মোবাইল ব্যাংকিং এর ইতিহাস সৃষ্টিকারী এবং সবচেয়ে বেশি সমাদৃত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিকাশ। বিকাশের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের ফলে বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেনের প্রচলিত নিয়ম পুরো পাল্টে গিয়েছে। বর্তমানে আর্থিক লেনদেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে বিকাশ। সাধারণত আমরা জানি যে বিকাশের মাধ্যমে শুধুমাত্র টাকা লেনদেন করা যায়। কিন্তু না, বিকাশে আরো অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে যেগুলো আমরা অনেকেই জানিনা। আজকের পোষ্টে বিকাশের সুবিধা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ইউএসএসডি কোডের মাধ্যমে যদিও বিকাশের সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় না তবে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। ইউএসএসডি কোডের মাধ্যমে শুধুমাত্র টাকা পাঠানো টাকা ক্যাশ আউট করা অথবা কিছু সীমাবদ্ধ কাজ করা যায় কিন্তু বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে এর চেয়েও অনেক বেশি কাজ করা সম্ভব। বেশি কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আমরা বিকাশের সুবিধা সমূহ নিয়ে আলোচনা করছি।
লেনদেনের স্টেটমেন্ট
কোর্টের মাধ্যমে শুধুমাত্র লেনদেন করার জন্য স্টেটমেন্ট দেখার ক্ষেত্রে বিস্তারিত দেখা যায় না। কিন্তু বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে আপনার লেনদেনের স্টেটমেন্ট দেখতে চাইলে বিস্তারিতভাবে দেখতে পারবেন। বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে আপনি কখন কোথায় কত টাকা সেন্ড করেছেন কত টাকা রিসিভ করেছেন ইত্যাদি সব তথ্য অ্যাপের মধ্যে পেয়ে যাবেন। যতটা বিস্তারিতভাবে বিকাশ অ্যাপ এ স্টেটমেন্ট দেখা যায় সেটা অন্য কোড ডায়াল করে যে সুবিধা রয়েছে সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
বিকাশের লোন সুবিধা
সাধারণত আমরা লোন করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রসিডিউর এর মধ্য দিয়ে যেতে হয় কিন্তু বিকাশ এপ এর মাধ্যমে লোনের আবেদন করার ক্ষেত্রে এত ঝামেলা নেই। আপনি বিকাশ অ্যাপ একই পরিমাণ টাকা লেনদেন করেন তার উপর ভিত্তি করে আপনাকে বিকাশ বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে লোন দিয়ে থাকেন। ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে 500 টাকা থেকে 20 হাজার টাকা পর্যন্ত লোন দিচ্ছে সিটি ব্যাংক। তাই বিকাশ অ্যাপে যার বেশি লেনদেন শেষে বেশি লোন পাবে।
বিকাশে ফ্রি সেন্ড মানি প্রিয় নাম্বারে
আমাকে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য অথবা টা কই সেন্ড করার জন্য প্রতিবার 100 টাকার অধিক সেন্ড মানি তে 5 টাকা চার্জ কাটা । কিন্তু বিকাশে প্রিয় নাম্বার সেভ করা থাকলে ফ্রিতে টাকা পাঠানো যায়। একটি বিকাশ একাউন্ট থেকে সর্বোচ্চ পাঁচটি প্রিয় নাম্বার অ্যাড করা যায় যেখানে প্রতি মাসে সর্বাধিক 25 হাজার টাকা পর্যন্ত ফ্রি সেন্ড মানি করার সুযোগ রয়েছে। আর এই সুবিধাটি পাওয়ার জন্য বিকাশ অ্যাপ ইন্সটল করে টাকা সেন্ড করার সময় প্রিয় নাম্বার সেভ করার অপশন থাকে সেখানে নাম্বার সেভ করে নিলেই ফ্রিতে টাকা পাঠানো সম্ভব। যারা প্রতিনিয়ত ও বিকাশে লেনদেন করেন তাদের জন্য আপন বা প্রিয়জনদের কাছে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রিয় নাম্বার সেভ করে রাখলে ফ্রিতে টাকা পাঠানোর সুবিধা রয়েছে।
প্রিয় এজেন্ট থেকে কম খরচের টাকা পাঠানো
প্রতীক ক্যাশ আউটে বিকাশে 18.5 টাকার মতো খরচ করতে হয়। কিন্তু যদি বিকাশ অ্যাপ থেকে প্রিয় এজেন্ট নাম্বার সেভ করা হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে চার্জ কাটা হবে 14.9 টাকা। প্রিয় এজেন্ট নাম্বার সেট করলে যেহেতু শুধুমাত্র সেই নাম্বার থেকে ক্যাশ আউট করলে কম খরচে ক্যাশ আউট করা যাচ্ছে তাই এই সুযোগটা নিতে পারেন। প্রতিমাসে শুধুমাত্র একজন এজেন্টের কাছ থেকেই এই সুবিধা পাওয়া যাবে।একাধিক এজেন্ট থেকে এই সুবিধা এ টাকা ক্যাশ আউট করতে চাইলে সম্ভব হবেনা ওই মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত। যেহেতু প্রতিমাসে একজনের কাছ থেকে ক্যাশ আউট করার ক্ষেত্রে কম চার্জের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে ফলে এখানে একাধিক নাম্বার থেকে কম খরচে ক্যাশ আউট করারসুযোগ থাকছে না।
বিকাশের সেভিং সুবিধা
আমরা অনেকেই ইনকামের নির্দিষ্ট একটা এমাউন্টের টাকা জমিয়ে রাখতে পছন্দ করি বিপদ-আপদের জন্য। সেক্ষেত্রে ব্যাংকে গিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেভিং একাউন্ট করা খুবই ঝামেলাপূর্ণ একটা কাজ। কিন্তু বিকাশের মাধ্যমে মাত্র কয়েক ক্লিকে একটা সেভিং একাউন্ট পড়া সম্ভব। বর্তমানে বিকাশে ইসলামী সেভিং একাউন্ট এবং সাধারণ সেভিং অ্যাকাউন্ট দু’ধরনের একাউন্ট করা যাচ্ছে। যারা ইসলামী সেভিং একাউন্ট করতে চান তারাও চাইলে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে মাত্র কয়েকটি ক্লিকে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমানোর জন্য ডিপিএস অথবা সেভিং একাউন্ট করতে পারেন।
বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে 500 টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন এমাউন্টের টাকা প্রতিমাসে জমানোর জন্য সেভিংস একাউন্ট করা যায়। বিভিন্ন ব্যাংক সেভিংস অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণ মুনাফা দিয়ে থাকে বিকাশের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না।
কিউআর কোড দিয়ে লেনদেন
বিকাশ অ্যাপ এর আরো একটা দুর্দান্ত ফিচার হচ্ছে কিউআর কোড দিয়ে লেনদেন করা। কিউআর কোড এমন একটা প্রযুক্তির যেটার মাধ্যমে লেনদেন করলে টাকা ভুলে অন্য নাম্বারে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। বিকাশ অ্যাপ থেকে ক্যাশ আউট করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক এজেন্ট পয়েন্টে একটি নির্দিষ্ট কিউআর কোড দেওয়া থাকে সেটা স্ক্যান করে টাকা ক্যাশ আউট করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নিরাপদে টাকা ক্যাশ আউট করার জন্য বিকাশের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
বিকাশ দিয়ে রেমিটেন্স সুবিধা
বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন করার জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফ্রিল্যান্সারদের টাকা দ্রুত সময়ে আনার জন্য বিকাশ দারুণ একটি উপায় বের করেছে। সাধারণত ফ্রিল্যান্সাররা পেওনিয়ার এর মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা আনার ক্ষেত্রে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা আনে। সেক্ষেত্রে বায়ারের কাছ থেকে ফ্রিল্যান্সারদের কাজ পর্যন্ত টাকা আসছে বেশ কিছুদিন সময় লাগে। যদি বিকাশের মাধ্যমে পেওনিয়ার একাউন্ট কে সংযুক্ত করা হয় তাহলে দ্রুততম সময়ে টাকা চলে আসে। কারণ বিকাশ কর্তৃপক্ষ পেওনিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত সময়ে টাকা আনার ব্যবস্থা চালু করেছে।
বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন বিল পেমেন্ট করা
প্রিপেইড বিদ্যুৎ বিল অথবা পোষ্টপেইড বিদ্যুৎ বিল ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের বিল পেমেন্ট করার জন্য বিকাশের বিকল্প হতে পারে না বর্তমান সময়ে। আমি বলতে পারি বিকাশ অ্যাপ এর যতগুলো সুবিধা রয়েছে তার মধ্যে এই সুবিধাটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর। বিদ্যুৎ বিল প্রদান করার ক্ষেত্রে দেখুন আমাদের কে লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কিন্তু বিকাশ অ্যাপে মাত্র কয়েকটা ক্লিকের মাধ্যমে অথবা প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করা যায় অথবা বিল পরিশোধ করা যায়।
এছাড়া বাজার-সদাই করার ক্ষেত্রে প্রায় প্রত্যেক জায়গাতেই বিকাশে পেমেন্ট করার সুযোগ থাকছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ফি প্রদান করার ক্ষেত্রেও বর্তমানে বিকাশ অনেক এগিয়ে রয়েছে।