তালমাখনা এক ধরনের উদ্ভিজ্জ ভেষজ। এটি সাধারণত তালমাখনা গাছের বীজ। বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ের জন্য তালমাখনা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বেশ হিসেবে তালমাখনা এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু এমন অনেকে আছে যারা তালমাখনা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। তাদের কাছে আজকে তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা ছাড়াও তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম এবং তালমাখনা কোথায় পাওয়া যায় এইসব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনা করব। তাই যারা তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা সহ তালমাখনা সম্পর্কে জানতে চান আর্টিকেলটি খুব গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।
তালমাখনা কি?
তালমাখনা সাধারণত এক ধরনের গাছের থেকে উৎপন্ন। তালমাখনা গাছ সাধারণত 50 সেন্টিমিটার থেকে এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। এর কান্ড থেকে বহু শাখা প্রশাখা বের হয়। তালমাখনা গাছ ফুল উজ্জ্বল বেগুনি লাল কিংবা বেগুনি সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। তালমাখনার গাছের বীজ আকারে ছোট এবং গোলাকৃতির। বীজগুলো দেখতে অনেকটা তিলের মত তবে নিজের গায়ের রং হচ্ছে গাড় খয়েরী। তালমাখনা এর প্রচলিত নাম হচ্ছে কুলেখাড়া। তবে ইউনানী ভাষায় একে তালমাখনার বলা হয়ে থাকে। এছাড়া আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় একে কোকিলাক্ষ বলা হয়ে থাকে।
তালমাখনার রাসায়নিক উপাদান
তালমাখনা অনেক রাসায়নিক উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। যেমন অ্যালকালয়েড, ফাইটোস্টেরল, উদাই তেল, হাইড্রো কার্বন ইত্যাদি।
তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা
তালমাখনা খাওয়ার বহুমাত্রিক উপকারিতা রয়েছে। এতক্ষণ যেহেতু আমরা তালমাখানা সম্পর্কে জানলাম এখন তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানব। নিচে বেশ কিছু তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ের জন্য তালমাখনা
গ্যাস্ট্রিক এমন একটি রোগ যা খুব সামান্য কারণেই হয়ে থাকে। অর্থাৎ একজন মানুষ যদি খাবারে অনিয়মিত হয় অথবা ভাজাঁপুরা অতি মাত্রায় গ্রহণ করে তবে গ্যাস্ট্রিক হয়ে থাকে। গ্যাস্টিকের কারণে বুকের জ্বালাপোড়া করবে এবং পেট ফুলে থাকতে পারে। এই গ্যাস্ট্রিকের কারণে মানুষের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় এমনকি সে ঠিকমতো খেতেও পারে না। গ্যাস্ট্রিক হলে আমরা বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট দ্বারা গেস্টিকুলেশন করতে চাই। কিন্তু বেশি বেশি ট্যাবলেট খাওয়ার ফলে একসময় ওষুধ আর কাজ করতে চায়না। আসলে গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধের জন্য আপনাকে সচেতন হতে হবে খাদ্যাভাসের দিকে নজর রাখতে হবে এবং এর কিছু প্রাকৃতিক ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তালমাখনা হচ্ছে এরকম প্রাকৃতিক। তালমাখনার খাওয়ার উপকারিতা এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান। তাই যারা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সহজ সমাধান চান তারা তালমাখনা পেতে পারেন।
শরীরের দুর্বলতার তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের মধ্যে অনেকের শরীরে অযথাই ক্লান্তিবোধ চলে আসে। এবং আমরা সারাদিন ঘরে বসে থাকি এবং কোন কাজে মন বসে না। শারীরিক দুর্বলতা কি সারানোর জন্য আপনি তালমাখনা খেতে পারেন। তালমাখনা খেলে শরীর মন চাঙ্গা হবে এবং কাম কাজে মন বসবে। তবে তালমাখনার সাথে যদি সামান্য দুধ খেতে পারেন তাহলে শারীরিক দুর্বলতা খুবই তাড়াতাড়ি কেটে যাবে। এবং আপনি খুবই দ্রুত শক্তি অনুভব করবেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যে আপনি যদি রাতের বেলা দুধ খান এবং তালমাখনা সকাল বেলা খেয়ে নেন।
বীর্য গাড়ো করতে তালমাখনার উপকারিতা
যাদের বীর্য খুব পাতলা তাদের অনেক সময় সন্তান জন্ম দিতে সমস্যা হয়। যদি আপনার বীর্য গাড়ো করতে চান তবে তালমাখনা পেতে পারেন। তালমাখনা খাওয়ার পরে আপনার বীর্য ঘন হবে এবং তার সন্তান জন্মদানের উপযোগী হবে ।
হরমোনের সমস্যায় তালমাখনা
তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করছি। আর আপনার শরীরের সবচেয়ে বেশি উপকার হয় যদি হরমোনের সমস্যা দূর করা যায়। হরমোন আমাদের শরীরের যাবতীয় শরীর বৃত্তীয় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এমনকি মেয়েদের শারীরিক ইচ্ছে নির্ভর করে অনেকটা হরমোন এর উপর। যাদের এই হরমোনের ঘাটতি রয়েছে তাদের শারীরিক মিলনে যথেষ্ট অনীহা দেখা দিতে পারে। এই ধরনের শারীরিক মিলন অনীহা দূর করার হরমোনের ভূমিকা অনেক। তাই আপনারা হরমোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার জন্য তালমাখনার খেতে পারেন। হরমোন নিয়ন্ত্রণ তালমাখনা খাওয়ার অন্যতম উপকারিতা।
বাত ও সন্ধির ব্যথায় তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা
বাত সন্ধির ব্যথায় তালমাখনা পাতা প্রলেপ দিলে উপকার পাবেন। এছাড়াও এক থেকে তিন রান তালমাখনার বিচূর্ণ যদি এক গ্লাস গরম পানির সাথে খান তাহলে আরও ভালো কাজ করবে।
ত্বকের সমস্যায় তালমাখনা
তালমাখনা খাওয়ার অন্যতম উপকারিতা হচ্ছে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান। অর্থাৎ যাদের ত্বকে মলিনতা রয়েছে বা ব্রণের দাগ রয়েছে তারা তালমাখনা খেলে তা দূর হয়ে যেতে পারে। যাদের বয়সের ছাপ এবং বলিরেখা দেখা যায় তারাও তালমাখনার বীজ অথবা তালমাখনার তেল খেতে পারেন।
হজম শক্তি বৃদ্ধি এবং পরিষ্কারক হিসেবে তালমাখনা
আপনি যদি আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে চান তবে তালমাখনার বিষ খেতে পারেন। এছাড়া তালমাখনার বীজ আপনার পেটে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। অর্থাৎ পরিষ্কারক হিসেবে আপনি তালমাখনা খেলে উপকার পাবেন। তাই প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে এক গ্লাস তালমাখনা পানি আপনাকে খাওয়ার পরামর্শ দিলাম।
দেহের পুষ্টি সাধন এবং দুর্বলতায় তালমাখনা
যাদের দেহে পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে তারা তিন গ্রাম তালমাখনা বীজের চূর্ণ এবং এক গ্রাম শতমূলী চূর্ণ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং রাতে শোবার পূর্বে দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার দুর্বলতা চলে যেতে পারে এবং পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হতে পারে।
তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম
আমরা অনেকেই হয়তো তালমাখনা সম্পর্কে জেনেছি কিন্তু তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এখনো জানিনা। তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম একেবারেই সহজ। আপনি তালমাখনার বীজগুলোকে কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন দেখবেন বীজগুলো পানি গ্রহণ করে কিছুটা ফুলে উঠেছে। এই তালমাখনা বীজাণু প্রাণীটিকে আপনি খেয়ে ফেলবেন। এই তালমাখনা সহ ভেজানো পানি খালি পেটে খাবেন। কারণ ভরা পেটে খেলে আপনারা এর যথেষ্ট উপকারী পাওয়া যায় না। তালমাখনা খালি পেটে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
তালমাখনার পাউডার
তালমাখনা পাউডার অবস্থায় বিভিন্ন ডাক্তারের দোকানে পাওয়া যায়। আপনারা এই পাউডারকে পানিতে গুলে খেয়ে নিতে পারেন। কিন্তু যদি পাউডার অবস্থায় তালমাখনা কে পাওনা যায় তবে পানিতে ভিজিয়ে তালমাখনা খেলেও উপকার পাবেন।
তালমাখনা খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা
তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে যথেষ্ট সেটা আমরা জানলাম। কিন্তু তাই বলে কি বেশি পরিমাণ তালমাখনা খাওয়া যাবে? না এটা কখনোই করা উচিত নয়। কারণ আপনি যদি বেশি পরিমাণ তালমাখনা খান বেশি উপকার পাবেন এই আশায় তবে সেটা হিতে বিপরীত হতে পারে। অর্থাৎ আপনি নিয়ম মেনে খাবেন। যদি বেশি তালমাখনা খাওয়া হয় তবে তা পেটে অতিরিক্ত বায়ু উৎপন্ন করতে পারে।
তালমাখনা কোথায় পাবেন
তালমাখনা আপনারা বিভিন্ন বাইনাতি দোকানে বিশেষ করে যারা বিভিন্ন ঔষধি গাছ বা বীজ বিক্রি করে তাদের দোকানে পাবেন।
তালমাখনা বীজের দাম
যেহেতু বাজারদর আসলে প্রতিনিয়ত উঠানামা করে তাই এর বাজার দর সঠিকভাবে বলা মুশকিল। আর আপনি যে সকল বাইনাতি দোকান থেকে তালমাখনা কিনবেন সেই সকল দোকানের ভিন্ন তার ওপর নির্ভর করে তালমাখনার দাম। আর বীজের গুণাগুণ ভেদেও তালমাখনা দাম হতে পারে। তবে সাধারণত এক হাজার থেকে 15 হাজার টাকার মধ্যে 1 কেজি তালমাখনা পাওয়া যায়। তবে সেটা সময় বেদে কমবেশি হতে পারে। তবে যখন আপনি তালমাখনা কিনবেন তখন এর উৎকৃষ্ট গুণাগুণ সম্পন্ন বীজগুলো দেখে কিনবেন।
আজকের আর্টিকেল এর বিষয় ছিল তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। তবে তালমাখনা খাওয়ার যেসকল উপকারিতা বলেছি এগুলো মোটামুটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। আপনার যদি জটিল কোন রোগ হয়ে থাকে যা তালমাখনা খেয়ে সারাতে চান তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন। কারণ যদি আপনার তালমাখনা অতিরিক্ত হয়ে যায় তবে তা বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।