স্বদেশ প্রেম রচনা

স্বদেশ প্রেম রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা অনেক ভালো আছেন ।আজ আমরা আপনাদের সাথে স্বদেশ প্রেম রচনা সম্পর্কে আলোচনা করব।  আপনারা যদি স্বদেশ প্রেম রচনা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আপনারা আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। আশা করছি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়লে স্বদেশ প্রেম রচনা সম্পর্কে অনেক ধারণা বলে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আজকের আর্টিকেলটি।

ভূমিকা স্বদেশ প্রেম রচনা:

সার্থক জন্ম  আমার জন্মেছি এই দেশে।

সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেস ‘’।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

স্বদেশ প্রেম রচনা প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে বড় আশ্রয় স্থল তার নিজের মাতৃভূমি। আলো, জল, মাটি স্পর্শে আমাদের ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা। দিন শেষে একটি পাখির নীড়ে ফিরে যায়, কারণ সে তার আশ্রয় স্থল কে ভালোবাসে। দেশপ্রেম মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এটি প্রতিটি মানুষ অন্তর  সুপ্ত অবস্থায় থাকে। শৈশব থেকে যে মাটিতে আমাদের বেড়ে ওঠা তার প্রতিটি ধূলিকণা আমাদের নিকট অধিক প্রিয় পবিত্র। স্বদেশ প্রেম প্রতিটি মানুষকে দেশের কল্যাণে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।

 

স্বদেশ প্রেম কি:

প্রতিটি মানুষের কাছে স্বদেশ প্রেম একটি মজাদার বিষয়। আমরা যে দেশে জন্মগ্রহণ করি সেটি আমাদের মাতৃভূমি। এই মাতৃভূমির সাথে আমাদের সম্পর্ক গভীর। জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, মমত্ববোধ হচ্ছে স্বদেশ প্রেম। স্বদেশ প্রেম রচনা উন্নত, শান্তি ময় দেশ গড়ার  প্রথম শর্ত হচ্ছে দেশের নাগরিকদের দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা থাকতে হবে। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বলেছেন-

স্বদেশের শাস্ত্র মতে, চল সত্য ধর্ম পথে

সুখের করো জ্ঞান আলোচন।

বৃদ্ধি বৃদ্ধিকরণ মাতৃভাষা,

পুরা ও তাহার আশা।

দেশে করো বিদ্যা বিতরণ

 

স্বদেশপ্রেমের রুপরেখা:

আমরা যে দেশে জন্মগ্রহণ করি ,সেদেশে বেড়ে ওঠে সে দেশের মাটি, জল,  বাতাস,   জনবসতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, সবকিছু নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্বদেশের প্রতি ধূলিকণা সাথে আমাদের সম্পর্ক আর্থিক। স্বদেশ প্রেম রচনা কোন কিছুর মাপকাঠিতেই ভালোবাসা  পরিমাপ নাই। স্বদেশের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা থেকে জন্ম নেয় মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা। এই শ্রদ্ধার সাথে নিয়ে মানুষের কল্যাণে  কাজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় ।কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ভাষায়-

 ’’  মনে মনে স্থির ভাবে  প্রতিদান,,

‘’যাহাতে দেশের   হয়  কুশন  বিধান,,

 

স্বদেশ প্রেমের উৎস:

প্রতিটি মানুষ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি নিজেকে। নিজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই সৃষ্টি হয় স্বদেশ প্রেমের। কারণ জন্মের পর আমাদের স্বদেশ প্রেম রচনা সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হচ্ছে জন্মের পর আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হচ্ছে মা ও মাতৃভুমি। তাই মাতৃভূমির প্রতি আমাদের সকলের গভীর মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়। মাছ যেমন জল থেকে তুলে আনলে ছটফট করতে থাকে তেমনি নিজ মাতৃভূমিতে দূরে গেলে মানুষ স্বদেশের প্রতি গভীর আবেগ অনুভব করতে পারে। কবি ভাষায়-

স্বদেশের  প্রেম যত  এইমাত্র অবগত’’

বিদেশেতে অধিবাস যার’’

ভাব তুলি ধ্যানে ভোলে, চিত্রপট চিত্র করে’’

স্বদেশের সকল ব্যাপার।

অজান্তেই বেজে ওঠে’’

আমার কুটির হানি’’

সে যে আমার হিদয়   রানী’’।

 

স্বদেশপ্রেমের উপায়:

প্রকৃত দেশপ্রেম প্রকাশ পায় দেশের জন্য কিছু করার চিববো ইচ্ছার মাধ্যমে। আমরা সকলে নিজের অবস্থান থেকে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারি। যদি আমরা অন্যায় কে প্রশ্রয় না দেই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, দেশের  ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, তবে সেটি হবে আমাদের তরফ থেকে দেশের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। স্বদেশ প্রেম রচনা প্রত্যেক দেশে এমন কিছু মানুষ থাকে যারা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশের ক্ষতি সাধন হয় না। কবি আবদুল আবদুল হাকিমের পশুর সাথে করে বলেছেন-

স্বদেশের উপকারে নাই যার মন,

কে বলে মানুষ তারে? পশু সেই জন।

 

স্বদেশপ্রেমের শিক্ষা:

স্বদেশ প্রেম মানুষকে হতে শিক্ষা দেয়। ভোগে নয়, ত্যাগেই সুখ’’ এই কথাটি সেই ব্যক্তি বিশ্বাস করে যার মনে দেশের জন্য অগাধ ভালোবাসা থাকে। দেশ প্রেম মানুষকে সংকীর্ণতার বেড়া জাল থেকে মুক্ত করে উদারমনা হওয়ার শিক্ষা দেয়। দেশপ্রেমী নাগরিক সর্বদা অন্যের কল্যাণে এগিয়ে আসতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে। কারণ সে জানে দেশের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ থাকলে প্রয়োজনীয়তা কত। স্বদেশ প্রেম রচনা দেশ প্রেম একটি মানুষকে সুশিক্ষিত হতে সাহায্য করে। আর একজন সুশিক্ষিত মানুষ পারে দেশের উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাস বলেছেন-

জননী জন্মভূমি তোমারি পরশে জীবন।

দিতেছে জীবন মরে  নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাস ‘’

সুন্দর মুখ উজ্জ্বল তপন।

হেরেছি প্রথমে আমি তোমারি আকাশে’’

মায়ের কোলেতে শিখিয়াছি’’

ঝুলি  খেলা তোমারি ধূলিতে।

 

ছাত্রজীবনে স্বদেশ প্রেম:

স্বদেশপ্রেম কোন দেশের ভবিষ্যৎ কান্ডারি সে দেশের ছাত্ররা। তারা একটি দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। ছাত্রদের কর্তব্য স্বদেশ প্রেম শুধু বইয়ের পাতা তে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তব জীবনে তার চর্চা করা। বলা হয়ে থাকে ছাত্র জীবন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। যদি ছাত্ররা এভাবে দেশের দলবদ্ধ ভাবে কাজ করার শপথ নেয় তবে সেটি হবে প্রকৃত দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তবে সেটি হবে   প্রকৃত  দেশ প্রেম। স্বদেশ প্রেম রচনা দেশপ্রেম ছাত্রজীবনকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেই। তাই প্রত্যেক ছাত্রজীবনে স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব অপরিসীম । তাই বলেছেন বিদ্রোহী কবি-

কারার ঐ লৌহ কপা ‘’

ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট’’

রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।

 

মানবজীবনের স্বদেশপ্রেমের প্রভাব:

স্বদেশপ্রেমের মানবীয় গুনাবলীর মধ্যে অন্যতম। দেশের প্রতি অনুগত একজন কখনো অন্যের ক্ষতি করার চিন্তা করতে পারে না। তার মধ্যে দেশের সমাজের কোন উন্নতি না হলেও কোন ক্ষতি হয় না। স্বদেশপ্রেমের মন থেকে দূর করে সে মনের সঠিক আলোর দিশা জাগ্রত স্বদেশ প্রেম রচনা করে। একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে দেশের মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসে। একজন মানুষের মনকে প্রকৃত সত্যের সাহিত্য করার ক্ষমতা রাখে। প্রকৃত দেশ প্রেমিক এর সকল দেশের সেরা। যে দেশে মানুষ জন্মগ্রহণ করে সে তার মাতৃভূমি। পৃথিবীর যেকোন স্থানে যায় না কেন আমরা আমরা আমাদের কাছেই একদিন না একদিন আসতে হয়। আর সেটি হচ্ছে আমাদের নিজ নিজ স্বদেশ।  সমুদ্রগুপ্তের ভাষায়-

স্বদেশ প্রেম থেকে বিশ্ব প্রেম। যে নিজের দেশকে ভালোবাসে, সে বিশ্ব প্রেমিক, মানব-

প্রেমিক মানবতা বাদী।’’’

 

অন্ধ  স্বদেশপ্রেম:

দেশের নাগরিকদের মধ্যে স্বদেশপ্রেম বিরাজমান থাকা অবশ্যই সকল নষ্টের জন্য কল্যাণকর। কিন্তু এই স্বদেশ যদি কোনো নাগরিক সৃষ্টি করে তবে  তা হতে পারে ভয়ানক । আমার দেশকে আমি ভালোবাসি তাই আমি অন্য রাষ্ট্রের ক্ষতি কামনা করব এমন মনোভাব কোন কোন রাশির জন্য শুভ ফলাফল বয়ে আনতে পারে না। এমন স্বদেশ প্রেম রচনা দেশ প্রেম হতে পারে না, এটি অন্ধ স্বদেশ প্রেম বলা যেতে পারে। প্রতিবেশীর হারিয়ে যেমন কখনো কাউকে মানসিক শান্তিতে খেতে পারে না তেমনি অকারণে অন্যের ক্ষতি করে কোন রাষ্ট্রের পক্ষে উন্নয়ন সম্ভব নয়। অন্য রাষ্ট্রের নিজের পায়ে কুড়াল মারা কবিগুরু উক্তি থেকে বোঝা যায়-

 

যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচ ‘’

পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানে সে।

 

উপসংহার:

স্বদেশ প্রেম মানে দেশের সকল জনগণ একত্রিত হয়ে হিংসা ভেদাভেদ, সম্প্রদায়িক বৈষম্য কল্যাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন। যে জাতি যত একতাবদ্ধ তাদের উন্নয়ন ঠিক ততটাই মজবুত। জনগণ দেশের ভিত্তি আর দেশপ্রেমী এই ভিত্তি মূল স্তর। যে কোন জাতির পতনের উপাখ্যানের সূত্রপাত হয় স্বদেশ প্রেমহীনতায়। স্বদেশ প্রেম রচনা যে জাতি স্বদেশ প্রেম থাকে না সে জাতি নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। তাই আমাদের সকলের উচিত স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা। কোন কাজ  করলে স্বদেশের উন্নয়ন ঘটবে সেটা যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করানো। দেশের যে কোন বিপদ আপদে সকলে ঝাঁপিয়ে পড়া আমাদের স্বদেশপ্রেমের একটি উদাহরণ।

পরিশেষে বলা যায় স্বদেশ প্রেম এমন একটি বিষয় যা প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে একটি মহৎ গুণ। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত স্বদেশকে ভালোবাসা। স্বদেশের প্রতি আনুগত্য থাকা। আপনারা যদি স্বদেশ প্রেম রচনা সম্পর্কে কিছু জানতে চান তাহলে পুরো আর্টিকেলটি অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। আরো যদি কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা আপনাদের স্বদেশ প্রেম রচনা সম্পর্কে আরো কিছু বলে থাকবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *