রোজা
1 min read

রমজানের ফজিলত , রমজানের ফজিলত পারলৌকিক বা আখিরাতের,

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা প্রতিটি ইবাদাতের বেশ কিছু উপকারিতা এবং বিশেষ কিছু ফজিলত এবং তাৎপর্য রেখেছেন। আর এই তাৎপর্য এবং উপকারিতার কথা আমরা যত বেশি জানবো সে এবাদত করার প্রতি আগ্রহ এবং প্রেরণা ততবেশি তৈরি হবে। সিয়াম- এই ইবাদাতটির উপকারিতা এবং ফজিলত রাসূল আকরাম (সা) এর বিভিন্ন হাদীসে এতো বেশি বর্ণিত হয়েছে, যে অন্যকোন এবাদতের এতো বেশি উপকারিতা বর্ণিত হতে আমরা দেখিনা। তাই চলুন আমরা জেনে নিই, আমরা যদি রমাদান মাসের সিয়াম রাখি তাহলে আমাদের কি কি উপকার হবে এবং এর কী কী তাৎপর্য এবং গুরুত্ব রয়েছে।

রমজানের উপকারিতাকে আমরা প্রধান ২টি ভাগে ভাগ করতে পারি, যথা:

ক) শারিরীক বা পার্থিব উপকারিতা; ও

(খ) পারলৌকিক বা আখিরাতের উপকারিতা।

রমজানের ফজিলত ১

ক্ষুধার্তের কষ্ট অনুভব করা: পৃথিবীর অনেক মানুষ এখনো অর্ধাহারে বা অনাহারে থাকে। তারা জানে ক্ষুধার কষ্ট কত ভয়াবহ। সিয়ামের মাধ্যমে আমরা গরীব-দুঃখি অভাবী অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা মানুষদের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারি।

রমজানের ফজিলত ২

গরীবের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত হওয়া; সিয়ামের মাধ্যমে গরীবের কষ্ট অনুভব করতে পারায় তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধ জাগ্রত হয়।

রমজানের ফজিলত ৩

শারীরিক উপকারিতা: আমাদের শরীরের মেদ এবং অতিরিক্ত চর্বি ইত্যাদি বার্ন হওয়াসহ আরো নানামুখী শারীরিক উপকারিতা সিয়ামের ভিতর নিহিত আছে। সারা দিন ধরে সিয়াম রাখলে Autophagy নামক পদ্ধতিতে জীবন্ত কোয় মৃত কোষকে ভক্ষণ করে শরীরকে সুস্থ্য রাখে। এ জন্য অনেক দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকার জন্য ডাক্তারগণ অনেক সময় আমাদেরকে সারা দিন না খেয়ে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন সিয়াম এই পার্থিব উপকারিতা নিয়ে গবেষণা করে Yoshinori Ohsumi নামক একজন জাপানী জীববিজ্ঞানী ২০১৬ সনে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পর্যন্ত পেয়েছেন।

রমজানের ফজিলত ৪

চরিত্রের হেফাজত:

যৌবনকালে মানুষের চরিত্র সংরক্ষণের জন্য বিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কর থাকে। কেউ যদি বিয়ে করতে না পারে তাহলে সে যেন সিয়াম পালন করে। সিয়াম যৌন চাহিদা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তার চরিত্রকে হেফাজত করে।

রমজানের ফজিলত ১

সিয়ামের পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন: সিয়ামের পারলৌকিক উপকারিতার ভিতরে সর্বপ্রথম উপকারিতা বা সবচেয়ে বড় তাৎপর্যের বিষয় হলো এই যে, সিয়ামের পুরস্কার আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা নিজ হাতে কিয়ামতের ময়দানে দিবেন।

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, প্রতিটি আমলের বিনিময়ে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বান্দাকে দশ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিবেন। তবে রমাদনের সিয়ামের পুরস্কার আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা কত গুণ দিবেন তা নির্দিষ্ট করে বলেননি, বরং বলেছেন, বান্দা আমার জন্য সিয়াম পালন করে আর আমি এর পুরস্কার প্রদান করব। আল্লাহ নিজের হাতে কিয়ামতের ময়দানে পুরস্কার দিবেন। কী দিবেন সেটা আল্লাহ তা’আলা উহ্য রেখেছেন, সারপ্রাইজ দিবেন যা হয় [ কল্পনার বাইরে।

রমজানের ফজিলত ২

সিয়ামের পুরস্কার অগণিত: আল্লাহ সপ্তমের পুরস্কার দিবেন অগণিত। কুরআনে

কারীমে সূরা আয-যুমারের ১০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ

সুবাহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন: إنما يوفى الصابرون أجرهم بغير حساب নিশ্চয় ধৈর্যশীলদের তাদের প্রতিদান দিবেন অগণিত বিনা হিসাবে।

আর আমরা বলতে পারি সিয়াম হলো সকল ধৈর্য এর মূল। কারণ এর মাধ্যমে মানুষ পানাহার থেকে বিরত থেকে পানাহারের কষ্টের অনুভবের বাধ্যমে ধৈর্য ধারণ করতে শিখে। সিয়ামের মাধ্যমে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার প্রশিক্ষণ নেয়। এজন্য এরূপ নিয়ামত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালা অগণিত দিবেন ইন-শা-আল্লাহ।

রমজানের ফজিলত ৩

সিয়াম মানুষের জন্য ঢালের মতো:

(ক) ঝগড়া বিবাধের ঢাল: সিয়াম মানুষের জন্য কেয়ামতে এবং দুনিয়াতে দুই জায়গাতেই ঢালের ভূমিকায় থাকবে।

সিয়ামকারীর সাথে কেউ ঝগড়া করতে আসলে সে বলে, ভাই আমি সিয়াম রাখছি, আছি আমি ঝগড়া করতে পারব না। সিয়াম রেখে মানুষ ঝগড়া করে না। ঝগড়া থেকে কিভাবে বেঁচে থাকবে মুমিনকে সে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে সিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এভাবে দুনিয়ার ক্ষতি থেকে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে ঢালের ভূমিকায় থাকছে সিয়াম। (খ) প্রবৃত্তির যে তাড়নার ঢাল: তেমনিভাবে নবী (সা) যুবকদেরকে বলেছেন, হে যুবকেরা তোমাদের মধ্যে কেউ যদি বিবাহ করার সামর্থ থাকে সে যেন বিবাহ করে অন্যথায় সে যেন সিয়াম রাখে। কারণ সিয়াম রাখলে তার প্রবৃত্তির যে তাড়না আছে তা হতে অনায়াসে বেঁচে থাকতে পারবে। তাহলে সিয়াম এখানেও একটা চালের ভূমিকা রাখে।

(গ) জাহান্নামের বিরুদ্ধে ঢাল: তাছাড়া কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ জাহানামের সামনে সিয়ামকে ঢালের ভূমিকায় হাজির করবেন অর্থাৎ জান্নাম থেকে সিয়াম পালনকারীকে বাঁচাবেন। এভাবে দুনিয়া ও আখিরাতে সার্বিক বিপদ-আপদে সিয়াম ঢালের ভূমিকায় থাকবে।

রমজানের ফজিলত ৪

সিয়াম অন্যতম প্রধান নেক আমল: সিয়ামের চতুর্থ উপকারিতা হলো এটা অন্যতম সেরা আমলগুলোর তালিকার মধ্যে রয়েছে। মুসনাদ আহমাদ বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রসুলে কারীম (সা) বলেছেন, আবু উমামা আল বনী (রা)বলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ আমাকে একটা আমলের কথা বলুন। তিনি বলেছেন,

عليك بالصوم فإنه لا مثل له

তুমি সিয়াম রাখবে। কারণ সিয়ামের মত বা এর সমকক্ষ কোন আমল হতে পারেনা।

রমজানের ফজিলত ৫

সিয়াম আখিরাতে মুমিন বান্দার পক্ষে সুপারিশকারী: মানুষ যখন শেষ বিচারের দিন ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝে পড়বে, কেউ যখন সুপারিশকারী থাকবে না, তখন সিয়াম মুমিন বান্দার হয়ে, সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির পক্ষ হয়ে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।

রমজানের ফজিলত  ৬

সিয়াম ছোটখাট ভুলত্রুটির ক্ষতিপূরণ স্বরূপ: সিয়াম মানুষের ছোটখাটো ভুলত্রটির কাফফারা বা ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। সিয়াম ৩ ধরণের ভুলের কাফফারা হয়ে যায়, যথা:

সিয়াম এবং কুরআন এই দুটি আমল বান্দার পক্ষে আল্লাহর কাছে কেয়ামতের ময়দানে সুপারিশ করবে। সুপারিশ করে সিয়াম বলবে আল্লাহ, দিনের বেলা পানাহার থেকে তাকে আমি বিরত রেখেছি, সে আমার কারণে বিরত থেকেছে। আজ তাকে আপনি জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন না। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা সিয়ামের এই সুপারিশ কবুল করবেন।

রমজানের ফজিলত  ৭

সিয়াম পালনকারীর জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও

(ক) ভুল-ত্রুটির ক্ষতিপূরণ: দুনিয়াতে আমরা অনেক ভুল-ত্রুটি করি। ইসলামী শরীয়াতে সেগুলোর ক্ষতিপূরণ হিসেবে সিয়ামকে নির্বাচন করা হয়েছে। বুখারী মুসলিমে একযুগে বর্ণনা করেছে, “বান্দা যখন আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার জন্য সিয়াম রাখে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার এই সিয়ামের মাধ্যমে তার ছোটখাটো ভুলত্রুটিগুলোকে মাফ করে দেন।

(খ) শপথ ভঙ্গের ক্ষতিপূরণ: কেউ যদি আল্লাহর নামে শপথ করে এবং সে শপথ যদি ভঙ্গ হয়ে যায় তাহলে তাকে সিয়াম রেখে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়:

রমজানের ফজিলত  ৮

ইফতার ও আল্লাহর সাক্ষাতের আনন্দ সিয়াম পালনকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা দুইটি সুসংবাদ বা দুইটি আনন্দের মুহূর্ত দান করবেন যা অন্য কোন ইবাদাতের ক্ষেত্রে হয় না।

মহা-প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন: সিয়াম মানুষকে আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফেরাত বা ক্ষমা এনে দেয়। সিয়াম পালনকারী পুরুষ ও সিয়াম পালনকারী নারীদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা এবং মহা-প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন। সুবহানআল্লাহ। এটি সিয়ামের বড় একটি বিনিময়।

যে যত বেশি সিয়াম পালন করবেন আখেরাতে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা তার ভুলত্রটির ততোবেশি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করবেন।

(গ) যেহারের ক্ষতিপূরণ: কেউ যদি নিজের স্ত্রীকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে তাহলে এটিকে যেহার বলা হয়। আর এই যেহারেরও ক্ষতিপূরণ দিতে হয় সিয়াম রাখার মাধ্যমে।

রমজানের ফজিলত  

আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার কাছে শ্রেষ্ঠ এবং সেরা নেক আমলগুলোর মধ্যে সিয়াম অন্যতম। এটি সিয়ামের একটি বিরাট ফজিলত।

Rate this post