চলুন বন্ধুরা আজকে আমরা আপনাদের সাথে আলোর প্রতিফলন কাকে বলে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। আপনার যদি আমার আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন আলোর প্রতিফলন কাকে বলে এবং এর উদাহরণ কি কি হতে পারে চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আজকের বিষয়।
আলো কোন মাধ্যমের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য কোনো মাধ্যমে বাধা পেলে দুই মাধ্যমের বিভেদ তল থেকে কিছু পরিমাণ আলোকরশ্মি আগের মাধ্যমে ফিরে আসে। এ ঘটনাটি আলোর প্রতিফলন বলে। অথবা আলোক উৎস থেকে আপতিত রশ্মি ভূপৃষ্ঠে বাধা পেলে কিছু আলো পুনরায় আগের মাধ্যমে ফিরে আসে, এ ঘটনাকে আমরা আলোর প্রতিফলন বলতে পারি।
আলোর প্রতিফলন কাকে বলে? উদাহরণ দাও?
আলোর প্রতিফলন: আলোকরশ্মি যখন কোন স্বচ্ছ ও সমসত্ত্ব মাধ্যম থেকে এসে অন্য এক মাধ্যমে আপতিত হয়, তখন ওই আলোকরশ্মির কিছু অংশ দ্বিতীয় মাধ্যমে থেকে দিক পরিবর্তন করে আবার প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে, একে বলে প্রতিফলন।
প্রতিফলনের উদাহরণ: দিনের বেলা যখন সূর্য রশ্মির মধ্যে পরে তখন ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যায় যে আলোকরশ্মি সামনের দেওয়ালে বা জলের পাশে গাছের মধ্যে আলোর ঝিকিমিকি করতে দেখা যায়। আসলে এটি আলোর প্রতিফলনের জন্য ঘটে থাকে।
আলোর প্রতিফলনের সূত্র
* আপতিত রশ্মি, প্রতিফলিত রশ্মি আপাতন বিন্দু প্রতিফলকের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে থাকে।
* আপাতন কোন এবং প্রতিফলন কোণ পরস্পর সমান হয়।
আলোর প্রতিফলন কত প্রকার ও কি কি
প্রতিফলকের( আয়না, স্থির জল, ঢেউ জল, মসৃণ ও অমসৃণ তল, সাদা পর্দা, টিনের ঢেউ, ইত্যাদির) প্রকৃতি অনুযায়ী প্রতিফলন দুই প্রকার। যথা-
* নিয়মিত প্রতিফলন
* ও বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন
নিয়মিত প্রতিফলন কাকে বলে? এর উদাহরণ দাও?
নিয়মিত প্রতিফলন: আলোক রশ্মি গুচ্ছ কোন মসৃণ সমতলে আপতিত হলে প্রতিফলন আলোকরশ্মি গুলি ও সমান্তরাল হিসেবে একটি নির্দিষ্ট দিকে চলে যায়। আলোকরশ্মির এই ধরনের প্রতিফলন ও নিয়মিত প্রতিফলন রেগুলার ইলেকশন বলে।
নিয়মিত প্রতিফলন এর উদাহরণ:
আয়না, স্থির জল, ঢেউ জল, সাদা কাপড়, মসৃণ ধাতব দল ইত্যাদি থেকে নিয়মিত প্রতিফলন হয়। এই প্রতিফলনের ফলে বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। তাই সমতল দর্পণে বস্তুর প্রতিবিম্ব এবং পুকুরের জলের গাছের প্রতি দেখা যায়।
বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ও অনিয়মিত প্রতিফলন কাকে বলে? এর উদাহরণ দাও?
বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন: আলোকরশ্মি গুচ্ছ কোন অমসৃণ তলের আপতিত হলে প্রতিফলন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং আপতিত রশ্মি প্রতিফলিত রশ্মি গুচ্ছের কোন মিল থাকে না। এই ধরনের প্রতিফলন ও নিয়মিত প্রতিফলন ও বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন বলা হয়।
উদাহরণ: অমসৃণ ধাতব তল, ঢেউ টিনের উপর প্রতিফলন, সিনেমা হলে পদ্মা, ঘষা কাজ, ইত্যাদি অমসৃণ বা বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের উদাহরণ।
বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের ব্যবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো?
বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের পুতির সব সময় অমসৃণ হয়। তারা আপাতত সমন্তরাল রশিদ প্রতিফলকের উপর পড়ে তখন প্রতিফলনের সূত্র অনুযায়ী বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন কোণ গুলির বিভিন্ন হয়। এর ফলে প্রতিফলিত রশ্মি গুলি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঘরের দেওয়াল বইয়ের পাতা সিনেমার পর্দা প্রবৃত্তি থেকে আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটতে পারে। এর প্রতিফলন সূত্র সূত্র শুধু প্রতিফলক বস্তুটি দেখা যায়। বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের আপতিত রশ্মি গুলো বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে বলে বস্তুটিকে যে কোন দিকে থেকে দেখলে সমান উজ্জ্বল দেখা যায়।
বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের প্রতিবিম্ব গঠিত হয় না কেন?
ব্যাখ্যা: বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন প্রতিফলিত রশ্মি গুলি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে প্রতিফলিত কোন একটি বিশেষ বিন্দুতে মিলে হয় না বা কোন এক বিশেষ বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয় না। এজন্য প্রতিফলিত রশ্মি গুলি ফলটিকে আলোকিত করলেও আলোর প্রতিবিম্ব গঠন করতে পারে না। তাই বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের প্রতিবিম্ব গঠিত হয় না।
নিয়মিত প্রতিফলন ও বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন এর মধ্যে পার্থক্য
নিয়মিত প্রতিফলন
* নিয়মিত প্রতিফলন মসৃণ ও সতেজ প্রতিফলকের হয়।
*নিয়মিত প্রতিফলন এ প্রতিফলক বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন করে।
* নিয়মিত প্রতিফলন প্রতিফলিত রশ্মি কে ঘুরিয়ে প্রতিফলিত রশ্মি কে পরিবর্তন করা যায়।
* নিয়মিত প্রতিফলন প্রতিফলিত আলো একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে বেশি পরিমাণে আমাদের চোখে এসে পড়ে। কেবলমাত্র সেই দিকে তাকালে প্রতিফলক চকচকে দেখায়।
* নিয়মিত প্রতিফলন প্রতিফলিত রশ্মি আপতিত রশ্মি অনুরূপহয়।
বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন
*বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন অমসৃণ ও অসত্য প্রতিফলক কে হয়।
* বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের বস্তুর প্রতিবিম্ব পাওয়া যায় না।
* বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন এর ক্ষেত্রে ঘুরিয়ে প্রতিফলিত রশ্মি ইচ্ছেমতন নির্দিষ্ট কোন দিকে ফেলা যায় না।
* বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন প্রতিফলিত রশ্মি গুলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় অল্প অথচ সমপরিমাণ আলো আমাদের চোখে পৌঁছায় এবং যে কোন দিক থেকে প্রতিফলক তার উজ্জ্বল দেখায়।
* বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ও প্রতিফলিত রশ্মি এর মধ্যে কোন সাদৃশ্য থাকেনা।
আলোর প্রতিফলনের নিয়ম
আলোর প্রতিফলনের প্রথম সূত্র :আপতিত রশ্মি প্রতিফলিত রশ্মি এবং অবদান বিন্দুতে প্রতিফলকের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে থাকে।
আলোর প্রতিফলনের দ্বিতীয় সূত্র: আপাতন কোন এবং প্রতিফলন কোণ পরস্পর সমান হয়।
আলোর প্রতিফলনের সূত্র ব্যাখ্যা
উপকরণ: একটি সমতল দর্পণ , একটি ড্রইং বোর্ড,৪টি টি বড় পিন, ৪ বোর্ড পিন স্কেল, চাঁদা, সরু পেন্সিল, এবং একখানা পরিষ্কার সাদা কাগজ।
আলোর প্রতিফলন ও প্রমাণ
প্রথমে ড্রইং বোর্ডের ওপর সাদা কাগজ পাতা হল। তারপর কাগজের চার কোণায় চারটি বোর্ড পেইন্টে কাগজটিকে টানটান করে আটকানো হল। কাগজ উপর স্কেল ও পেন্সিল দিয়ে একটি রেখা mm’টানা হলো /ওই রেখা বরাবর সমতল দর্পণ দিকে খাড়াভাবে রাখা হল.
দর্পণের সামনে 2 পিন aও b কে কাগজের উপর লম্বভাবে একই দেখায় এমনভাবে কথা হল যেab রেখাmm’ রেখার সঙ্গে তীর্যকভাবে থাকে.
এই অবস্থায় কাগজের বরাবর একটি চোখ রেখে আরো দুই-তিনc ওd কে এমন ভাবে পোতা হলো জেপিন 2 টি a ওb এর প্রতিবিম্বের সঙ্গে একই সরলরেখায় থাকে
এরপর কাগজের ওপর থেকে দর্পণ ওপেন গুলোকে উঠিয়ে নেওয়া হলো a,b এবংc.d বিন্দুগুলি যুক্ত করে দর্পণের দিকে বাড়ানো হলো এবং তারা mm’ রেখাকে o বিন্দুতে ছেদ করল. সবশেষে o বিন্দুতে দর্পণের অবস্থানের ওপর on লম্বা টানা হলো. তাহলে ab আপতিত রশ্মি, cd হল প্রতিফলিত রশ্মি, on আপাতন বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব.
a,b,c,d এবং n- এই বিন্দুগুলি কাগজের ওপর থাকায় বলা যায় যে আপতিত রশ্মি, প্রতিফলিত রশ্মি এবং আপাতন বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে আছে. সুতরাং প্রতিফলনের প্রথম সূত্র সত্যতা প্রমাণিত হলো.
চাঁদার সাহায্যে<aon ও<bon মেপে দেখা গেল<aon=<don হয়েছে, এবারে a ওb বিন্দুর অবস্থান পরবর্তি পরীক্ষাটি আরো দুইবার করা হলো. দেখা গেল প্রতি ক্ষেত্রে আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণের মান পরস্পর সমান হয়েছে সুতরাং প্রতিফলনের দ্বিতীয় সূত্রটি প্রমাণিত হলো ।
পরিশেষে বলা যায় যে আলোর প্রতিফলন কাকে বলে আপনারা যদি জানতে চান তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে বুঝতে পারবেন আলোর প্রতিফলন কাকে বলে এবং কি কি এই সম্পর্কে। এ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানার থাকলে আপনারা আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারবেন। আশা করি আমরা আপনাদের সঠিক তথ্য দিতে পারব।