মাথা ব্যথা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। আমাদের প্রত্যেকেরই কোন না কোন কারনে কোন না কোন সময় মাথা ব্যথা হয়েছে। সাধারণ মাথা ব্যাথা গুলো বিভিন্ন রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে । এছাড়া তীব্র থেকে তীব্রতর মাথা ব্যাথা হতে পারে। তবে মাথা ব্যথা কোন রোগের লক্ষণ সেগুলো যদি আমরা জানতে পারি তাহলে আমরা আগে থেকে সর্তকতা অবলম্বন এর মাধ্যমে সেইরূপ থেকে বাঁচতে পারব। তাই আজকে আমার আর্টিকেল এর নাম হচ্ছে মাথা ব্যথা কোন রোগের লক্ষণ।
মাথা ব্যাথা একটি সাধারণ সমস্যা দেখে আমরা অনেকেই মাথা ব্যাথাকে গুরুত্ব দেই না কিন্তু মাথা ব্যাথা জটিল রোগের উপসর্গ হতে পারে। যদি দীর্ঘমেয়াদি মাথা ব্যাথা হয় তাহলে এটি মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মতে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক বয়স্ক লোক বছরে একবার মাথা ব্যথা অনুভব করে যার কোনো কারণ নেই। 90 ভাগ লোকের মাথা ব্যাথার জটিলতা বা ক্ষতিকর হয় না। প্রায় 200 ধরনের মাথা ব্যাথা রয়েছে যেগুলো তেমন জটিলতর নয়। কিন্তু এছাড়াও কিছু মাথা ব্যাথা রয়েছে যেগুলো আপনার জন্য বিপদজনক হতে পারে। তাই আপনার মাথা ব্যথার ধরন সম্পর্কে জানতে হবে এবং মাথা ব্যথা কোন রোগের লক্ষণ বুঝতে হবে।
মাথা ব্যাথার প্রকারভেদ
মাথা ব্যথা সাধারণত দুই প্রকার।
- প্রাইমারি মাথা ব্যাথা এবং
- সেকেন্ডারি মাথা ব্যাথা
প্রাইমারি মাথা ব্যাথা
যে মাথা ব্যথা গুলো তীব্র যন্ত্রনার সৃষ্টি করে না এবং খুব সহজেই ভালো হয়ে যায় সেই মাথা ব্যাথা গুলোকে বলা হয় প্রাইমারি মাথা ব্যাথা। প্রাইমারি মাথা ব্যথা মাঝে মাঝে থাকতে পারে আবার মাঝে মাঝে নাও থাকতে পারে। অর্থাৎ প্রাইমারি মাথা ব্যাথা হয়ে থাকে সামান্য কোনো কারণে। যদি কারো প্রাইমারি মাথা ব্যাথা হয় তবে অল্প কয়েকটি ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাইমারি মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
সেকেন্ডারি মাথা ব্যাথা
যে মাথা ব্যাথা গুলো মাথার চারপাশ জুড়ে থাকে এবং দীর্ঘদিন ধরে অনুভূত হয় তবে সেই ধরনের মাথা ব্যাথা হচ্ছে সেকেন্ডারি মাথা ব্যাথা। এক্ষেত্রে আপনার মাথার বিশাল একটা অংশ জুড়ে তীব্র ব্যথা অনুভব হবে এবং একনাগাড়ে এক সপ্তাহ বা তার অধিক থাকতে পারে। আবার দেখা গেছে মাঝে মাঝে ব্যথা অনুভূত হয় এবং মাঝে মাঝে ব্যথা অনুভূত হয় না। এই ধরনের ব্যাথাগুলো হচ্ছে সেকেন্ডারি মাথা ব্যাথা। সেকেন্ডারি মাথা ব্যাথা কোন না কোন ধরনের রোগের লক্ষণ থাকে। যেহেতু সেকেন্ডারি ব্যথা বড় ধরনের রোগের কারণে তৈরি হয় তাই এই মাথা ব্যথার চিকিৎসা নেওয়াটা খুবই জরুরী।
মাথা ব্যথা হার্টের রোগের লক্ষণ
হার্টের সমস্যা থাকলে অনেক সময় মাথা ব্যথা হয়। অনেক সময় শিরা-উপশিরায় চর্বি জমার কারণে রক্ত চলাচলে বাধা প্রাপ্ত হয়। এজন্য হৃদপিণ্ড সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে মাথায় হৃৎপিণ্ড সঠিকভাবে রক্ত সরবরাহ করতে পারে না। অনেক সময় এই কারণে মাথায় ব্যথা অনুভব হয়। এই মাথা ব্যাথা থেকে হৃদপিন্ডের সমস্যা আমাদের আইডেন্টিফাই করতে হবে। না হলে বড় ধরনের সমস্যা হয়ে যেতে পারে।
মাথা ব্যথা ঋতুস্রাবজনিত রোগের লক্ষণ
অনেক সময় হরমোনের কারণে মেয়েদের ঋতুস্রাব হওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা যায়। এই জটিলতার কারণে অনেক সময় মাথা ব্যাথা হয়ে থাকে। তাই মাথা ব্যাথা মেয়েদের ঋতুস্রাব জনিত রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে।
মাথা ব্যাথা নাকের হাড় বাঁকা রোগের লক্ষণ
কারো যদি নাকের হাড় বাঁকা থাকে তখন নাকের ছিদ্র দিয়ে সমানভাবে অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে না সে ক্ষেত্রে প্রায়ই ঠান্ডা লেগে যায় এবং মাথা ব্যাথা হয়।
মাথা ব্যাথা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রোগের লক্ষণ
কারো যদি ডায়াবেটিস থাকে অথবা উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাদের মাথা ব্যথা অনুভব হয়। মাথা ব্যথার সাথে অনেক সময় মাথা ঘুরানোর সমস্যাও দেখা যেতে পারে। তাই যদি কিছুদিন পর পর মাথা ব্যথা অনুভব হয় অথবা ঘন ঘন মাথা ব্যথা অনুভব হয় তখন আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডায়াবেটিস রক্তচাপ পরিমাপ করতে হবে। মাথা ব্যাথা এসব রোগের লক্ষণ।
মাথা ব্যাথা মাথার বিভিন্ন অসুখের লক্ষণ
মাথার বিভিন্ন অসুখ যেমন মাইগ্রেন টিউমার সিস্ট ইত্যাদি থাকলে মাথা ব্যথা হয় ব্যথা হয়। তাই মাথা ব্যাথা হলে দেরি না করে আপনার মাথা ব্যথার কারণ উদ্ধার করুন। যদি অনেক মাথা ব্যাথার কোন কারণ নেই তারপরও মাথা ব্যাথা বিভিন্ন রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে। উপরে বর্ণিত এই রোগগুলো তেমনি কিছু লোক যাদের লক্ষণ হিসেবে মাথা ব্যাথা দেখা যায়।
মাথা ব্যাথা চোখের রোগের লক্ষণ
চোখ আমাদের মূল্যবান সম্পদ। তাই চোখের প্রতি যত্নবান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চোখের কিছু রোগ হলে মাথা ব্যাথা হয়ে থাকে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের চোখের সমস্যা হয়েছে। অনেক সময় চোখ লাল হওয়া চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি রোগের কারণে মাথা ব্যাথা হয়। তাই যদি চোখে জটিলতা থাকে এবং মাথা ব্যাথা হয় তবে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের শরণাপন্ন হন এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
মাথা ব্যাথা সাইনাস রোগের লক্ষণ
সাইনাস হল মাথার ভিতরে ছোট ছোট বায়ুকুঠুরি থাকে। এই বায়ুকুঠুরি তে সাধারণত ছোট ছোট ফাঁকা জায়গা থাকে। তবে সেখানে বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত সংক্রমণের কারণে ভিতরে সমস্যা তৈরি হয় এবং কুঠুরিতে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। এই মাথা ব্যাথার সাথে ঝড় থাকতে পারে মুখ ফুলে যেতে পারে কানে ব্যথা হতে পারে। তাই যদি মাথা ব্যাথা অনুভব হয় তবে সাইনাস এর চিকিৎসা করতে পারে। তবে আপনি যে চিকিৎসা করেন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কিছুই করতে পারবেনা।
মাথা ব্যাথা মাইগ্রেন রোগের লক্ষণ
মাইগ্রেন নামটা একটু অদ্ভুত শোনালেও এটা মাথা ব্যথার একটা উৎস। তাই যদি মাথা ব্যাথা থাকে সেক্ষেত্রে আপনার মাইগ্রেন হতে পারে। যদি মাইগ্রেন হয় তবে ধীরে ধীরে আপনার সমস্ত মাথায় এর ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং তীব্র যন্ত্রণা করতে পারে। এই যন্ত্রণার গুলো একেক মানুষের একেক রকম হয় অর্থাৎ মানুষভেদে যন্ত্রনাও একেক রকম হয়। মাইগ্রেনের কিছু ট্রিগার ফ্যাক্টর থাকতে পারে। যেমন কেউ আলো বেশি সহ্য করতে পারেন না আবার কেউ শব্দ বা গন্ধ বেশি সহ্য করতে পারেন না। এক্ষেত্রে আপনি ধরে নিতে পারেন যে আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা হয়েছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।
ক্লাস্টার হেডেক
ক্লাস্টার হেডেক হচ্ছে মাথা ব্যথার অন্যতম একটি রোগ। এই রোগটি হলে বিভিন্ন সময়ে মাথা ব্যথা করবে। চোখের চারপাশে তীব্র জ্বালা অনুভূত হয়। এক্ষেত্রে চোখ লাল হয়ে যায় এবং চোখে জল গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। মাথার যে দিকে ব্যথা অনুভব হয় সেই দিকের না কিছুটা সুস্থ মনে হয়। এই ব্যথা গুলো সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে তিন মাস পর্যন্ত থাকতে পারে।
মাথা ব্যাথা টেনশন হেডেক এর লক্ষণ
মাথা ব্যাথার টেনশন হেডেক রোগ হওয়ার লক্ষণ। যদি আপনার টেনশন হেডেক হয়ে থাকে তাদের ঘাড়ের সামান্য উপরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করবেন। এই রোগ হলে কপাল শক্ত হয়ে যায় এবং গলাও শক্ত হয়ে যায়। এই দুটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই রোগের অন্যতম লক্ষণ। অনেক সময় আবার টেনশন হেডেক শুরু হয় কপাল থেকে এবং শেষ অব্দি চোখেও এই সমস্যা শুরু হয়। তাই প্রতিটি মানুষকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে এই বিষয়টি নিয়ে। আপনি দৈনন্দিন জীবনের টেনশন কমিয়ে নিন তাহলে আপনার হেডেকের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ সম্পর্কে। মাথা ব্যাথা আসলে অনেকগুলো রোগের সাথে সম্পর্কিত। ঠিক নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন কোন রোগের জন্য কতটুকু মাথা ব্যথা অনুভব হবে। তবে আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদিভাবে মাথা ব্যথা অনুভব করেন সেক্ষেত্রে কালবিলম্ব না করে একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। যদি আপনি ঠিকভাবে ধরতে পারেন যে আসলে কী কারণে আপনার মাথা ব্যাথা হচ্ছে তাহলে সঠিক ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে আপনি সহজেই সুস্থ হয়ে যাবেন।