আল্লাহ তাহালা দিন এবং রাত্রি সৃষ্টি করেছেন এবং কিছুদিন এবং কিছু রাতকে তিনি বিশেষভাবে মর্যাদা দিয়েছেন যেমন সমস্ত ফেরেশতাদের মধ্যে জিব্রাইল আলাই সাল্লাম কে আল্লাহতালা সম্মানিত করেছেন সমস্ত নবীদের মধ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন তেমনি ভাবে দিন এবং রাত্রিতে বিশেষ কিছু দিন এবং রাতকে আল্লাহ বিশেষভাবে মর্যাদা দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি রজনী হচ্ছে শবে কদর হাদীস শরীফে সবে কদরকে হাজার মাসের অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে এবং এ রাত্রিতে এবাদত করা হাজার মাস এবাদত করার সমান এমনটা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তবে এখন জানার বিষয় হলো
- শবে কদরে কি কি আমল করতে হবে
- কোন কোন সূরা দিয়ে নামাজ পড়তে হবে
- নামাজের কি নিয়ত করতে হবে
- কত রাকাত নামাজ পড়তে হবে
- নামাজের বিশেষ কোনো নিয়ম আছে কিনা
- বিশেষ কোন দোয়া আছে কিনা
- এই রাত্রিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আমল করতে বলেছেন বলেছেন
ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক আরো অনেক বিষয় নিয়ে আজকে আলোচনা করব
শবে কদর অর্থ কি
প্রথমে আমাদের এটা জানতে হবে কেননা কোন বিষয়ের মূল যদি জানা না থাকে তাহলে ওই বিষয়টার বিস্তারিত জানার ফায়দা তেমন হয় না তাই প্রথমে আমাদের জানতে হবে শবে কদর অর্থ কি ?
শবে কদর কথাটি ফারসী। এর আরবী হল ‘লাইলাতুল কদর’। শব ও লাইলাত শব্দের অর্থ রাত। আর কদর শব্দের অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান।
শবে কদরের নামাজ কত রাকাত জানার পূর্বে জানতে হবে
কেন শবে কদরকে ‘শবে কদর’ নামকরণ করা হয়েছে।
এ রাতের মাহাত্ম্য ও সম্মানের কারণেই একে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর বলা হয় । কিংবা কদর শব্দের অর্থ তাকদীর ও আদেশ। এ রাতে যেহেতু পরবর্তী এক বৎসরের হায়াত, মওত, রিযিক প্রভৃতি যাবতীয় বিষয়ের তাকদীর লেখা হয় (অর্থাৎ, লওহে মাহফুজ থেকে তা নকল করে সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাদের কাছে সোপর্দ করা হয়) তাই এ রাতকে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর বলা হয়
শবে কদরের নামাজের নিয়ম
শবে কদরের নামাজ কত রাকাত ও কি কি সুরা দিয়ে পড়তে হয়।
কত রাকআত নফল বা কি কি সূরা দিয়ে পড়তে হবে নির্দিষ্ট নেই- যত রাকআত ইচ্ছা, যে সূরা দিয়ে ইচ্ছা পড়া যায়।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম- নিয়ত সম্পর্কে
শবে কদরে নামাযের বিশেষ কোন নিয়ত নেই- ইশার পর সুবহে সাদেক পর্যন্ত যে নফল পড়া হয়। তাকে তাহাজ্জুদ বলে, তাই নফল বা তাহাজ্জুদের নিয়তে নামায পড়লে চলে ।
শবে কদরের নামাজ কত রাকাত জানার প্রসঙ্গে জানতে হবে
শবে কদরে নামাজ কোথায় পড়তে হবে ঘরে না মসজিদে ?
নফল নামায যেহেতু ঘরে পড়া উত্তম, তাই এ রাতেও ঘরে থেকে নামায পড়লে উত্তম হবে।
একান্তই ঘরে নামাযের পরিবেশ না থাকলে তিনিমসজিদে গিয়ে পড়বেন।
বর্তমানে শবে কদরের নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত
তবে বর্তমানে শবে বরাত ও শবে কদরে ইবাদত করার জন্য মসজিদে ভীড় করার একটা রছম হয়ে গিয়েছে। এর ভিত্তিতে কোন কোন মুফতী শবে কদর ও শবে বরাতে ইবাদত করার জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়াকে মাকরূহ ও বিদআত বলে ফতুয়া দিয়েছেন। তাই যথা সম্ভব ঘরেই ইবাদত করা উত্তম হবে।
শবে কদর কবে
রমযান মাসের শেষ দশকের মধ্যে যে কোন বেজোড় রাতে শবে কদর হতে পারে, যেমন ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখের রাত। ২৭শে রাতের কথা বিশেষভাবে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
শবে কদরের দোয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদরে যে আমলের নির্দেশ দিয়েছেন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে শবে কদরে বিশেষভাবে এই দুআ পড়তে শিক্ষা দেন
اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني. (رواه الترمذي واحمد)
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি তো অত্যন্ত ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালবাস; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও।
শবে কদরের নামাজ কত রাকাত জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা জানবো
শবে কদরে যে আমল বেশি কবুল হয়ে থাকে
শবে কদরে বিশেষভাবে দুআ কবুল হয়ে থাকে, তাই এ রাতে বেশী বেশী দুআ করা চাই।
শবে কদরের নামাজ কত রাকাত জানার পর এখন আমরা জানবো
শবে কদরে যে আমল করা মুস্তাহাব
যে ব্যক্তি শবে কদর চিনতে পারবে তার জন্য শবে কদরে গোসল করা মোস্তাহাব।
শবে কদরের নামাজ কত রাকাত সহ অনেক কিছু জানলাম এ পর্যায়ে জানব
শবে কদরে কি কি আমল করা যায়
লাইলাতুল কদরে নফল নামায, তিলাওয়াত, যিকির ইত্যাদি যে কোন ইবাদত করা যায়।
শবে কদরের নিদর্শন কি
হযরত আবূ আসিম নুবায়েল (রঃ) স্বীয় সনদে হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একবার বলেছিলেনঃ “আমাকে লায়লাতুল কাদর দেখানো হয়েছে। তারপর ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। রমযান মাসের শেষ দশ রাত্রির মধ্যে এটা রয়েছে। এ রাত্রি খুবই শান্তিপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। এ রাত্রে শীতও বেশী থাকে না এবং গরমও বেশি থাকে না। এ রাত্রি এতো বেশি রওশন ও উজ্জ্বল থাকে যে, মনে হয় যেন চাদ হাসছে। রৌদ্রের তাপ ছড়িয়ে পড়ার আগে সূর্যের সাথে শয়তান আত্মপ্রকাশ করে না।”
শবে কদর কি পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যেও ছিল ?
লায়লাতুল কাদর পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যেও ছিল, না শুধু উম্মতে মুহাম্মদীকেই (সঃ) বিশেষভাবে এটি দান করা হয়েছে এ ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। হযরত মালিক (রঃ)-এর নিকট এ খবর পৌঁছেছে যে, পূর্ববর্তী উম্মতদের বয়স খুব বেশী হতো এবং উম্মতে মুহাম্মদীর (সঃ) আয়ু খুব কম, এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ) লক্ষ্য করলেন। তুলনামূলকভাবে তার উম্মত পুণ্য কাজ করার সুযোগ খুব কম পায়। তাই আল্লাহ তা’আলা তাকে এই লায়লাতুল কাদর দান করেন এবং এ রাত্রির ইবাদতের সওয়াব এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে অধিক দেয়ার অঙ্গীকার করেন। এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, এই লায়লাতুল কদর শুধু মাত্র উম্মতে মুহাম্মদীকেই (সঃ) প্রদান করা হয়েছে। শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী ‘ইদ্দাহ’ গ্রন্থের রচয়িতা একজন ইমাম জমহুর উলামার এ বাণী উদ্ধৃত করেছেন। এ সব ব্যাপারে আল্লাহপাকই সবচেয়ে ভাল জানেন।
শবে কদরের ফজিলত
মুসনাদে আহমাদে হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “(রযমান মাসের) শেষ দশ রাত্রির মধ্যে। লায়লাতুল কদর রয়েছে। যে ব্যক্তি এই রাত্রে সওয়াবের আশায় ইবাদত করে আল্লাহ তাআলা তার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ মার্জনা করে দেন। এটা হলো বেজোড় রাত্রি। অর্থাৎ একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাশ ও উনত্রিশতম রাত্রি।”
শবে কদরের নামাজ কত রাকাত শেষ কথা
শবে কদরের নামাজ সম্পর্কে বিশেষ কোন নিয়ম নেই এবং ডাকাতের বিষয়েও বিশেষ কোনো নিয়ম নেই যত রাকাত ইচ্ছা পড়তে পারবে দুই রাকাত চার রাকাত করে এবং নামাজের জন্য বিশেষ কোনো দোয়া নেই এবং যে কোন সূরা দিয়ে ইচ্ছা অন্যান্য নামাজের নিয়ে পড়তে পারবে আর নামাজের নিয়ত সম্পর্কে কথা হল যেহেতু এশারের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত তাহাজ্জুতের সময় তাই এই নামাজের ক্ষেত্রে নফল বা তাহাজ্জুদের নিয়ত করা যেতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন।