন হবে না, হাসপাতালে অপারেশন সম্ভব হবে না, সন্ধ্যার পর থেকে বাধ্য হয়ে অন্ধকারের সময় কাটাতে হবে।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান এমন ভাবে জড়িয়ে গেছে যে ইন্টারনেট ছাড়াও আমরা এখন একটি দিনও কল্পনা করতে পারিনা। সহজ কথায়, বর্তমান আমাদের  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। বিজ্ঞান আমাদের জীবনে অতপ্রত ভাবে জড়িয়ে আছে।

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান:

দৈনন্দিন জীবনে  বিজ্ঞান  আমাদের বিশ্বস্ত সরকারি। বর্তমানে যে কোন কাজে আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়। রাতে ঘুমোনোর আগে আমাদের পরের দিন সকালের জন্য এলার্ম সেট করতে হয়, আবার সকালের উঠার পর সর্বপ্রথম সময় দেখার জন্য ঘড়ির কাঁটা তে চোখ বুলাতে হয়। এ থেকেই বোঝা যায় প্রাত্যহিক জীবনে আমরা বিজ্ঞানের উপর কতখানি নির্ভরশীল।

আমাদের বাসস্থান, কর্মক্ষেত্র সবকিছু কোন না কোন ভাবে আমরা বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞান আমাদের পুরো দিনের জীবনকে অনেকখানি বদলে দিয়েছে। এমন এক সময় ছিল যখন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান নির্ভর পণ্য ব্যবহারের সক্ষমতা শুধুমাত্র বিত্তশালীদের মধ্যে সীমিত ছিল। অনেক আগেই বদলে গেছে।

এখন সকলেই তার সাধ্যমত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে। এখন পুরো দুনিয়া আমাদের হাতের মুঠোয়। আরেকটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র বিজ্ঞানের আশীর্বাদ এর ফলে। যার ফলে বিজ্ঞানের উপর ভর করে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজই করতে পারছি। দৈনিক জীবনে বিজ্ঞান রচনা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

 চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। বিজ্ঞান  কারণে আজ রোগ নির্ণয় অনেক বেশি সহজ হয়েছে। এমন এক সময় ছিল যখন সামান্য মানুষকে প্রাণ হারাতে হতো। বিশেষ করে  ডায়রিয়া, কলেরা, হামের মতো শিশুদের জন্য হুমকিস্বরূপ। কিন্তু বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা অনেক জটিল রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছি।

বিজ্ঞান বর্তমানে মহামারী মোকাবেলার সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। কলেরা, টাইফয়েড এর মত জীবন নাশ কারী রোগ থেকে বিজ্ঞান আমাদের সুরক্ষিত রাখে। বিজ্ঞানের কারণে মৃত্যুর হার হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময় বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে অনেকে প্রাণ হারাতে হতো ।কিন্তু বর্তমানে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে বলেও চলে। তাই দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

পেশার মাপা, ডায়াবেটিস পয়েন্ট এখন ঘরে বসে বসেও করা সম্ভব। হার্টের চিত্রের মতো জটিল রোগ অপারেশন ছাড়া এখন কেবলমাত্র ঔষধের মধ্যে সরানো সম্ভব হচ্ছে। আর এসব সম্ভব হচ্ছে কেবলমাত্র চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিজ্ঞান:

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে পুরো পৃথিবী এখন  বিশ্বগ্রাম নামে পরিচিত। বিজ্ঞান দ্রুত হ্রাস করেছে এবং ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করে তুলেছে। এমন এক সময় ছিল যখন মানুষকে পায়ে হেঁটে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হত। তারপর তারা ভ্রমণের জন্য নৌ পথ বেছে নিল। কিন্তু নৌপথে ভ্রমণ ছিল সময় সাপেক্ষ আর বিপদজনক। মাত্র 60 থেকে 70 বছর আগেও মানুষ এশিয়া থেকে ইউরোপে যেতে পানিপথের।

মরুভূমি,, জঙ্গল, পাহাড়ি দেওয়ার কথা এক সময় মানুষ ভাবতে পারত না। আর আজ শুধুমাত্র বিজ্ঞানের কল্যাণে ট্রেন মরুভূমি,  জঙ্গল এবং পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে গর্জন করে চলাচল করে। উড়োজাহাজ, বুলেট টেরেন এখন আমাদের সবার কাছে খুবই স্বাভাবিক মনে হয়। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান এক দেশ থেকে অন্য দেশে আকাশ পথে পাড়ি জমানো এখন কেবল মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। বিজ্ঞানের আশীর্বাদ এবং বছরের ভ্রমণ এখন কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শেষ করা যেতে পারে। শুধু কি তাই? মহাকাশে মানুষ মহাকাশ ভ্রমণের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

দৈনন্দিন জীবনে আমাদের নানাভাবে প্রভাবিত করে বিজ্ঞান । শহুরে সমাজ অনেকটা জানিনা বিজ্ঞান কিভাবে কৃষিকাজের ভূমিকা রাখছে। আমাদের দেশে এক সময় মাত্র ছয় থেকে সাত কোটি মানুষ বসবাস করত। এখন জনসংখ্যা প্রায় 17 কোটি। জনসংখ্যা বাড়লেও জমিত বাড়েনি। তাহলে এত মানুষের জন্য খাবার কিভাবে আসছে। কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে  এখন এক জমিতেই 4 থেকে পাঁচ গুণ বেশি ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। বিভিন্ন রকম জৈব রাসায়নিক সার মাটি কে করছে আরও উর্বর।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান আমাদের দেশে উপজেলায় উপজেলায় গড়ে উঠেছে কৃষি অফিস।  কৃষি অফিসার রা প্রান্তিক কৃষকদের ধরে ধরে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছে। মালচিং পদ্ধতি, উন্নত জাতের চারা, উৎপাদন পদ্ধতি আজকে প্রায় সবারই জানা। বিজ্ঞানের কল্যাণে রাজধানী ঢাকাতেও শুরু হয়েছে ছাদ কৃষির প্রচলন।

শিক্ষার কাজে বিজ্ঞান:

দোয়াতের কালি দিয়ে লেখা হতো একসময়। লেখা ছাপানোর মেশিন আবিস্কারের পরপরই দোয়াতের কালি ব্যবহার হয়েছে। বিজ্ঞানের এই যুগে এখন ছাপার মেশিন উঠে যাওয়ার পথে। কখন  বই ছাপা হবে তারপর পড়তে হবে সে যুগ নেই। যখন দরকার তখন ভেসে উঠবে আমাদের মোবাইল ল্যাপটপের স্ক্রিনে।

তাছাড়া ঘরে বসে পৃথিবীর অনেক নামিদামি ইউনিভার্সিটি কোর্সগুলো করা জাচ্চে নিমিষেই।, ধরুন, আপনি কোন বিষয়ে খুব দক্ষ। আর আপনি চাইছেন আপনার এই প্রতিভা সকলের সামনে তুলে ধরতে। সেটিও করতে পারছেন নিমিষেই। বিজ্ঞানের যুগে সবাই শিক্ষক আবার সবাই ছাত্র।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা  কুফল:

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান অনেক ভালো ভূমিকা রাখলেও এর অল্প কিছু খারাপ দিক রয়েছে। আজকাল আমরা প্রযুক্তির উপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি নিজেরাই ভুলে গেছি নিজেদের সময় দিতে ।পারিবারিক সম্পর্ক গুলোতেও ঢিলেঢালাভাব লক্ষণীয় ।পরিবারের সবাই একসাথে বসে গল্প করে সময় কাটানো এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে বললেই ভুল হবে না ।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপব্যবহারের কারণে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শোনা যায়। বিজ্ঞানের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছে আমাদের। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ব্যবহার আমরা কোন কাজে লাগাব সেটা একান্তই আমাদের উপর নির্ভর করে।

উপসংহার:  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

বর্তমানে আমরা সবকিছুতেই কোনো না কোনোভাবে বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের উপকারিতা কে অস্বীকারের কোন উপায় নেই। বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানুষের কল্যাণে। আমরা যদি বিজ্ঞানকে ভালো কাজে না লাগিয়ে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে তেমন কাজে লাগাই তবে সে দায় আমাদের বিজ্ঞানের নয়।

তাই আপনারা যদি দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সম্পর্কে জানতে চান বা নিজের ভাষায় লিখতে চান অবশ্যই আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন তবেই আপনার দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবেন এবং নিজের মতো করে লিখতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *