কালোজিরা হলো এমন একটি উপাদান যা প্রায় সকলের ঘরেই থাকে। কালিজিরা আমাদের বিভিন্নভাবে উপকার করে থাকে। সেটা খাবারের দিকে হোক বা রোগের দিক দিয়েই হোক না কেন। অনেক সময় আমরা কালোজিরা বিভিন্ন ধরনের খাবারের মধ্যে দিয়ে থাকি। কালোজিরা হল বিভিন্ন ধরনের রোগের মহা ঔষধ। প্রাচীনকাল থেকেই কালিজিরা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কালোজিরার উপকারিতা অনেক। তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কালিজিরার উপকারিতা সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো কালিজিরার উপকারিতা সম্পর্কে। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে জানা যাক কালিজিরার উপকারিতা সম্পর্কে।
কালোজিরা
কালোজিরার ইংরেজি নাম হল Black Caraway, also known as Black Cumin, Nigella, Kalojeere, এবং Kalonji। কালোজিরার হলো একটি মাঝারি আকৃতির মৌসুমী গাছ। একবার ফুল ও ফল হয়। এই কালোজিরার বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে Nigella Sativa Linn। কালোজিরার ক্ষেত্রে স্ত্রী এবং পুরুষ দুই ধরনের ফুল হয়ে থাকে। সাধারণত কালোজিরা ফুলের রং হয়ে থাকে নীল-সাদা আবার অনেক সময় হলদে ভাব। কালোজিরার রয়েছে পাঁচটি পাপড়ি। এই ফুল তিনকোনা আকৃতির কালো রং এর বীজ হয়। আকৃতি গোলাকার এবং প্রতিটি ফলে থাকে 20 থেকে 25 টি বীজ।
কালোজিরার উৎপত্তি
কালোজিরা হল একটি অতি প্রাচীন মশল্লা। কালিজিরার ইতিহাস প্রায় 3000 বছর খ্রিস্টপূর্ব থেকেও বেশি পুরাতন। পূর্ব ভূমধ্যসাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ভারত পর্যন্ত এর উৎপত্তিস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমান বিশ্বে প্রতিবছর উৎপন্ন করা হয়। আগের তুলনায় এখন আরো বেশি বেড়ে গেছে।
নিচে কালিজিরার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
কালোজিরার উপকারিতা
কালোজিরা হলো এমন একটি উপাদান যা কিনা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে তার পাশাপাশি ঔষধি গুনাগুনও রয়েছে অনেক।
সর্দি কাশি নিরাময়ের কালোজিরার উপকারিতা
আমাদের মধ্যে যে সকল মানুষেরা সর্দি-কাশির মতো সমস্যায় ভুগছেন। তারা প্রতিদিন এক চা-চামচ কালোজিরার তেলের সঙ্গে পরিমাণমতো মধু মিশিয়ে দিনে 3 বার সেবন করুন। তাহলে খুব সহজেই সর্দি-কাশি থেকে নিরাময় পাবেন। খুব দ্রুত যদি আপনি এই সর্দি, কাশি ও জ্বর থেকে নিরাময় পেতে চান তাহলে এক চা চামচ কালিজিরার তেলের সঙ্গে পরিমাণমতো মধু ও তুলসী পাতার রস মিশিয়ে সেবন করুন দেখবেন উপকার পাবেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কালোজিরা খুব ভালো কাজ করে। কালোজিরা তেল রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুনাগুন। যা মানব শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সতেজ রাখতে পারে। তাই আমরা যদি নিয়মিতভাবে কালোজিরা খাই তাহলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
মাথা ব্যথা দূর করে কালোজিরা
আমাদের মধ্যে প্রায় সকলেরই মাথাব্যথা সমস্যাটি হয়ে থাকে। আর এই সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়ার জন্য কালোজিরার তেল খুবই উপকারী। যখন আপনার মাথা ব্যথা করবে তখন আপনি কালোজিরার তেল মাথায় লাগাবেন দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার মাথাব্যথা কমে গেছে। কেননা কালোজিরা তেল খুব দ্রুত তাড়াতাড়ি মাথা ব্যথা কমিয়ে দেয়।
চুল পড়া রোধে কালোজিরা তেলের উপকারিতা
আমাদের মধ্যে অনেক মা-বোনের মাথা থেকে চুল পড়ে আবার এই সমস্যাটা অনেক ছেলে মানুষের হয়ে থাকে। এ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা কালোজিরার তেল ব্যবহার করতে পারি। কেননা কালোজিরার তেল আমাদের চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে এবং চুলের গোড়া মজবুত করতে সক্ষম। তাই আমরা যদি চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাই তাহলে প্রতিদিন চুলে কালোজিরা তেল ব্যবহার করব। যাতে করে আমাদের চুলপড়া সমস্যাটা কিছুটা হলেও কমবে।
পেটের সমস্যা সমাধানে কালোজিরার উপকারিতা
আপনার যদি নিয়মিত পেটের সমস্যা হয়ে থাকে তবে এই সমস্যা থেকে সমাধান এর জন্য আপনি প্রতিদিন কালোজিরা সেবন করতে পারেন। যে সকল মানুষেরা নিয়মিত পেটের সমস্যায় ভুগছেন সে সকল ব্যক্তিরা কালোজিরা ভাজা করে গুঁড়ো করে নিন। এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে পরিমাণ মতো কালো জিরার গুঁড়ো মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে বিকাল সেবন করুন দেখবেন এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি উপকার পাবেন।
অ্যাসিডিটি ও গ্যাসের সমস্যার সমাধানে কালোজিরার উপকারিতা
আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাহলে আপনার এই সমস্যার জন্য কালিজিরা ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমত আপনি এক কাপ দুধ এর সঙ্গে পরিমাণমতো কালিজিরার তেল মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চার বার সেবন করুন। তাহলে দেখতে পাবেন গ্যাসের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও সমাধান পাবেন। এভাবে আপনি এক থেকে দু সপ্তাহ সেবন করুন দেখবেন উপকার পাবেন।
ওজন কমাতে কালোজিরা
অনেক সময় আমাদের শরীর অতিরিক্ত বাড়ি হয়ে যায়। আর শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সক্ষম কালোজিরা। তাছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে ওজন কমাতে কালোজিরার তেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কালোজিরার উপকারিতা
বর্তমানে ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা মানুষের মরণ ব্যাধি হিসেবে পরিচিত। ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে জীবননাশের ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে ডায়াবেটিস রোগ থেকে নিরাময় পেতে কালোজিরা সাহায্য করে। আপনি যদি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে চান তাহলে প্রতিদিন সকাল বেলায় এক কাপ চায়ের সঙ্গে কালোজিরার তেল মিশ্রন করে খাবেন। দেখবেন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে কালোজিরার ভূমিকা
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে কালোজিরার উপকারিতা অপরিসীম। ত্বকের বিভিন্ন ধরনের কালো দাগ এবং ব্রণও সারাতে কালোজিরা সাহায্য করে। আপনি যদি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে চান তাহলে কালোজিরার তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে এটি দিনে দুইবার মুখে লাগান দেখবেন আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা
শরীরে যদি কোলেস্টরলের মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায় তবে তা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কালোজিরা রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের বের করতে সক্ষম। তাছাড়া ভালো কোলেস্টেরল উৎপাদন করতে কালোজিরা সাহায্য করে। তাই বলা যায় যে কোলেস্টরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে নিয়মিত কালোজিরা খেতে হবে।
মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতে কালোজিরার উপকারিতা
যারা মা হয়ে থাকেন তাদের মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতে কালোজিরার উপকারিতা অপরিসীম। মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে কালোজিরার একটি মূল্যবান উপাদান। প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে কালো জিরা গুঁড়ো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে স্তনদানকারী মহিলারা সেবন করতে পারেন। তাছাড়া আপনি চাইলে কালোজিরা তেলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে সেবন করতে পারেন। এগুলো সেবন করলে আপনি দেখবেন আপনার মাতৃদুগ্ধ আগের তুলনায় বেশি পরিমাণ হয়েছে।
চর্মরোগ থেকে নিরাময় পেতে কালোজিরা
আমাদের মধ্যে অনেকেরই চর্ম রোগের মতো সমস্যা হয়ে থাকে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি কালোজিরার তেল ব্যবহার করতে পারেন। আপনার যেই জায়গায় চর্ম রোগের মতো সমস্যা হবে আপনি সেই জায়গায় কালোজিরা তেল মালিশ করতে পারেন। তাছাড়া আপনি চাইলে হলুদের রসের সঙ্গে পরিমাণমতো কালিজিরার তেল এবং মধু মিশিয়ে প্রতিদিন দিনে 3 বার সেবন করলে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ইনশাল্লাহ উপকার পাবেন।
কালিজিরা খাওয়ার কিছু নিয়ম
আমরা আপনাদের সামনে কালোজিরা উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কিন্তু কালোজিরা খাওয়ার কিছু নিয়ম ও রয়েছে। নিচে এই নিয়ম গুলো ব্যাখ্যা করা হলো।
- কালোজিরা আমরা তরকারিতে মসলা হিসেবে খেতে পারি।
- কালোজিরার তেল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- কাচা কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
- অনেক সময় আমরা রুটি বানানোর সময় কালিজিরা ব্যবহার করে থাকি।
- আবার আমরা চাটনি বানানোর সময় কালোজিরা ব্যবহার করতে পারি।
- বিস্কুট, কেক, নিমকি, মিষ্টির মত একাধিক খাবারে কালোজিরা ব্যবহার করা হয়।
- এক কথায় বলতে গেলে আমরা সবকিছুতেই প্রায় কালোজিরার ব্যবহার করতে পারি
কালোজিরার অপকারিতা
কালোজিরার যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি কিছু খারাপ দিক ও রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণে কালোজিরা খাওয়ার ফলে শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণ কালোজিরা সেবন করলে ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণ কালোজিরা সেবন করলে শরীরের শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে। যার কারণে শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই অতিরিক্ত কোন জিনিস খাওয়া ঠিক না।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আপনারা বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন কালোজিরার উপকারিতা গুলোর সম্পর্কে। কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে যে সকল তথ্য এখানে দেওয়া হয়েছে তা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।